পেপটিক আলসারের চিকিৎসা কী

পেপটিক আলসার হলো পেটের এক ধরনের ঘা। এটি অনেকেরই হয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে রোগ নিরাময় করা সম্ভব। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২৫ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল হক। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: পেপটিক আলাসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আপনারা কী কী করে থাকেন?
উত্তর: আমরা চিকিৎসার আগে রোগ নির্ণয় করি।
প্রশ্ন: রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কী কী করে থাকেন?
উত্তর: অন্য কারণেও ব্যথা হতে পারে। পিত্তথলীর ব্যথা হলে এরকম হয়। আবার পেনক্রিয়াসে কোনো সমস্যা হলে সেখানেও ব্যথা হতে থাকে। সেজন্য আমরা আগে একটি আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে দেখি। আল্ট্রাসোনোগ্রামে বিশেষ করে পিত্তথলীর পাথর বা অন্য পাথর থাকলে আমরা এগুলো নির্ণয় করতে পারি। যদি দেখি আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে স্বাভাবিক আছে, কিন্তু পেট ব্যথা আছে তখন আমরা অ্যান্ডোস্কোপি পরামর্শ দিয়ে থাকি। অ্যান্ডোস্কোপিতে যখন আলসার অথবা ইরোশন থাকে, তখন আমরা একে পেপটিক আলসার হিসেবে বলে থাকি। তখনই চিকিৎসার বিষয়টি চলে আসে। যারা অল্প দিনে ব্যথা নিয়ে আসে তাদের আমরা ওমিপ্রাজল ট্যাবলেট দিই। এই ট্যাবলেট একটি করে নাস্তা খাওয়ার আগে আমরা দিই। এক মাস নিয়মিত ওষুধ খেলে তার ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। অনেক সময় যেহেতু তার জীবন যাপন পরিবর্তন করতে পারে না, সিগারেট খায়, পাতা জর্দা এগুলো ব্যবহার করে, কিংবা সকালে নাস্তা খাওয়ার কথা খেলো না, এই সমস্ত জীবন যাপনের যে পরিবর্তন আনা দরকার সেগুলো যদি না করে, তখন দেখা যায় একমাসে তার কাজ হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে খেতে হতে পারে। এছাড়া যদি জীবাণুর কারণে হয়, সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দিতে হয়।
প্রশ্ন: প্রতিরোধের জন্য কী কী করতে হবে?
উত্তর: প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রথমেই তার জীবনাচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। যদি সকালের নাস্তা না খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে সকালের নাস্তা বাধ্যতামূলক করতে হবে। খাওয়ার যে অনিয়ম সেটিও পরিবর্তন করতে হবে। কোনো দিন দুপুরে খেলো, কোনোদিন খেলো না, কোনো দিন নয়টায় খেলো, কোনো দিন রাত ১২ টায় খেলো। কোনো দিন না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো। এই সমস্ত বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। দ্বিতীয়ত যদি বদঅভ্যাস থাকে সিগারেট খাওয়ার, পান, গুল, পাতা এগুলো খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, এগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে। এরপর যদি সে নিয়মিত ওষুধ খায়, আমার মনে হয় পেপটিক আলসার থাকার কথা নয়।
প্রশ্ন: রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অ্যান্ডোস্কোপি হচ্ছে অহরহ। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় এরা অ্যান্ডাস্কোপি করতে ভয় পায়। সেক্ষেত্রে আপনি রোগীদের কী করবেন?
উত্তর: আমাদের দেশেতো আগে অ্যান্ডোস্কোপি ছিল না। বেরিয়াম এক্সরে হতো। যদি কেউ অ্যান্ডোস্কোপি করতে ভয় পায় তাহলে বেরিয়াম এক্সরে করতে পারি। সেটি দিয়েও নির্ণয় করা যাবে।
প্রশ্ন: তবে আপনারা কি অ্যান্ডোস্কোপিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন?
