গ্লুকোমার আধুনিক চিকিৎসা কী?

গ্লুকোমা চোখের একটি রোগ। একসময় এর তেমন ভালো চিকিৎসা না থাকলেও এখন বাংলাদেশে এর অনেক আধুনিক চিকিৎসা এসেছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৩৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আই হাসপাতালের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : গ্লুকোমার চিকিৎসা কী?
উত্তর : ২০ বছর আগে কিন্তু বাংলাদেশে গ্লুকোমার চিকিৎসা ভালো ছিল না। তবে এখন আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে গ্লুকোমার যত রকম চিকিৎসা সম্ভব, সব বাংলাদেশে হচ্ছে। যত রকমের ড্রপস দিয়ে চোখের চাপ কমানো সম্ভব, সব বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। যেসব লেজার চিকিৎসা দিয়ে গ্লুকোমার চাপ কমানো হয়, সেগুলো বাংলাদেশে আছে। আমরাই করছি। যেসব অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের চাপ কমিয়ে গ্লুকোমার চিকিৎসা করা হয়, গ্লুকোমা সার্জারি সেগুলো আমরা করছি। বেশির ভাগ অস্ত্রোপচার আমরা করছি। কিছু কিছু অস্ত্রোপচারে কিছু জিনিস ব্যবহার করা হয়, যা কিছুদিন আগেও ছিল না, এখন আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এগুলো অনেক করি। বাংলাদেশের মানুষের আর বিদেশে গিয়ে এগুলো করানোর প্রয়োজন হয় না। সাধারণ যে অস্ত্রোপচারটা গ্লুকোমায় করা হয়, ফিল্টেশন সার্জারি এটা আমাদের দেশের বেশির ভাগ চোখের ডাক্তার করতে পারে। সুতরাং অনেক রকম অস্ত্রোপচার আছে, তবে বেশিরভাগ যেটা করা হয় সেটা সবাই করতে পারে। আর যেগুলো একটু অপ্রচলিত, সেগুলো এখন আমরা বাংলাদেশে করছি।
প্রশ্ন : গ্লুকোমার আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ রয়েছে?
উত্তর : আধুনিক চিকিৎসা বলতে আমরা বলব আধুনিক ড্রপস, যে ড্রপসগুলো আগে ছিল না। এখন দেশে তৈরি হচ্ছে। একটি ড্রপ এখন রাতে একবার দিলেই সারা দিনে চোখের চাপটা কম থাকে। এর একটি সুযোগ আমাদের দেশে রয়েছে। চোখের চিকিৎসায় আরেকটি জিনিস হলো লেজার। এই লেজার বাংলাদেশে কিছুদিন আগ পর্যন্ত ভালো ছিল না। কিন্তু এখন সব ধরনের লেজার রয়েছে। একটি লেজারের নাম আমি উল্লেখ করতে চাই সেটি হলো, ‘এসএলটি’। এটা বাংলাদেশে এখন রয়েছে। আগে ছিল না। আমরা গত তিন-চার বছর ধরে এটা করছি। এর সুবিধা হলো প্রথমে একজন রোগী আসার পর ওষুধ না দিয়ে লেজার করে দিলে এক থেকে দুই বছর উনি ভালো থাকবেন। আধুনিক চিকিৎসার মধ্যে গ্লুকোমার ফিল্টেশন সার্জারি বিভিন্ন রকমের হয়। সেগুলো আমরা করি। ভালভ দিয়ে যে অস্ত্রোপচার করা হয়, এগুলো গুণগত মান অনেক ভালো হয়। এর সফলতা তুলনামূলক অনেক বেশি। এগুলো আমরা করছি। এগুলোই মূলত আধুনিক অস্ত্রোপচার। তবে হ্যাঁ, কিছু অস্ত্রোপচার নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে। ইমপ্লেন্ট বা স্ট্যান্ট। এগুলো চোখের ভেতর আটকানো হয়। এগুলো এখনো আমাদের দেশে তেমন নেই। সে জন্য আমরা করতে পারি না। কিন্তু এগুলো এখনো গবেষণার পর্যায়ে আছে।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা যেহেতু এত গুরুত্বপূর্ণ রোগ, তবে এর লক্ষণগুলো জানা যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে সচেতনতা তো অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে আপনারা কী করছেন?
উত্তর : আসলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, বাংলাদেশে একটি সোসাইটি রয়েছে, ‘গ্লুকোমা সোসাইটি’। আমি এখন সেই সোসাইটির অ্যাডভাইজর। এক বছর আগেও এর প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আমাদের এখানে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হয়। আমরা প্রতিবছর মার্চ মাসে ‘গ্লুকোমা দিবস’ পালন করি। ‘গ্লুকোমা সপ্তাহ’ পালন করি। এ ছাড়া আমরা যখনই সুযোগ পাই, মানুষকে গ্লুকোমা সম্পর্কে বলার চেষ্টা করি। আমাদের কাছে রোগী যখন আসে, আমরা তাদের অনেক সময় লিফলেট দিয়ে দিই। আমরা চাই, আমাদের যারা রোগী বা রোগী নয়, তারাও যেন গ্লুকোমা সম্বন্ধে সচেতন হন। সচেতন হয়ে উনারা নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে আসেন, উনারা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে যেন প্রশ্ন করেন, আমার গ্লুকোমা আছে নাকি নেই? যদি না থাকে উনি ভাগ্যবান। আর থাকলেও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারা জীব্ন গ্লুকোমার চিকিৎসা নিয়ে উনি ভালো থাকতে পারবেন। সেদিক দিয়েও উনি ভাগ্যবান। বরং রোগ নির্ণয় না হওয়াটা সমস্যার।