উদরপূর্তি
মার্কিন খাবারের স্বাদে ডি-বিস্ত্রো
ভোজনরসিকদের কথা মাথায় রেখে নগরীতে গড়ে উঠছে বার্গার স্পেশাল রেস্টুরেন্ট। একটি বান রুটির মধ্যে মাংস, মাছ বা ডিমের পুরের সঙ্গে লেটুস পাতা, মেয়োনেজ, চিজের আস্তর দিয়ে তৈরি খাবার। তবে নেই তেমন কোন শিল্পের ছোঁয়া। তারপরও ঢাকা শহরে এই খাবারটি বিক্রি করে খ্যাতি অর্জন করেছে অনেক রেস্তোরাঁ। আর খ্যাতিকে ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন স্বাদ। সব রেস্তোরাঁর বার্গার দেখতে একই রকম হলেও রন্ধন পদ্ধতির কারণে স্বাদে যোগ হচ্ছে বৈচিত্র্য। এমনই এক বার্গার রেস্টুরেন্ট ‘ডি বিস্ত্রো’।
বনানী ১১ নম্বর থেকে বাজার রোডে যেতে চোখে পড়বে খাবারের এই দোকানটি। লোহার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হলুদ আলোতে ভিন্নধর্মী সাজ আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে রেস্তোরাঁটির ভেতর অবদি। ছোট পরিসর হলেও, পুরোটা ছিমছাম করে সাজানো। দেওয়াল জুড়ে শোভা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অনেকগুলো চরিত্র। আর একটি দেওয়াল জুড়ে অনেক রকম নম্বর প্লেট। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ভোজনরসিকরা মনে হয় ভুল করে ফেলে গিয়েছে প্লেটগুলো, তারপর শোভা পেয়েছে ডি বিস্ট্রোর দেওয়ালে। এমনটা না হলেও পুরোটা জুড়েই মার্কিন একটা ফ্লেভার রাখা হয়েছে, জানালেন রেস্তোরাঁটির একজন কর্ণধার পুলক সিকদার। তিনি জানালেন আমেরিকায় তিনি খাবারের ব্যবসা করছেন অনেক বছর ধরেই। দেশে তার ঘনঘনই আসা-যাওয়া হয়। তাই তিনি চিন্তা করলেন আমেরিকার আসল স্বাদকে এদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করালে মন্দ হয় না। তবে এক্ষেত্রে তিনি প্রাধান্য দিলেন তরুণদের বিষয়টি। তাই খাবারের মানের সাথে জুড়ে দিলেন দামের বিষয়টি। দামটা সাধ্যের মধ্যে থাকায় খুব অল্প দিনেই পরিচিতি পেয়েছে তরুণদের মধ্যে। পুলক বলেন, ‘এখন পরিবার নিয়েও অনেকেই চলে আসেন।’
আরো একজন কর্ণধার জাকি হাসান খান জানান, ‘ভোজন রসিকদের কথা মাথায় রেখে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ। যেন তাদের খাবার অর্ডার দিতে সহজ হয়।’ তাই বারগারের সাথে আপনাকে নিতে হবে না বাড়তি পানীয়। উল্টো আপনার খাবারের পূর্ণতা দিতে বাড়তি কিছু আইটেম যোগ করে দিবে পূর্ণ তৃপ্তি।
আমেরিকান এই বার্গারগুলো করা হয়েছে চারটি ভিন্ন স্বাদে। তা হলো ডি-স্পেশাল, গার্লিক মায়ো, বারবিকিউ এবং নাগা। অর্ডার করে কিছু সময় অপেক্ষা করতেই ভেসে আসবে সুবাস। সাদা তিল ছড়ানো নরম রুটি। সুস্বাদু মাখনে ভাজা মাংসের গন্ধটা ইতোমধ্যে পুরো ঘ্রাণেন্দ্রিয়ই আবিষ্ট করে তুলবে। রুটির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে মনোযোগ আটকে যাবে ঠান্ডা, কচকচে সবুজ ভেষজ স্বাদে। এটা নিঃসন্দেহে ফ্রেশ একফালি ক্যাপসিকাম। তারপরের অংশটা নোনা। চিজ বলে কথা। এখান থেকেই গরম ভাপ টের পাওয়া যাবে। আর একটু সামনে বাড়তেই মাংসের স্বাদ। মাখনে ভাজা তুলতুলে নরম মাংসের পেটি। টাটকা গন্ধ, আর তাজা মাংসের স্বাদের গলি-ঘুপচিতে হারিয়ে যাবেন কিছুক্ষণ। এটা হলো ডি-বিস্ত্রোর আমেরিকান চিজ বিফ বারগার। মাংসের পেটি আর পর্যাপ্ত চিজ ঢালা আছে। বিপদ হলো, এই বার্গার একবার খাওয়ার পরে আবারো খেতে মন চাইবে। তবে এই অভিন্ন স্বাদের কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, কোনও ধরনের মসলাবিহীন সেই পেটির উপরে দেওয়া হয় নিজস্বভাবে তৈরি বারবিকিউ সস। আর বার্গার বানে ব্যবহার করা হয় গোপন রেসিপির একটি ককটেল সস, সঙ্গে কুচি করে কাটা লেটুস। পেটির উপরে সাজিয়ে দেওয়া হয় দুটি বিফ বেকন। তাতে দেওয়া হয় মাখনের প্রলেপ। পেটি আর বেইকন সবই গ্রিল করা হয় রেসিপি অনুযায়ী নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়, যাতে স্বাদের তারতম্য না হয়। মোজারেলা চিজের সঙ্গে এই সস ও বেকনের মিশ্রণ স্বাদের ইন্দ্রিয়তে একটু আলাদা নাড়া দেবে বৈকি!
শুধু বার্গার নয় ইতমধ্যে সমান ভাবে সমাদৃত হয়েছে রেস্টুরেন্টের পিৎজাও। বারগার আমেরিকান হলেও পিৎজা কিন্তু ইতালিয়ান। পিৎজা জুড়েই চোখে পড়বে ভিন্ন স্বাদের টপিংস। তবে এই পিজ্জা রয়েছে চারটি স্বাদে বিফ লাভার্স, চিকেন লাভার্স, ভেজিট্যাবল লাভার্স এবং সিফুড লাভার্স।
এছাড়াও রয়েছে বাফেলো উইংস, গ্রেভি পটেটো, অনিয়ন রিং এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। এখানেই শেষ নয়। আপনার খাবারের পূর্ণতা দিতে থাকছে চারটি সেট মেনু। যেখানে মিলবে ফ্রাইড রাইস, বারবিকিউ চিকেন, ভেজিট্যাবল, মাশরুম সর্স এবং সালাদ। এমনই প্যাকেজগুলো পাবেন ১৯০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়। এখানে যে কোন একটি রেগুলার বার্গার সাথে ২ টি বাফেলো উইংস এবং ১ টি ড্রিঙ্ক পাবেন ২৮০ টাকায়। ২টি রেগুলার বার্গার সাথে ৪ টি বাফেলো উইংস এবং ২ টি ড্রিঙ্কস পাবেন ৫৫০ টাকায়। চারটি রেগুলার বার্গার সাথে ১০ টি বাফেলো উইংস এবং ৪ টি ড্রিঙ্কস পাবেন ১০৯৫ টাকায়। অন্যদিকে ১০ ইঞ্চি পিৎজার সাথে ৯ টি বাফেলো উইংস এবং ৪ টি ড্রিঙ্কস পাবেন ৮৯৫ টাকায়। ১২ ইঞ্চি পিৎজার সাথে ১০ টি বাফেলো উইংস এবং ৫ টি ড্রিঙ্কস পাবেন ১০৫০ টাকায়।
এছাড়াও পাচ্ছেন মিক্সড রাইস এবং সটেড ভেজিট্যবলের সাথে পেরিপেরি চিকেন মাত্র ৩৫০ টাকায়, ফিস অ্যান্ড চিপস মিলবে ৩৯৫ টাকায়, নাচোস মিলবে ২৯৫ টাকায়, বিফ রিব ম্যাশ পটেটো ও ডেজিট্যাবল পাবেন ৩৯৫ টাকায়। এছাড়াও পাবেন ১৯০ টাকায় স্যান্ডউইচ এবং ১৫০ টাকায় লেমোনাইড।
রেস্তোরাঁটি খোলা থাকে সকাল ১১ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত। এখানে মোট বসার জায়গা আছে ২৭ জনের। তাই খুব সহজে বন্ধুদের কিডি পার্টি ব্যবস্থা করতে পারবেন। এছাড়া বনানী এলাকাতে পাবেন হোম ডেলিভারি।
ছবি: আল কেমি