ভাজাপোড়া খাবার খেলে ব্রণ হয়?
ব্রণ নিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকেই। বিভিন্ন কারণে ব্রণ হয়। তবে চিন্তার কারণ নেই, ব্রণ দূর করতে রয়েছে উচ্চ মানের চিকিৎসা। এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৩১তম পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়।
প্রশ্ন : একনে বা ব্রণ কাকে বলে?
উত্তর : আসল ব্রণ খুব প্রচলিত একটি বিষয়। যখন একজন ছেলে বা মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে যায়, ১২ থেকে ১৩, ১৪ বছরের মতো বয়স—এই সময়ে সমস্যাটি শুরু হয়। এই সময়ে কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। একটি ছেলে থেকে সে পুরুষে, আবার মেয়ে থেকে নারীতে পরিণত হতে থাকে একজন মানুষ। এই বয়সে হরমোনের পরিবর্তন হয়, তখনই ব্রণ হয়। একটি হরমোন আছে যাকে বল টেস্টেস্টেরন। এর প্রভাবে আমাদের মুখে যে তৈল গ্রন্থি রয়েছে, ওগুলো বেশি বেশি করে তেল তৈরি করা শুরু করে। তেলটা যখন বের হয়, তখন সেখানে একটি ব্লক থাকে, তেল ঠিকমতো বের হতে পারে না। তখনই সেটা ফুলে ওঠে, পেকে যায়, পেকে গিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত গর্ত হয়ে যায়, কালো দাগ পড়ে যায়। অনেক সমস্যা করে।
প্রশ্ন : ব্রণ কেন হয়?
উত্তর : কয়েকটি কারণে ব্রণ হয়। হরমোনের প্রভাব, ছিদ্রের মধ্যে যেটা তেল আঠালো থাকে, যেটা বের হয় না। আরেকটি ব্যাকটেরিয়া আছে—এই তিনটি জিনিস মিলে আসলে ব্রণ তৈরি হয়। বেশি তেল তৈরি হচ্ছে, ব্যকটেরিয়াগুলো এটিকে ভেঙে তৈরি করে ফ্যাটি এসিড। সেটি যখন কেউ চাপাচাপি করে তখন ফেটে যায়, তখন আসে পাশের টিস্যু থেকে প্রদাহ তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত ফুলে ফুলে ব্রণের সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : কেবল বয়ঃসন্ধিকালেই ব্রণ হয়?
উত্তর : আসলে হরমোনের পরিবর্তনের সময় বিষয়টি শুরু হয়। এ ছাড়া অনেক বয়স্ক লোকেরও হতে পারে। ২০ থেকে ৪০ বছরেও কারো কারো মুখে ব্রণ দেখা দেয়।
তবে আরো কিছু কিছু কারণে ব্রণ হয়। যেমন : যারা বেশি কসমেটিক ব্যবহার করে। যারা বেশি বেশি সাবান ব্যবহার করে, তাদের ব্রণ বেশি হয়। যারা মুখের মধ্যে স্টেরয়েড অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করে। ফর্সা হওয়ার জন্য আজকাল এটি অনেকেই ব্যবহার করে, এতে স্টেরয়েডাল একনে হয়। এটি ঠিক ব্রণ নয়, তবে ব্রণের মতো দেখতে।urgentPhoto
প্রশ্ন : আমরা অনেক সময় শুনি ভাজাপোড়া, চকোলেট এসব খাবারগুলো ব্রণ তৈরিতে প্রভাব ফেলে...
উত্তর : বইপুস্তকে তেমন কোনো কথা নেই। তবে আমরা যেটি বলি, সবজি বেশি খাওয়া ভালো, ভাজাপোড়া কম খাওয়া ভালো।
প্রশ্ন : তাহলে এই কথাটি আমরা কেন বলি?
উত্তর : এই বিষয়ে বিশদ কোনো গবেষণা নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরাও দেখি যারা ভাজা পোড়া বেশি খায়, তাদের এই সমস্যাগুলো বেশি হয়। সবজি যারা বেশি খায়, তাদের এই সমস্যাগুলো কম হয়। তাই বিষয়টিতে আমরা এভাবেই পরামর্শ দেই।
প্রশ্ন : ব্রণ খুব বিড়ম্বনাদায়ক একটি বিষয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার কী কী সুযোগ রয়েছে?
