ডায়াবেটিস হলেই চোখ পরীক্ষা করান
ডায়াবেটিস হলে চোখের রেটিনায় সমস্যা হতে পারে। একে ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি বলা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫২৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. কিউ এম ইকবাল। বর্তমানে তিনি বিইউএইচএস হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি রোগে কী কী ধরনের অসুবিধা হয়?
উত্তর : আমরা জানি, চোখের একটি প্রধান অংশ হচ্ছে রেটিনা। চোখ একটি ক্যামেরার মতো। আগে ক্যামেরার ফিল্ম কিনে আনা হতো। যদি এখন ডিজিটাল যুগে ক্যামেরার ফিল্ম ঠিক নেই, ছবিটা লেন্সের ভেতর দিয়ে, বাইরে থেকে আলো গিয়ে ফোকাস হয়ে একটি জায়গায় পড়ে। এটি হচ্ছে রেটিনা। এখানে ছবিটা ওঠে। এই ছবিটা পরে মগজে গিয়ে আমরা দেখি। ছবি যেখানে উঠে, সেই রেটিনার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। মূলত ডায়াবেটিস একটি রক্তবাহী নালির রোগ। রেটিনায় রক্তবাহী নালি তার পরিপূর্ণ পুষ্টি সাধন করে। এই নালি থেকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রক্তবাহী নালির মধ্যে লিক হয়, রক্তের জলীয় অংশের মধ্যে লিক হয়। কখনো রক্তনালি জমাট বেঁধে যায়। তখন সেটি থেকে রক্তপাত হয়। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, রোগী হয়তো সব ভালো দেখে, রাতে ঘুমাতে গেছে, তবে সকালবেলা হয়তো উঠে দেখল, এক চোখে কিছুই দেখে না, অর্থাৎ রক্তপাত হয়ে পুরো চোখটা ভরে গেছে। যার জন্য সে সকালে অবাক হয়ে যায়। কোনো ব্যথা নেই, কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। ব্যথা নেই, লালও হচ্ছে না। দেখতে মনে হচ্ছে সাধারণ চোখের মতো। রক্তপাত হয়ে দেখা যাচ্ছে চোখের রেটিনাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : প্রথম হলো সচেতনতা। আগে জানতে হবে রোগটি কত ভয়াবহ। ছানি হচ্ছে এমন একটি রোগ, যার দৃষ্টি চলে গেছে অস্ত্রোপচারের পর আবার ভালো হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা শতভাগ দৃষ্টি ফিরে আসবে। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে অনেক টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করা হয়, এর পর লেজার করা হয়, সবকিছুর পরও কিন্তু দৃষ্টি আগের মতো ফিরে আসে না। অনেকাংশেই দৃষ্টি ফিরে আসে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো দৃষ্টি পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আমরা যদি সচেতন থাকি, এখানে প্রতিরোধটা বেশি জরুরি। চোখের ভেতর রেটিনার রক্তপাত হওয়ার আগেই যদি প্রতিরোধ করতে পারি, সেই নালিগুলোর যদি চিকিৎসা করতে পারি, তাহলে ভালো। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা তো অবশ্যই একটি জরুরি বিষয়। জীবনযাপন পরিবর্তন করা, আরো বেশি পরিশ্রমই হওয়া, জাঙ্কফুড থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ডায়াবেটিস যাঁরা চিকিৎসা করেন, তাঁদের প্রতি আমার একটি বিশেষ আবেদন থাকবে, ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সব ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে। চোখের জন্য রোগীকে আগেভাগে বলা যে আপনি একজন চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে কতটুকু নিরাময় সম্ভব?
উত্তর : ডায়াবেটিসটা সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, যার আজকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, সেদিনই আমরা বলি প্রথম রেটিনা দেখা উচিত। চোখে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না বোঝার জন্য। শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ রোগীর তখনই চোখে কিছু পরিবর্তন হয়।
তখনই আমরা বুঝে নিই, এর চিকিৎসার প্রয়োজন আছে, নাকি ফলোআপ করে রাখব। যখন আমরা একটি পর্যায়ে বুঝব ভালোভাবে এর চিকিৎসা করতে হবে, তখন রেটিনাতে অনেক কিছু করার আছে। লেজার দিতে পারি। রেটিনার কেন্দ্রে পানি জমে যায়, একে ইডিমা বলে। রক্তের নালি থেকে জলীয় অংশ লিক হয়, তখন পানি জমে দৃষ্টি কমে যায়। রোগী হয়তো ভাবে আমার ছানি পড়ছে। কিন্তু সেটি নয়। একই সঙ্গে ডায়াবেটিসটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রশ্ন : যে চিকিৎসাগুলোর কথা বললেন, এসব কি আমাদের দেশে সম্ভব?
উত্তর : ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত চোখের সমস্যাগুলোর এখন দেশেই ভালো চিকিৎসা আছে। বিভিন্ন ধরনের লেজার চিকিৎসা আছে। রেটিনায় যদি রক্তপাত হয়, সেটা সার্জারি করে রক্তকে পরিষ্কার করে, তার চিকিৎসা করা হয়।