কোমরের ব্যথায় কী করবেন

কোমর ব্যথা বর্তমান শহুরে জীবনে একটি প্রচলিত সমস্যা। বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। আজ ১১ মে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৩২তম পর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইউসুফ আলী।
প্রশ্ন : কোমরের ব্যথা বিষয়টি খুব প্রচলিত একটি বিষয়। যদি একটু জানতে চাই কোমর ব্যথা কারণগুলো কী?
উত্তর : আসলে কোমর ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। মানুষ তার জীবনে যত রোগে ভোগে তার ভেতর দেখা যায় কোনো না কোনো সময় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ কোমর ব্যথায় ভোগে। আবার এর একটি ভালো বিষয় হলো, ৮০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে একটু নিয়ম মেনে চললে ব্যথা ভালো হয়ে যায়। তবে কোমর ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জন্মগত কারণ। আর কিছু হলো, পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো কারণের জন্য যেগুলো হয়ে থাকে। জন্মগত কারণের জন্য যেটা থাকে, কোমরের পেছনে হাঁড়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে, মায়ের পেটের ভেতর ভ্রুণ বৃদ্ধি পায়, তখন যদি কোনো সমস্যা থাকে সে জন্য হতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে যেই কারণে হয় সেটি হলো, আঘাতজনিত সমস্যা। তারপর নিয়মিত যে কাজ করা হয়, সেই কাজের অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে। এটাকে আমরা ম্যাকানিক্যাল ব্যথা বলে থাকি। সেটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। আবার কখনো কখনো সংক্রমণের কারণে হতে পারে, টিউমারের জন্য হতে পারে। টিউমারের মধ্যে আবার কতগুলো কারণ আছে। যেমন : হাঁড়ের টিউমারের জন্য হতে পারে।urgentPhoto
কোমরে রয়েছে শক্ত হাঁড় এবং নরম হাঁড়, আর রয়েছে স্পাইনাল কর্ড। স্পাইনালকর্ড শরীরের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিস্কের মাধ্যমে যে স্নায়ু আসে তাকে নিচের দিকে নিয়ে যায়। কোমরে যদি কোনো কারণে ব্লকেজ হয়, আঘাত পায় বা সেখানে যদি কোনো কারণে চাপ পড়ে তখন অনেক সময় ব্যথাটি পায়ের দিকে চলে যায়।
টিউমারটি যদি হয় এটি হতে পারে কর্ডের ভেতরে, হতে পারে তরুণাস্থিতে, হতে পারে হাঁড়ের ভেতরে।
আরেকটি হলো ইনফেকশন, আমাদের দেশে যেটি প্রচলিত সেটি হলো টিউবার কোলোসিস। সাধারণ মানুষের একটি ধারণা রয়েছে ফুসফুসের যক্ষ্মাটাই বোধহয় বেশি হয়। ফুসফুসের যক্ষ্মার পরে সবচেয়ে প্রচলিত যেই যক্ষ্মাটি সেটি হলো মেরুদণ্ডের। এর কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।
প্রশ্ন : কী কারণে হচ্ছে ব্যথাটি সেটি বোঝার কি কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : ব্যথার ধরন দেখেই বোঝা যাবে এটি কী কারণে হচ্ছে। কোমর ব্যথা হচ্ছে এমন রোগীর যদি ইতিহাস নেই তবে বিষয়টি বোঝা যাবে। যারা কম্পিউটারে কাজ করে, যারা দীর্ঘক্ষণ বসার কাজ করে, যারা মোটরসাইকেল চালায় তাদের কাজের অভ্যাসের জন্য ব্যথা করে। আমাদের দেহের যে কার্ভেসার আছে, তার যদি কোথাও সমস্যা ঘটে তখনই ব্যথা হয়। কারণ পেশিগুলো ওইভাবেই থেকে অভ্যস্ত। আমরা যখনই স্বাভাবিক অবস্থা থেকে কিছুটা ভিন্ন হব, তখনই পেশিগুলোর মধ্যে আঘাত পাব, তখনই একটি ব্যথা হবে। একে বলে ম্যাকানিক্যাল ব্যথা। দীর্ঘক্ষণ এক অবস্থায় বসে থাকলে পেশিগুলোর মধ্যে চাপ পড়ে এগুলো তখন দুর্বল হয়ে যায়, এর জন্য তার ব্যথা হয়।
আর কিছু কিছু ব্যথা রয়েছে যেগুলো হয়তো সব সময় করা হয় না- এগুলো থেকেও ব্যথা হতে পারে। যেমন : আমি কখনো কাজ করি না তবে বাসা বদলানোর সময় কিছু একটা টান দিলাম, খাট বা আলমারি টান দিলাম। তখন এমন একটি ব্যথা হলো যে অনেক সময় শুয়ে পড়তে হয়। এই ব্যথাটি অনেক সময় পায়ের দিকে যায়। তখন আমরা রোগীর ইতিহাস শুনে বুঝতে পারি এটি কেন হয়েছে। যখন অপ্রচলিত কাজ করে তখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পেছনের যে নরম হাঁড় রয়েছে, তরুণাস্থি আছে, তার পেছনে একটি পর্দার মতো রয়েছে, সেটি ফেটে মস্তিষ্ক থেকে যে স্নায়ু পায়ের দিকে গেছে একে চাপ দেয়। তখন কোমরের ব্যথা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন রোগী হয়তো বলে সে আর হাঁটতে পারছে না। এসব ধরন দেখে আমরা বুঝতে পারি কী কারণে ব্যথা হচ্ছে এবং আমরা কী চিকিৎসা নেব।
প্রশ্ন : কোন কোন ক্ষেত্রে আপনারা চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোকে কীভাবে দিয়ে থাকেন?
