শীতে শিশুর টনসিলে ব্যথা হলে কী করণীয়?
শিশুদের অসুখের মধ্যে টনসিলাইটিস বা টনসিলে প্রদাহ অহরহই দেখা যায়। প্রায়ই এ কারণে শিশুদের অস্ত্রোপচার করতে হয়। টনসিলাইটিস সাধারণত স্ট্রেপট্রোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। আরো কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও হতে পারে টনসিলাইটিস। গলায় ক্ষত বা গলাব্যথা টনসিলাইটিসের প্রথম দিকের লক্ষণ। খাবার-খাওয়ার সময় গলায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে স্বল্পমাত্রার জ্বর। শরীরে ব্যথা ও ম্যাজম্যাজ ভাব থাকতে পারে। টনসিল ফুলে যেতে পারে, লাল হতে পারে। অনেক সময় কানেও ব্যথা হতে পারে।
আবার বারবার দেখা দিতে পারে টনসিলের প্রদাহ। যেটাকে রিকারেন্ট টনসিলাইটিস বলা হয়। সঠিক সময়ে টনসিলাইটিসের চিকিৎসা করালে রোগী ভালো হয়। আবার এ চিকিৎসায় অবহেলা করলে রোগীর বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। টনসিল বড় হয়ে শ্বাসনালিকে বন্ধ করে দিতে পারে। খাবার খাওয়ার সময় খুব বেশি ব্যথা হতে পারে। যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে টনসিলের চারদিকে অ্যাবসেস বা ফোঁড়া হতে পারে। সরচেয়ে ভয়ংকর সমস্যাটি হলো টনসিলাইটিসের জীবাণু শিশুর হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভে সমস্যা করে করতে পারে রিউমেটিক ফিভার। এ জন্য এ রোগের চিকিৎসা করা জরুরি। অনেকেই টনসিলাইটিস হলে দুচিন্তায় পড়ে যান। বুঝি শিশুর টনসিলে অস্ত্রোপচার করতেই হবে। তবে এটা ভুল ধারণা। পরপর দু-তিন বছর ধরে প্রতিবছর তিন-চারবার টনসিলে প্রদাহ, টনসিলে অ্যাবসেস বা ফোড়া হলে, টনসিল বড় হওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, কথা বলায় সমস্যা ও ঘুমে সমস্যা হলে, অথবা এর থেকে আরো বেশি সমস্যা দেখা দিলে অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন পড়ে।
যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন অস্ত্রোপচার করতে হবে, কেবল তবেই অপারেশন করবেন। অপারেশন নিয়ে অভিভাবকরা খুব চিন্তিত থাকেন। তবে এতটা দুচিন্তার কারণ নেই। অস্ত্রোপচারের পর অনেক সময় শিশুর মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। এতে না ঘাবড়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
প্রতিরোধ করুন টনসিলাইটিস
শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করান। পরিবারে অন্য কারো এ সমস্যা থাকলে তার ব্যবহার্য চামচ, প্লেট, গ্লাস, কাপড়-চোপড় ব্যবহার করবেন না। প্রচুর পরিমাণে ফলের জুস পান করতে দিন। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে দিন। শিশুকে পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে দিন। শিশুকে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে দিন। এতে করে মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে। হাইড্রোজেন পার অক্সাইডও মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব কম বয়সী শিশুদের মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে দেবেন না। শিশু গিলে ফেললে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি ব্যবহার করেন তবে শিশু যেন না গিলে ফেলে সেদিকে সতর্ক থাকুন।
শিশুকে প্রচুর পানি পান করান। গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করান। শিশুকে কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করতে দিন। শিশুর সামনে ধূমপান করবেন না। শিশুকে দূষণমুক্ত পরিবেশে রাখুন। কুসুম গরম পানি পান করতে দিন। শিশুকে চা, স্যুপ পান করতে দিন।

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু