বিএসএমএমইউয়ে তৃতীয় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সম্পন্ন

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তৃতীয় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রোগী বর্তমানে সুস্থ হয়ে ওঠেছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লকের দ্বিতীয় তলায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক।

তিনি বলেন, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেবা চালু আছে। বিএসএমএমইউয়ে সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যেও উন্নতমানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেবা দেয়া হচ্ছে। মাত্র তিন লাখ টাকার মধ্যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই  চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। দেশের গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বিএসএমএমইউয়ের জন্য উপযুক্ত কাজ হবে। দেশের রোগীরা এখানে এসে যাতে বিশ্বের সর্ব উৎকৃষ্ট চিকিৎসাসেবা পায় তা নিশ্চিত করা হবে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন এ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টারে প্রত্যেক মাসে যাতে কমপক্ষে পাঁচজন রোগীকে এই সেবা দেয়া যায় তাও নিশ্বিত করা হবে। 
   
হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ উদ্দিন শাহ বলেন, বর্তমান সময়ে অত্র হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল/বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন রক্ত রোগের আধুনিকতম চিকিৎসা সমূহের মধ্যে অন্যতম। সারা পৃথিবীতে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমাসহ রক্তের ক্যাস্নার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। লিউকেমিয়াসহ রক্তের ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন।  হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল, বোনম্যারোট্রান্স প্লান্টেশন প্রক্রিয়ামূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এলোজেনিক বোনম্যারোট্রান্স প্লান্টেশন প্রক্রিয়ায় রোগীর নিকটাত্মীয় বা অন্য দাতার শরীর থেকে স্টেম সেল, বোনম্যারো সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। রোগীকে উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি, ক্যান্সারের ঔষধ এবং দাতার শরীর থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল, বোনম্যারো রোগীর দেহে টিকে থাকার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে ঔষধ দেয়া হয়। অতঃপর রোগীর দেহে দাতার শরীর থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল, বোনম্যারো প্রবেশ করানো হয়। 

তিনি বলেন, ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রক্রিয়া চলয়াকালীন সময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। জটিলতা সমূহের চিকিৎসা করার পরেও যদি তা নিয়ন্ত্রণে না আসে তবে তা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসা সম্পন্ন করার পরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে রোগীকে প্রথম ১০০ দিন নিয়মিত ফলো আপে রাখতে হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। মাল্টিপলমায়েলোমা, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এর ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে রোগটিকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে রাখার আশা করা যায়। 

এ ছাড়া বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর ও সময়ের সঙ্গে ক্যান্সারের পুনরায় আবির্ভাবের সম্ভাবনা থাকে । মায়েলোমা, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, থ্যালাসেমিয়া, এপ্লাস্টিক এ নিমিয়াসহ রক্তের ক্যান্সার ও রক্তরোগের এবং অন্যান্য ক্যান্সার, ইমিউন ডিফিসিয়েন্সি রোগীদের চিকিৎসায় সহজে এবং সুলভে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এদেশের স্বাস্থ্যখাতে নবনির্মিত এ সেন্টার বড় ভূমিকা রাখবে এবং এর পাশাপাশিদেশের রক্তরোগ চিকিসকদের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বিষয়ের উচ্চতর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ। এ ব্যাপারে ভিসি মহোদয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় ট্রান্সপ্লান্টসেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই এই সেন্টারের রূপকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগকে বিশ্বমানের হেমাটোলজি চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত করতে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অফ এক্সিলেন্সে পরিণত করতে নবনির্মিত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগে. জেনা. ডা. মো. রেজাউর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ, অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস, অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুজ্জামান খান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিন লুৎফুল কবির, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনিম আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. মুজাহিদা রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. গোলজার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. জুলফিয়া জিনাত চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রায়িক রায়হান চৌধুরীসহ হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক, রেসিডেন্ট, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।