উত্তর : আমাদের কাছে যেটা অনেক বেশি আসে সেটি হলো ম্যাকানিক্যাল ব্যথা। আরেকটি যেটি আসে, নরম তরুণাস্থিটি সরে যায় যাকে আমরা ডিস্ক প্রলেপস বলি। এ ধরনের রোগী এলে আমরা তাকে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথা নাশক ওষুধ দেই, বিশ্রামে থাকতে বলি।
প্রশ্ন : এটি কী একটি বিশেষ বয়সে দেখা যায়?
উত্তর : যেসব কারণ বললাম এর কারণে ব্যথা সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সেই বেশি হয়। এ ছাড়া ৪০-এর পর যেটা হয় সেটা আবার কিছু ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
যদি পায়ের দিকে ব্যথা হয় তাহলে রোগীকে বিশ্রাম নিতে বলি, ওষুধ দেই। এতে তিন সপ্তাহ, কোনো কোনো জায়গায় ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করি, তখন যদি ব্যথা না কমে এবং পায়ের দিকে যদি ব্যথাটি তীব্রভাবে বাড়তে থাকে, অবশ যদি বাড়তে থাকে এবং পা যদি নড়াচড়া না করতে পারে তাহলে আমরা অস্ত্রোপচার করতে বলি। অস্ত্রোপচার করে ডিস্কটুকু যদি বের করে নেওয়া হয় তাহলে ব্যথাটা কমে যায়।
তবে প্রলেপসেরও আবার কিছু ধরন রয়েছে। দেখি যদি তীব্র ব্যথা হয়, ফেটে যদি বের হয়ে আসে তাহলে অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন অবশ্য আধুনিক কিছু পদ্ধতি চলে আসছে যেগুলো না কেটেও করা যায়। সেগুলোও আমরা করছি। যদি পর্দাটি ঠিক থাকে , ডিস্কটা যদি ফেটে বের না হয়ে শুধু থেঁথলে এসে শিকড়ে চাপ দেয় সে ক্ষেত্রে আমরা নিউক্লিউপ্লাস্টি অস্ত্রোপচার করি। নিউক্লিউপ্লাস্টি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে আমরা যেটা করি, সেটা হলো, ডিস্কের ভেতর দিয়ে না কেটে এবং রোগীকে অজ্ঞান না করে, শুধু লোকাল একটু অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে সুই দিয়ে ডিস্কের ভেতরে চলে যাই। এখানে একটি প্রুফকে ঠিক করে রাখা হয়, এরপর একটি ডিভাইস আছে সেখানে ইলেকট্রিসিটি বহন করে। মূল কাজটা হলো এখানে তাপ উৎপন্ন করা এবং পরিমাণে ছোট করা। এটি হলে এটা পুড়ে যায়, যেটা ফুলে ফেপে বড় হয়েছিল সেটা পরিমাণে ছোট হয়ে যায়। ছোট হয়ে গেলে স্নায়ুর ওপর যেই চাপটি আছে তা কমে যায়।
প্রশ্ন : এটি যদি করা হয় তবে রোগী কী পুরোপুরি সুস্থ বোধ করবেন?
উত্তর : হ্যাঁ রোগী সুস্থ বোধ করবেন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এর জন্য হাসপাতাল ভর্তি হওয়ারও কোনো প্রয়োজন হয় না। এই চিকিৎসায় কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হয় না।
প্রশ্ন : এটি করার ক্ষেত্রে রোগীর সহযোগিতা কেমন হয়? কেমন পাচ্ছেন আপনারা এই ধরনের রোগী?
উত্তর : সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আগে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন রোগীর ক্ষেত্রে আসলে এই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া যাবে। সব রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।