আইবিএস রোগের চিকিৎসা কী?
আইবিএস খাদ্যনালির একটি রোগ। সাধারণত অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে এই রোগ হয়। জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন আনলে রোগ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. ফখরুল আলম। বর্তমানে তিনি হলি ফ্যামিলি মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : পরীক্ষার পর যখন নিশ্চিত হন কী কারণে রোগটি হয়েছে, এরপর আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
উত্তর : যখন আমরা বুঝতে পারি যে ছয় মাসের বেশি এই রোগটি আছে, তার বয়স ৫০ বছরের কম এবং তার কিছু মানসিক সমস্যাও আছে, তখন আমরা মনে করি এটি আইবিএস। আইবিএসে কিছু বিষয় থাকে না। হয়তো কারো কারো ওজন কমে গেল হঠাৎ করে। অথবা রক্তশূন্যতা দেখা দিল। অথবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ল, এগুলো কিন্তু আইবিএস নয়। কাজেই আমরা যদি ধরে নিই এই সমস্যাগুলো তার নেই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব সমস্যা পাওয়া গেল না, তাহলে এটি আইবিএস।
প্রশ্ন : এর চিকিৎসা কী?
উত্তর : রোগ যেমন অভিনব ধরনের। চিকিৎসাও তেমনি অভিনব ধরনের। এখানে যদি মানসিক অস্থিরতা, মানসিক সমস্যা এবং আচরণগত সমস্যা প্রধান কারণ হয়, তাহলে এগুলোর সমাধান করতে হবে। রোগীকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করতে হবে। মানসিকভাবে যদি তাকে আশ্বস্ত করতে পারেন, দেখা যায় তাতেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাতে শরীর থেকে মনের চাপটা কম পড়ে। এরপর আইবিএসটা অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে। কারো কারো ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্যি। কারো কারো ক্ষেত্রে অল্পতেই কাজ হয়। সবার কিন্তু তাতে পুরোপুরি লাভ হয় না।
প্রশ্ন : সেই ক্ষেত্রে কী করণীয়।
উত্তর : সেখানে আইবিএসের ধরন আছে। কারো হচ্ছে পাতলা পায়খানা বা অতিরিক্ত মলত্যাগের ধরনটা বেশি। একে আমরা ডাইরিয়াল টাইপ বলি। কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্যের ধরনটা বেশি। আমরা একে বলি কনস্টিপেটিং টাইপ। তো কোন ধরনের সেটা আমরা আগে বিচার করি। বিচার করার পর আমরা যদি দেখি ডাইরিয়াল টাইপ হয়, অবশ্য এ ধরনের রোগী বেশি হয়, বেশি বেশি পায়খানা হচ্ছে, বারবার পায়খানা হচ্ছে এবং মল নরম হয়ে যাচ্ছে। প্রথমেই খাবারের ধরন প্রাধান্য পাবে। দুধ, শাক, ঝাল তেল এগুলো খাবে না। কারো কারো বিভিন্ন ধরনের খাবারে উপকার হয়। কারো কারো বেল খেলে খুব লাভ হয়। কাঁচকলা খেলে খুব লাভ হয়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলেও খুব ভালো কাজ হয়।
প্রশ্ন : কতদিন ধরে এই নিয়ম মানার বিষয়টি চলতে থাকে। কতদিন পর্যন্ত ফলোআপের জন্য আপনাদের কাছে আসতে হয়?
উত্তর : রোগীরা সাধারণত এক দুই মাস পরপর আমাদের কাছে আসে। যেহেতু এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। তাই বারবার এসে দেখিয়ে যেতে হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধও কিন্তু ব্যবহার করা যায়। যেমন যেটি পাতলা পায়খানা ধরনের, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা এগুলো থাকে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ম্যাভেভারিন, অ্যালভেরিন, এই জাতীয় বিভিন্ন ওষুধ আছে সেগুলো প্রয়োগ করতে পারি। এতে খাদ্যনালির গতিটা কমিয়ে দেওয়া যায়।
প্রশ্ন : রোগীর উন্নতি হচ্ছে কি না, সেটি আপনারা কীভাবে বোঝেন?
উত্তর : রোগী অনেকটা আরাম বোধ করেন। কেউ কেউ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। সুস্থ হওয়ার পর নিয়ম না মানলে আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন আবার নিয়ম মানতে হয়। আর যদি কোনো মানসিক সমস্যা থাকে, তাহলে মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য কিছু ওষুধ দিই। তাতেও উনি যথেষ্ট উপকৃত হবেন।
প্রশ্ন : সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করা হলে ক্ষতিকর প্রভাব কী হতে পারে?
উত্তর : এখান থেকে সাধারণত শারীরিক জটিলতার আশঙ্কা কম। তবে রোগীর পেশাগত বা সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। হয়তো অফিসে যেতে পারছেন না বা স্কুলে যেতে পারছেন না।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর : প্রতিরোধ এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যার যেই ধরনের খাবার হজম করতে অসুবিধা হয়, সেই খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে ইসবগুল খুব উপকারী। নিজে যে জিনিসটি খেয়ে আরাম বোধ করবেন সেটি খাবেন। বেশি বেশি দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা থাকলে তা কমিয়ে আনতে হবে। কারো কারো সাইকোথেরাপিতে কাজ হয়। কারো কারো মেডিটেশন, হিপনোটিজমে কাজ হয়। এই পরামর্শগুলোও আমরা দিই। মনের ওপর চাপ কমলে খাদ্যনালির চাপ কমে যায়। এতে অনেক লাভ হয়।