উত্তর : আধুনিক চিকিৎসা কিন্তু অনেক রকমের রয়েছে। ব্রণ থেকে শুরু করে ব্রণের যে দাগ পড়ে যায়, এগুলোরও চিকিৎসা হয়। এদের মুখ খুব তৈলাক্ত থাকে। এদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সাবান রয়েছে। সব সাবান দিলে হবে না। আবার বার বার বেশি বেশি সাবান দিয়ে মুখ ধুলেও কিন্তু ব্রণ বেড়ে যাবে। দিনে এক থেকে দুবার সে সাবান দিয়ে মুখ ধুতে হবে। বাকি সময়, পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে, তৈলাক্তভাব কমার জন্য। যদি ব্রণ পেকে যায় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে। টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় কিছু ওষুধ রয়েছে—অনেক রকম ওষুধ আছে যেগুলো দিয়ে আমরা ব্রণকে কমিয়ে দিতে পারি।
তারপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের কিছু হরমোনাল সমস্যা থাকে। যাদের পলিসিস্টিক ওভারি, তাদের দেখা যায়—ব্রণও আছে, আর মুখের লোমও বড় হয়ে যাচ্ছে। এদের খুব নির্দিষ্ট সমস্যা থাকে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের অ্যান্টি হরমোন ওষুধ দিতে হয়। এটা দিতে পারি আমরা।
এ ছাড়া আরেকটি ওষুধ আছে, ভিটামিন এ জাতীয় খাওয়ার ওষুধ, আইসোটিটিনয়েন। এটি খুব ভালো ওষুধ। তবে এটি খাওয়া অবস্থায় বা খাওয়ার কিছুদিন পর পর্যন্ত গর্ভধারণ করা যাবে না। এই ওষুধগুলো দিয়ে ব্রণ আমরা একদম ‘নেই’ করে দিতে পারি।
প্রশ্ন : আইসোটিটিনয়েন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার ঠিক কতদিন পর্যন্ত এই ভয় থাকে?
উত্তর : আগে বলা হতো ছয় মাস। তবে এখন বলা হয় যে একটি চক্র। দুই-তিন মাসের মধ্যেই সে গর্ভধারণ করতে পারবে। আগে এটি নিয়ে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতাম। এখন এটি অনেক নিরাপদ ওষুধ। এটি খাওয়া যেতেই পারে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে এখন এই ধরনের চিকিৎসা কি সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে?
উত্তর : হ্যাঁ, সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে। এর সাথে নতুন যেটি যোগ হয়েছে, সার্জিক্যাল পদ্ধতি।
আমরা যেটা বলি, একটি ব্রণ হয়তো দাগ ফেলে দিল, গর্ত হয়ে গেল, খানা-খন্দ হয়ে গেল। তখন কী করব? এটি অনেক সময় বিশাল মনোকষ্টের কারণ হয়। তবে এখন আমরা এ বিষয়ে অনেক কিছু করতে পারি।
হয়তো একটি জায়গায় নিচু হয়ে গেছে। একে আমরা বলি সাবসিশন। নিচে ফাইবারগুলো টেনে ধরে রাখে। তখন আমরা একটি সুঁই ঢুকিয়ে, ফাইবারগুলো কেটে দেই। তখন জিনিসটি ঠিক হয়ে যায়। এটি একটি পদ্ধতি।
আবার হয়তো অনেক বেশি গর্ত হয়ে গেছে। পাঞ্চ নিডল আছে এটি দিয়ে গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে একে উঠিয়ে ফেলি। সেটি ফেলে দিয়ে কসমেটিক স্টিচ দেই, দুটো স্বাভাবিক অংশকে আমরা এক করে দিলাম।
আরেকটি জিনিস রয়েছে ডার্মাব্রেশন। কাঠকে ঘষে সমান করে দেওয়া যায়। এখানে ত্বকেই ঘষে সমান করা যায়। এটি আধুনিক চিকিৎসা।
প্রশ্ন : ব্রণের চিকিৎসার ব্যয় কেমন হবে?
উত্তর : আসলে খুব ব্যয়বহুল নয়। বাংলাদেশে চিকিৎসক থেকে চিকিৎসকের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয়ের বিষয়টি নির্ভর করে। এটি মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে।
প্রশ্ন : ব্রণ থেকে দূরে থাকতে সচেতনতা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে?
উত্তর : আসলে বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে এটি হতেই পারে। সবারই দেখা যায় একটি দুটো করে ব্রণ হচ্ছে। আমরা যদি পরামর্শগুলো মেনে চলি, প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাই, তাহলে ব্রণ পরবর্তী যে সমস্যাগুলো এগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারি। কিছু ওষুধ দিলে ব্রণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর অবস্থা খারাপ হলে শক্তিশালী পরীক্ষা তো রয়েছেই।