উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কী করবেন

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে জীবনযাপনের পরিবর্তন অনেক জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। বর্তমানে তিনি হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : এসব সমস্যা নিয়ে এলে আপনারা রোগীদের প্রাথমিক পরামর্শ কী দেন?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার জন্য জীবনযাপনের পরিবর্তন আনার জন্য আমরা বলি। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে না। যদি জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে কাজ না হয়, নিয়ন্ত্রণে না আসে, সেই ক্ষেত্রে আমরা কিছু ওষুধের জন্য বলি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াও, যেমন কিছু অস্ত্রোপচার, আবার কিছু কিছু ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা হয়। এগুলো সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের জন্য হয়। মানে যেসব বিষয়ের কারণ জানা থাকে, সেই কারণ যদি আমরা সরিয়ে দিতে পারি, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রশ্ন : জীবনযাপন পরিবর্তনের জন্য যেই পরামর্শ সেটি কীভাবে দেন?
উত্তর : যদি জীবনযাপনের পরিবর্তন করা যায়, ১০ থেকে ২০ মিলিমিটার মার্কারি রক্তচাপ কমানো যায়। ডেস স্টাডি নামে একটি গবেষণা হয়েছিল, ডায়াটারি অ্যাডভাইস টু স্টপ হাইপারটেনশন। এখানে দেখা গেছে যে যদি খাবারে লবণের পরিমাণ কম থাকে, কোলেস্টেরলের পরিমাণ যদি কম থাকে, গরুর মাংস বা খাসির মাংসের সঙ্গে যে চর্বি থাকে, এই ধরনের খাবারগুলো যদি কম খাওয়া যায়, এর বদলে ফল, সবজি, বেশি থাকে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস যদি থাকে, সেই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ কিন্তু নিয়ন্ত্রণে থাকে। সঙ্গে করে ব্যায়ামের বিষয়টিও আসছে। আর যদি ধূমপায়ী থাকেন, তাহলে ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ওজন যদি বেশি থাকে সেটি কমিয়ে আনতে হবে। ওজন কমালে অনেক সময় দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে যদি হাঁটা যায়, অথবা ৪০ থেকে ৬০ মিনিট যদি সপ্তাহে পাঁচদিন ধরে হাঁটা যায়, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এরপর হলো মানসিক চাপ। মানসিক চাপ তো অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। ঠিকমতো ঘুমাতে হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
প্রশ্ন : ওষুধ আপনারা কখন দেন?
উত্তর : এরপরও দেখা যাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আবার দেখা যায় অনেকের পরিবারে যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাদেরও কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সহজে সেটা নিয়ন্ত্রণও করা যায় না। এর সঙ্গে আমরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকি। অনেক ধরনের ওষুধ বর্তমানে পাওয়া যায়। এ সমস্ত ওষুধের মাধ্যমে আমরা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্ত ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাপনের পরিবর্তনের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ খেতে শুরু করলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করা ঠিক হবে না। কারণ ওষুধ বন্ধ করার জন্য রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক করার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : যখন আপনারা দেখেন যে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে তখন আপনারা কী করেন?
উত্তর : জীবনযাপনের পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে থাকে। যদি ওষুধ বন্ধ করে দিই, তাহলে আবার রক্তচাপ আগের পর্যায়ে চলে যাবে। সুতরাং একটি পর্যায়ে ওষুধ কিন্তু খেতে হবে। ওষুধ খাবেন, নিয়মিত ফলোআপে থাকবেন। উচ্চ রক্তচাপের জন্য কিডনি, হার্টে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এ জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও তাকে করতে হবে। এ জন্য মাঝে মাঝে কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ফলোআপের জন্য কতদিন পরপর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। যাদের কিডনির সমস্যা নেই এবং ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা নেই, তাদের রক্তচাপ নিচে রাখার জন্য ওষুধ দেব। এসব রোগী ছয় মাস, এক বছর পর কিছু পরীক্ষা করতে পারেন। চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন। প্রায়ই রক্তচাপ মাপবেন, আর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওষুধও খেতে পারেন।
আর যাদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা আছে, মস্তিষ্কে সমস্যা আছে, কিডনির সমস্যা ডায়াবেটিস আছে, তাদের রক্তচাপ অনেক নিচে রাখার কথা বলা হয়। ১৩০/৭০-এর নিচে রাখার জন্য বলা হয়। তাদের খুব ভালোভাবে চিকিৎসা করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।