পুরুষের বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় কী করবেন
পুরুষের বিভিন্ন কারণে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। আমাদের দেশে এর ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৩৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন মল্লিক। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ইউরোলজি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : পুরুষের বন্ধ্যত্বের ক্ষেত্রে চিকিৎসার কী কী পদ্ধতি আছে?
উত্তর : সেই ক্ষেত্রে প্রথম গেলেই পুরুষের স্পার্ম (ভ্রূণ), সিমেন পরীক্ষা করে দেখি। দেখি স্পার্মে সমস্যা আছে কি না। হতেই পারে। একটি স্পার্মের দুটো মাথা থাকতে পারে। হয়তো লেজটা নেই। আবার হয়তো দেখা যায়, স্পার্ম আছে তবে নড়াচড়া করতে পারে না। শক্তি নেই তার। এগুলোর জন্য স্পার্ম ফারটিলাইজ করতে পারবে না।
আরেকটি হচ্ছে ভাস ডিফারেন্স। যদি কোনো ব্লক থাকে, স্পার্মই আসবে না। একে আমরা বলি এজোস্পার্মিয়া। এগুলোর চিকিৎসা অত্যন্ত অসুবিধাজনক। হ্যাঁ, এটার চিকিৎসা অবশ্যই আছে।
আর আরেকটি আছে। আমাদের দেশে হাইপোস্পেডিয়াস বলে একটি বিষয় আছে। ইউরেথ্রা আগায় না হয়ে, সেটি গোড়ায় থাকে। গ্রামের লোকেরা হয়তো অনেকেই তেমন শিক্ষিত নন। তারা হয়তো বোঝেনই না যে এটি ঠিক করার প্রয়োজন আছে। দেখা গেছে যে বিয়ের পর দৌড়ে আসছে যে আমার বাচ্চা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে তার হাইপোস্পেডিয়াস হয়ে আছে। তখন এটা ঠিক না করলে কোনো অবস্থায় বাচ্চা হবে না। এটি একটি কারণ। তখন সেটা ঠিক করলে ভালো হয়ে যায়। তার সবই ঠিক আছে। তবে এটার জন্য হচ্ছে না।
কিছু হরমোন দিয়ে আমরা স্পার্মকে ঠিক করি। অনেক সময় দেখা যায়, প্রোস্টেটে সংক্রমণ আছে, সেই জন্য স্পার্ম আসার সময় এখানে এগুলো মরে যায়। নষ্ট হয়ে যায়। এই সংক্রমণের জন্য তাকে চিকিৎসা দিতে হবে।
প্রশ্ন : যেসব ক্ষেত্রে স্পার্ম নেই এসব ক্ষেত্রে কী করেন?
উত্তর : যদি দেখি ইপিডিডাইমিসে ব্লক থাকে। তাহলে ভাস ডিফারেন্সকে কেটে ইউপিডিডাইমিসে মাথায় এনে অ্যানাসটোমোসিস করে দিলে, ঠিক হয়। একে বলা হয় মাইক্রো সার্জারি। তবে ১০০ ভাগই যে হয়ে যাবে বিষয়টি সেটি নয়।
অনেক সময় প্রোস্টেটের কাছে ব্লক থাকে। ওখানে আমরা অ্যান্ডোস্কোপির মাধ্যমে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে মেশিন ঢুকিয়ে কম্পিউটারে দেখে ওই জায়গাটিতে একটি ইনসিশন দিলে বের হতে পারে। এতে সমস্যা দূর হয়ে যায়। এটি হলো সার্জিক্যাল ইন্টারভেশন।
প্রশ্ন : চিকিৎসার পর ফলাফল কেমন?
উত্তর : অ্যাজোস্পারমিয়ার রোগী আসলে চিকিৎসার খুব সফলতা একদম কম। এক থেকে দুই ভাগ। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন স্পার্ম কাউন্ট কম। ওষুধ দিলে উঠে যায়। দম্পতিদের তখন বাচ্চা হয়। অসুবিধা হয় না। আর কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভ্যাসেকটমি করে ফেলে। এটি করলে তার তো বন্ধ্যত্ব হলো। এটি আবার ঠিক করে দিলে আবার হবে। এটি ঠিক করা সম্ভব।
প্রশ্ন : চিকিৎসার ফলাফল কী আসলে কারণের ওপর নির্ভর করছে?
উত্তর : কারণ যদি আমরা দেখি, আমরা যদি দেখি প্রোস্টেটের ভেতর সংক্রমণ আছে, তাহলে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে সংক্রমণ চলে যাবে। আর যদি দেখা যায় অবসট্রাকশন (বাধা) থাকে, তাহলে সেটি দূর করতে হবে। আর যদি দেখা যায় স্পার্মের সংখ্যা কম থাকে, তাহলে কিছু ওষুধ আছে যেগুলো দিলে এটা ঠিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন : বন্ধ্যত্বের কারণগুলো জানতে কীভাবে পরীক্ষা করা হয়?
উত্তর : প্রথমে আমরা ক্লিনিক্যালই পরীক্ষা করি। এরপর আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করি। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অঙ্গগুলো ঠিক আছে কি না সেটা দেখি। হরমোনগুলো পর্যবেক্ষণ করি। আরেকটি হলো ব্লক কোথায় এটি তো জানা দরকার। এ জন্য আমরা ভেসোগ্রামও করি। যদি ব্লক থাকে চেষ্টা করি দূর করতে।
প্রশ্ন : বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় বহির্বিশ্বে যা হচ্ছে আমাদের এখানেও কি তাই হচ্ছে?
উত্তর : হ্যাঁ একই। এর ওপরে যাওয়ার তো কিছু নেই। আরেকটি আছে স্পার্মিয়া। আর্টিফিশিয়াল ইনসিমিনিশন। তবে এটাও এখন আমাদের দেশে হচ্ছে।
প্রশ্ন : এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যয় কেমন?
উত্তর : আর্টিফিশিয়াল ইনসিমিনিশনের খরচ আমাদের দেশে অনেক বেশি। এটা ব্যয়বহুল।
প্রশ্ন : আর অন্য চিকিৎসাগুলো?
উত্তর : অন্য চিকিৎসাগুলো তেমন ব্যয়বহুল নয়। সাধ্যের মধ্যেই আছে।