তারুণ্য ধরে রাখতে আছে চিকিৎসা
ডার্মাটোসার্জারি ও অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি করে চমৎকারভাবে তারুণ্য ধরে রাখা যায়। এই চিকিৎসাগুলো এখন বাংলাদেশে চলে এসেছে।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৫৪তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. রাশেদ মো. খান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : ডার্মাটোসার্জারি ও অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি- এই বিষয়টি আমাদের দেশে এখন চলে এসেছে। এর পেছনের গল্পটা জানতে চাই।
উত্তর : ডার্মাটোলজি বিষয়টির দিন দিন অগ্রগতি হচ্ছে। আগে হয়তো দেখা যেত ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছি, মলম মাখছি। ওই দিন কিন্তু এখন আর নেই। এখন যেমন আমরা বলি অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি, অ্যান্টি এইজ মেডিসিন। মানে বয়সকে কীভাবে ধরে রাখা যাবে। ফাউনটেন অব ইউথ। এটা কিন্তু এখন ডার্মাটোলজিস্টদের হাতে। একটা মানুষের চামড়া ভাঁজ পড়ে গেছে, একে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং হয়ে গেলে কীভাবে কমিয়ে দিতে পারি- এগুলো অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
যেমন : বোটক্স একটা ইনজেকশন। এটি দিলে চামড়ার নিচের পেশিগুলো হালকাভাবে প্যারালাইজড হয়ে যায়। একজন চিকিৎসকের কাছে এলো ৪০ বছর বয়স নিয়ে আর বেরিয়ে গেল ৩০ বছর বয়স নিয়ে। মুখের ভাঁজগুলো আমরা দূর করতে পারি। নাকের পাশের চামড়া হয়তো খুব দেবে গেছে, ভাঁজ পড়ে গেছে। একে আমরা বলি হাইরোনিক এসিড ফিলার। আমরা ইনজেকশন দিয়ে এই ভাঁজগুলো ভরাট করে দিতে পারি। দেখা গেল ৫০ বছরের একজন ডাক্তারের চেম্বারে এলো আর যখন বেরিয়ে গেল দেখতে ৪০ বছরের মতো মনে হচ্ছে।
আরো আছে থ্রেডিং। আমরা গালে কিছু থ্রেড ঢুকিয়ে দিই। এটি ঢুকিয়ে দিলে চামড়াটা টান টান হয়ে যায়। এর মানে খুব সহজে আমরা বয়সের ফলে চামড়ায় পড়া ভাঁজকে কমিয়ে ফেলতে পারি।
এ ছাড়া আরো অনেক ব্যবস্থা আছে। কেমিকেল পিলিং আছে, লেজার আছে। এ রকম বিভিন্ন পদ্ধতি দিয়ে আমরা একটি মানুষের বয়সের ছাপকে অনেকখানি কমিয়ে দিতে পারি। এগুলো হলো অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজির মধ্যে পড়ে।
আর যদি বলেন, ডার্মাটোসার্জারির কথা, এখন ডার্মাটোলজিস্টরা কেবল ওষুধ দিয়ে প্র্যাকটিস করে না। এখন তাঁরা সার্জারিও করেন। যেমন একনি বা ব্রণের সার্জারি। ব্রণের যে খানাখন্দ হয়ে যায়, এগুলো আমরা সার্জারি করে, বিভিন্নভাবে উঠিয়ে ফেলতে পারি।
একটা মানুষের মাথায় চুল পড়ে গেছে, অ্যান্ড্রোজেনেটিক্যাল বিষয়। বয়সকালে চুল পড়ে যায়। সেখানে আমরা হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে পারি।
ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে আমরা আশপাশের চুলগুলো নিয়ে খালি জায়গায় চুল গজাতে সাহায্য করতে পারি। এমনকি শরীরের চুলও ব্যবহার করা যায় এখন। ভ্রূয়ের পাশের অংশ হয়তো পড়ে গেছে, এই জায়গায় আমরা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করে ত্রুটিটাকে পূরণ করে দিতে পারি।
এরপর ভিটিলিগো সার্জারি আছে, শ্বেতরোগের জন্য। খুব ভয়ঙ্কর একটি জিনিস শ্বেতরোগ। সবাই এটি নিয়ে মন খারাপ করে। যদিও এটা ক্ষতিকর নয়। দেখতেই শুধু খারাপ লাগে। এটা ছোঁয়াচে নয়। রং তৈরির কোষগুলো ভেতর থেকে ধ্বংস হয়ে যায়। বিভিন্ন রকম ওষুধ আছে, অনেক আধুনিক চিকিৎসা আছে, সেগুলো দিয়ে এর চিকিৎসা করতে পারি।
এগুলোকে আমরা ওষুধ দিয়ে ঠিক করতে পারি। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোনোভাবেই ঠিক হচ্ছে না। আমরা যতই ওষুধ দিচ্ছি, কাজ করছে। এখানে রং তৈরি করার যে কোষগুলো মেলানোসাইট ওগুলোই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে আমি যতই চাবুক মারি, কাজ হবে না। সেই সব ক্ষেত্রে আমরা ডার্মাটোসার্জারি করার চিন্তা করি। কী করি?
সেখানে নতুন করে আবার রঙের কারখানা বসাই। এজন্য আমরা অন্য জায়গা থেকে ছোট ত্বক নিই। পাঞ্চ করে চামড়া নিয়ে এসব জায়গায় বসিয়ে দিই। তবে খুব বড় জায়গা হলে এটি করা কঠিন। তবে কম জায়গা হলে করাটা সহজ।
এ ছাড়া ব্লিস্টার গ্রাফটিং আছে, স্কিন গ্রাফটিং আছে, এগুলো সব ডার্মাটোসার্জারির মধ্যে পড়ে। এগুলো করে আমরা শ্বেতরোগের চিকিৎসা করে ফেলতে পারি।
প্রশ্ন : শ্বেতরোগের এমন চিকিৎসায় কী কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে?
উত্তর : আসলে এগুলো করার আগে আমরা প্রথমে বুঝে নিই কী করতে হবে। একটি রোগীর ডায়াবেটিস আছে কি না, অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না-আমরা যদি ঠিকমতো দেখে নিই, তাহলে এটি সফল চিকিৎসা। সার্জারির পরে কিছু সাবধানতা আছে। রোগী যদি সেগুলো মেনে চলেন, তাহলে খুব সুন্দর একটি ফলাফল পাওয়া যায়।