ছানি ও আঘাতজনিত সমস্যায় কী করবেন?

ছানি ও আঘাতজনিত সমস্যা আমাদের দেশে অন্ধত্বের অন্যতম কিছু কারণ। তবে প্রতিরোধ ও সময়মতো প্রতিকারে জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৩৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. জহিরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ছানি রোগ কেন হয়? কাদের ক্ষেত্রে হয়?এটি প্রতিরোধের উপায় কী?
উত্তর : সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে বা ৬০ বছর বয়সের আগে-পিছে ছানি পড়ে। একে বয়সজনিত ছানি বলি আমরা। এই ছানির কারণে মানুষ দৃষ্টি-স্বল্পতা নিয়ে ভুগছে। এ ধরনের অন্ধত্ব সহজে চলে যায়। এই অন্ধত্ব খুব সহজ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। সুতরাং এর জন্য দরকার শুধু সচেতনতা। যেসব মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছে, তাদের সেন্টারে নিয়ে আসতে হবে। এই সচেতনতা দরকার যে আপনার এই অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব।
তবে আমাদের দেশে সরকারের যে ন্যাশনাল আইকেয়ার প্রজেক্ট আছে, সেই প্রজেক্টের আওতায় সরকারি হাসপাতাল, এনজিও ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো এ রকমভাবে ছানি রোগ নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে, তাতে গড়পরতা একটা ভালো সচেতনতা তৈরি হয়ে গেছে। আমাদের দেশে ছানি অস্ত্রোপচারের যে হার, এর দিন দিন যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে। সুতরাং ছানি রোগ নিয়ে আমাদের যে পরিমাণ পদক্ষেপ চলছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে, আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে এটি আরো বাড়াতে হবে।
আর আঘাতজনিত যে অন্ধত্ব, সে ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে। সচেতন হতে হবে। আমাদের কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করেন, কোনো ফসলের একটি গুঁড়া বা কণা দিয়ে কর্নিয়াটা আঘাতগ্রস্ত হচ্ছে, তখন যদি সে সঙ্গে সঙ্গে অপচিকিৎসা না নিয়ে সুচিকিৎসা করলে অন্ধত্বটা এড়িয়ে যাওয়া যায়। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখনো আমাদের দেশে চোখে কোনো ময়লা পড়লে, এখনো মানুষ শামুকের পানি, গোলাপজল, এটা-সেটার পাতার রস, এগুলো দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে চোখ নষ্ট করে এর পর চিকিৎসকের কাছে আসে।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যায় তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় কী?
উত্তর : যদি মনে হয়, চোখে ময়লা পড়েছে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি দিয়ে ধুতে হবে। মোটামুটি একটু ভালো পানি দিয়ে সেটা দিয়ে ধোয়া। ধোয়ার পর যদি মনে হয়, চোখের ভেতর কোনো কিছু ঢুকেছে, তখন দেরি না করে চোখের ওপর কোনো কাপড় দিয়ে চোখকে আটকানো। এর পর সরাসরি চোখের চিকিৎসা যেখানে আছে, সেখানে যেতে হবে। এমন জায়গায় যেতে হবে, যেখানে অপচিকিৎসা নয়, সুচিকিৎসা আছে। তবে তার সচেতন থাকতে হবে এই বিষয়ে যে আমাকে সুচিকিৎসা পেতে হবে এবং যেতে হবে। আমাদের অধিকাংশ লোক চোখের চিকিৎসায় যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেভাবে দেয় না। যখন একটি কর্নিয়া পচে যায়, গলে যায়, তখন আমাদের কাছে এলে কিছু করার থাকে না। এটা হচ্ছে আঘাতজনিত বা চোখের কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব।
শিশুদের অন্ধত্বের ক্ষেত্রে শিশুরা ছানি রোগে আক্রান্ত হয়, অনেক শিশুর ট্যাঁরা চোখ হয়। এগুলো কিন্তু অন্ধত্বের কারণ। একটি শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে পারলে জাতির ভবিষ্যৎ আরো ভালো হবে। আমাদের কিছু কুসংস্কার আছে যে ছোট বয়সে অস্ত্রোপচার করা যাবে না। ছানি যদি পড়ে, সেটি ছোট বয়সেই অস্ত্রোপচার করতে হবে। এটা করতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছে চলে যেতে হবে। চিকিৎসা আছে এবং এর মাধ্যমে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব। ট্যাঁরা রোগ নিয়ে বসে থাকা যাবে না। কিছু ট্যাঁরা আছে, সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করতে হবে, কিছু আছে পরে করলেও চলবে। সেটা চিকিৎসক নির্ধারণ করবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে অনেক শিশুকে ১২/১৩ বছর বয়স পরে নিয়ে আসেন, যে চোখে দেখে না। এটা হচ্ছে আমাদের সচেতনতার অভাবে। আমরা যখন একটি বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাব, বাচ্চাকে ভর্তি করার আগে চোখ পরীক্ষা করে সার্টিফিকিট নিয়ে নেব। অনেক সময় দেখা যায়, তার এক চোখ ভালো আছে। আরেক চোখে দেখে না। ওই বাচ্চার তো এটা বোঝার কোনো কথা না। তার এক চোখ দিয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ হয়ে যাচ্ছে। যখন আমরা ১২/১৩ বছর বয়সে জানতে পারছি যে তার চোখে সমস্যা আছে, তখন আমাদের করার কিছু থাকে না। ওই জিনিসটার পাঁচ বছরের ভেতরে সমাধান হওয়া উচিত ছিল। সুতরাং আমার পরামর্শ থাকবে, প্রত্যেক অভিভাবক বাচ্চাকে তো স্কুলে ভর্তি করবেন, স্কুলে ভর্তির আগে চোখ পরীক্ষা করে একটি সার্টিফিকেট নিয়ে যেন স্কুলে যান। স্কুলের শিক্ষক যাঁরা আছেন, তাঁরা যেন আই সার্টিফিকেট ছাড়া বাচ্চাকে ভর্তি না নেন।
প্রশ্ন : যদি তখন কোনো সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে কি চিকিৎসা করা সম্ভব?
উত্তর : পাঁচ বছরের ভেতরে যদি ধরা পড়ে যায়, এটা ভালো হয়।