বসন্ত এসে গেছে

জবুথবু শীতের আষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধন থেকে জীর্ণতা সরিয়ে প্রকৃতির ফুলে ফুলে সেজে ওঠার দিন বসন্ত। হিমেল হাওয়ায় উড়ে যাওয়া ভ্রমরের গেয়ে যাওয়া গান বাজে কানে। আজ বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পহেলা ফাল্গুন। বাংলা ১৪৩০ সনের শেষ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। মিলেমিশে একে অপরে একাকার হওয়ার দিন আজ।
প্রকৃতির পরিবর্তন আনুক মানবের মাঝেও আশা জাগানিয়া পরিবর্তন। হিংসা-হানাহানি, শোক-তাপ ভুলে সবাই মেতে উঠুক বসন্ত আবাহনে। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই মৃদু হাওয়ায় প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, মানুষকে করে জীর্ণতা সরিয়ে নতুন শুরুর প্রেরণা।
বসন্ত কচিপাতায় আনে নতুন রঙ, আলোর নাচন। সাথে মানব মনেও হয়তো। তাই তো সবুজ পত্রপল্লবের আবডালে লুকিয়ে বসন্তের দূত কোকিল শোনায় মদির কুহুকুহু ডাক। আর এই ডাকে ব্যাকুল হয় বিরহী মন।
সাহিত্যে প্রেম আর মিলনের ঋতু বলেও বসন্ত সুপরিচিত। বসন্তের শুরুর দিনে রাঙা মনের সৌন্দর্য ফুটে উঠে পোশাকেও, থাকে ফাগুনের আগুন ঝরানো রং। বসন্তের বাতাস যেমন প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে নতুনভাবে।
বসন্তের আগমনী গানে পুরো বাংলাদেশ যেন আটপৌরের আগল ভেঙে বসন্তের আহ্বানে জেগে ওঠে। তরুণীদের পরনে শোভা পায় বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় বাসন্তী ফুল। গালে বসন্তের মনকাড়া আল্পনা। তরুণদের বসনেও বাসন্তী ছোঁয়া। বাদ যায় না শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধরাও।
আর ভাষা শহীদের স্মৃতিকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে নতুনের আবাহনে তারুণ্য মেতে ওঠে বসন্ত উৎসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে সেই তারুণ্যের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে শাহবাগ, রমনা বটমূল, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাজধানীজুড়ে; শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নিভৃত পল্লীর ধুলোমাখা পথেও।
আর এত আয়োজন আর উপলক্ষের মাঝে গাঁয়ের সবুজ বনের আড়াল থেকে একটি কোকিল বুঝি সুরে সুরে মনে করিয়ে দেয় প্রিয়জনের কথাই। যানজট আর ব্যস্ত জীবনের নানা জটে থাকা নগরীর মানুষের কানেও কালেভদ্রে কোকিল শুনিয়ে দেয় বসন্ত এসে গেছে। তাই তো বসন্ত হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঋতু; প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার ঋতু।