শীতে গলাব্যথা, টনসিলের সমস্যা, যেভাবে সাবধানে থাকবেন
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের গলাব্যথার সমস্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শীতের সময় নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে আসা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বা লালা পড়ার সমস্যাও বাড়ে বহু মানুষের। কেবল শিশুদেরই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দেয়। হাঁপানি থাকলে তার টান মারাত্মকভাবে বেড়েও যায়। নিছক ঠান্ডা লেগে নয়, এই সমস্যাগুলো অ্যাডিনয়েড বা টনসিলাইটিস থেকেও হতে পারে।
এই বিষয়ে কলকাতার শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানিয়েছেন, টনসিলের ব্যথা প্রধানত দুই ধরনের। তীব্র বা অ্যাকিউট টনসিলাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস। ঠান্ডা লেগে টনসিল গ্রন্থিটি (গ্ল্যান্ড) ফুলে গেলে গলায় ব্যথা শুরু হয়। এই টনসিল গ্রন্থি থাকে গলার দুই দিকে। আরও একটি গ্রন্থি একই কাজ করে, সেটি হলো অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি। যা নাকের পিছন দিকে থাকে। টনসিলের পাশাপাশি এই গ্রন্থিও বড় হয়ে যেতে পারে। তখন নাকের বদলে মুখ দিয়ে শ্বাস দিয়ে শুরু করেন রোগী। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
যে কোষগুলো দিয়ে টনসিল তৈরি হয়, সেগুলোকে বলে লিম্ফয়েড কোষ। এই কোষগুলো মূলত প্রতিরক্ষার কাজ করে। কিন্তু যদি এই লিম্ফয়েড কোষে বার বার জীবাণু সংক্রমণ হয়, তখন সেগুলো অকেজো হয়ে পড়তে থাকে। টনসিলের ভিতরেই তখন জীবাণুরা বাড়তে থাকে। মারাত্মক গলাব্যথা, শ্বাসের সমস্যা শুরু হয়। ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। টনসিলাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির গলায় খুসখুস ভাব, খাবার গিলতে সমস্যা ও ব্যথা লাগা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হওয়া, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, কানব্যথা, মাথাব্যথা, জ্বর, খিঁচুনি, গলার নীচে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় গার্গল করে কিংবা প্যারাসিটামল খেয়েও ব্যথা কমে না
যেভাবে সমাধান করবেন
অ্যাকিউট টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমেই চিকিৎসা হয়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে আরাম পাওয়া যায়। লেবু বা আদা চা খেতে পারেন। গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না। গলায় তীব্র ব্যথা ও জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। তবে নিজে থেকে ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
যদি কারও বছরে তিন-চারবার টনসিল সংক্রমণের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে টনসিলেকটমি অস্ত্রোপচারের দরকার পড়তে পারে। টনসিলের ব্যথা ফেলে রাখলেই মুশকিল। সমস্যা বাড়লে ‘সেপটিক ক্রনিক টনসিলাইটিসের’ মতো গুরুতর আকার নিতে পারে। তখন এ থেকেই হার্ট ও কিডনিতে তার প্রভাব পড়ে। তাই সময় থাকতেই সাবধান হওয়া জরুরি।