উত্তর: যিনি অ্যান্ডোস্কোপি করবেন উনি তো সচক্ষে দেখছেন। এই আলসারটা কী গভীর না সাধারণ। আরেকটি হলো উনি যদি মনে করেন অনেক সময় ম্যালিগনেন্সি হতে পারে। ম্যালিগনেন্ট আলসারও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বায়োপসি করার প্রয়োজনীয়তা আসবে। তখন উনি যদি চোখে দেখে বুঝেন এখানে ম্যালিগনেন্সির আশঙ্কা আছে, তখন বায়োপসি নিয়ে নিলেন। এটা বেরিয়াম এক্সরে করলে সম্ভব নয়। কাজেই রোগটি ভালোভাবে নির্ণয় করতে যে সুবিধা দরকার সেটি কেবল অ্যান্ডোস্কোপিতেই সম্ভব।
প্রশ্ন: আলসার ম্যালিগনেন্ট হলে চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন হবে?
উত্তর: ম্যালিগনেন্ট আলসার হলে ওষুধের চিকিৎসা তেমন নেই। যদি প্রাথমিক অবস্থায় ম্যালিগনেন্ট আলসার ধরা পড়ে, যদি বায়োপসিতে প্রমাণ হয়, তাহলে আগেভাগে সার্জারি করলে, সুস্থ হবে। এটা ওষুধে হবে না। সার্জিক্যাল চিকিৎসা লাগবে। তখন আমরা সার্জনের কাছে রেফার করি তারাই অস্ত্রোপচার করে। আলাসার থেকে সার্জারিও করতে হতে পারে। যদি সেটা ম্যালিগনেন্ট হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: অনেক রোগী অভিযোগ করে থাকে আমরা নিয়ম মানছি, গ্যাসের ওষুধ খাচ্ছি, তারপরও গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে? সেটাকেও তারা অনেক সময় দাবি করে পেপটিক আলসার আছে। সেই রোগীদের ক্ষেত্রে কী আপনার কিছু বলার আছে?
উত্তর: এই সমস্ত রোগী আমরা হরহামেশাই পাই। কিন্তু যদি একটু ভালো করে প্রশ্ন করা যায়, তখন দেখা যায় সে ওষুধগুলো নিয়মিত খায় না। হয়তো পেটে ব্যথা। একটা দুটো ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কমলো। এরপর সে ভুলে যায়। আর খায় না। আলাসারকে নিরাময় করতে গেলে একটি নির্দিষ্ট ডোজ, নির্দিষ্ট সময় খেতে হবে। তখন আলসার নিরাময় হবে। অনিয়ম করলাম, সাতদিন পর আবার একটা ওষুধ খেলাম, এভাবে তো এটা নিরাময় হবে না। সেক্ষেত্রে যেই লক্ষণগুলো তার ছিল, সেগুলো সবসময়ই অনুভব করতে থাকবে।
প্রশ্ন: সুপারফিশিয়াল আলসার আর ডিপ আলসার দুটোর ক্ষেত্রে কী চিকিৎসা আলাদা?
উত্তর: এর কারণও আলাদা, চিকিৎসাও আলাদা। অনেক ওষুধ খেলে অনেক সময় পেপটিক আলসারের আশঙ্কা থাকে। যাকে বলা যায় ইরোশন। অনেকের হাঁটুতে, পায়ে, কোমরে ব্যথা থাকে। কিছু কিছু ব্যথার ওষুধ খেলে তার ইরোশন হতে পারে। এগুলো সুপার ফেশিয়াল। এই ওষুধগুলো বন্ধ করে যদি সে ওষুধ খায় তাহলে এরকম হতে পারে।
আবার যদি আলসার হয়, এটি হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গভীর হয়, এগুলোতে তার পুরোমাত্রায় ওষুধ খেতে হবে। অনেক সময় জীবাণু বিরোধী ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে এবং নিয়মমাফিক ডোজ খেতে হবে।