জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

জানুয়ারি মাসজুড়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে চলছে জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা মাস। আজ ২৯ জানুয়ারি, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৮১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।
urgentPhoto
বর্তমানে তিনি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার এপিডিমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসার কী? এটি কাদের বেশি হয়?
উত্তর : জরায়ু বা ইউটেরাস নামের যে অঙ্গ, তার নিচে যে সরু অংশ, একে আমরা জরায়ুমুখ বলি। ইংরেজিতে বলি সারভিক্স। এই অংশের ক্যানসার হওয়াকে বলা হয় জরায়ুমুখের ক্যানসার। একে সারভাইক্যাল ক্যানসারও বলা হয়।
এ ক্যানসারের ধরন ও বৈশিষ্ট্য জরায়ুর ক্যানসারের থেকে একটু আলাদা। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে ক্যানসারের বিষয়টি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সে কারণে একে একটু আলাদা করে বলার চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন : এই ক্যানসার হওয়ার জন্য ঝুঁকির কারণগুলো কী?
উত্তর : জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া বা বাল্যবিবাহ। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনো শতকরা ৬০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। তার মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রধান কারণ হলো বাল্যবিবাহ। এর সঙ্গে যেটি রয়েছে সেটি হলো, অল্প বয়সে সন্তানের মা হওয়া, অধিক সন্তান হওয়া, ঘন ঘন সন্তান হওয়া। একটি অপরিণত জরায়ুর ওপর অনেক আঘাত আসার ফলে কোষের মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো হয়, সেটি একপর্যায়ে ক্যানসারে রূপ নেয়।
এর সঙ্গে রয়েছে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব। বিশেষ করে, মাসিকের সময় যে পরিচ্ছন্নতার বিষয় থাকে, সেগুলো না করলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এর সঙ্গে অপুষ্টিও একটি কারণ। অপুষ্টি যাঁদের মধ্যে থাকে, তাঁদের ভেতরে এই বিষয়গুলো দ্রুত কাজ করে। আর একটি বিষয় রয়েছে সেটি হলো, অবাধ মেলামেশা। একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা। এটি জরায়ুমুখের ক্যানসারের অন্যতম একটি কারণ।
এসব কারণের সঙ্গে যুক্ত হলো একটি ভাইরাস। একে বলা হয় ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’ বা এইচপিভি। মূলত পশ্চিমা বিশ্বে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারণে এ ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়ায়।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে জরায়ুমুখের ক্যানসার হওয়ার সংখ্যা কেমন?
উত্তর : নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের পরেই জরায়ুমুখের ক্যানসারের অবস্থান। এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের যে বার্ষিক প্রতিবেদন, সর্বশেষ যেটি বেরিয়েছে ২০১৪ সালে, সেখানে আমরা দেখি, নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত। আর নারী-পুরুষ একসঙ্গে হিসাব করলে সেখানেও এটি চার নম্বরে রয়েছে।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় কী? প্রতিরোধের জন্য এই মাসজুড়ে আপনারা বাংলাদেশে কী করছেন?
উত্তর : বাল্যবিবাহ জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রধান কারণ। কাজেই আপনার কন্যাসন্তানকে অল্প বয়সে বিয়ে দেবেন না। তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। এরপর অল্প বয়সে বাচ্চা না নেওয়া, বেশি সন্তান না নেওয়া—এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার কথা আমাদের বলতে হবে। নারীদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
এইচপিভি যে ভাইরাসের কথা বললাম, সেটি প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার হয়েছে। সেই ভ্যাকসিন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। সরকার চেষ্টা করছে, ইপিআইর মধ্যে বিষয়টিকে নিয়ে আসার জন্য। এখন বলি, কোন বয়সের মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য? সাধারণত ৮ থেকে ১৩ বছর সময়টা টিকা দেওয়ার জন্য বেশি প্রযোজ্য। অর্থাৎ বিয়ে হওয়ার আগে বা শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার আগের সময়টায় এই ভ্যাকসিন দিলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়।
প্রশ্ন : এই যে জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা মাস পালন করছেন, এই সময়টায় আপনারা কী করছেন?
উত্তর : আমরা জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে অনুষ্ঠান করে আসছি। মানুষের মধ্যে পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করছি। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মানুষের কাছে যাচ্ছি। এরই মধ্যে অনেক জেলায় গেছি। আমরা যে কথাটি মূলত বলতে চাইছি, পোস্টার ও লিফলেটের মাধ্যমে, সেটি হলো, ‘জননীর কাছে সবার আছে জন্মঋণ। জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতায় অংশ নিন’।
আমরা সবাইকে বলতে চাইছি, আপনার ঘরে যে নারীরা রয়েছেন, তাঁদের সচেতন করুন এবং ক্যানসার প্রতিরোধের ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
প্রশ্ন : আপনারা এটি প্রতিরোধের জন্য স্ক্রিনিং করেছেন। এবং এই মাসে আপনাদের স্ক্রিনিংয়ের অনুষ্ঠান আছে। সেটি কবে নাগাদ?
উত্তর : স্ক্রিনিং তো সরকারি হাসপাতালগুলোতে সব সময় চালু থাকে। তবে যেহেতু এই এক মাস সচেতনতা নিয়ে অনেক কাজ করেছি, তাই স্ক্রিনিংটা রেখেছি ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। ঢাকার লালমাটিয়ায় সাত দিনব্যাপী বিনা পয়সায় কার্যক্রম চালানো হবে। পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতালে যেন এই বিশেষ সেবাটি হয়, এ জন্য সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।