নাদিন আইয়ুবের রাজকীয় গাউন
নাদিন আইয়ৃব, যিনি মিস ইউনিভার্স মঞ্চে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, তার এই বিশেষ পোশাকটির মাধ্যমে কেবল সৌন্দর্য নয়, বরং নিজ জাতির গভীর ঐতিহ্য, শিল্প ও ইতিহাসকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন। এটি একটি নিছক গাউন নয়, এটি ফিলিস্তিনি পরিচয় ও সংহতির এক শক্তিশালী দৃশ্যমান প্রতীক। নকশা, সূচিকর্ম এবং চিত্রকলা এই তিনের সংমিশ্রণে পোশাকটি এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী হয়েছে।
পোশাকটির মূল কাঠামো হলো একটি জমকালো অফ-শোল্ডার গাউন, যা অফ-হোয়াইট বা ক্রিম রঙের স্যাটিন কাপড়ে তৈরি। এর নকশায় আধুনিক ফ্যাশনের সাথে ঐতিহ্যবাহী উপাদান যুক্ত করা হয়েছে। গাউনের বক্ষদেশ এবং নিচের পাড় জুড়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সবুজ ও সোনালী রঙের তাতরিজ (Tatreez) অর্থাৎ ফিলিস্তিনি ক্রস-স্টিচের অনুকরণে সূচিকর্ম বা পুঁতির কাজ করা হয়েছে। সবুজ রঙটি জলপাই এবং প্রকৃতির প্রতীক, আর সোনালী রঙটি ঐশ্বর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে তুলে ধরে। এই নকশা পোশাকটিতে এক রাজকীয় এবং সুসংগঠিত রূপ দান করেছে।
পোশাকটির সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক অংশ হলো এর বিশাল ও নাটকীয় ট্রেন। ট্রেনের সাদা স্যাটিন কাপড়টি যেন একটি ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এর উপর হাতে আঁকা একটি অসাধারণ চিত্রকর্মে ফিলিস্তিনি ইতিহাসের অন্যতম পবিত্র স্থান জেরুজালেমের ডোম অফ দ্য রক (কুব্বাত আস-সাখরা)-কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সোনালী গম্বুজটি জলপাই গাছের ঘন ডালে ঘেরা, যা ফিলিস্তিনিদের resilience (সহনশীলতা) এবং মাটির সাথে তাদের ঐতিহাসিক বন্ধনকে বোঝায়। এই চিত্রকলা পোশাকটিকে ফ্যাশন আইটেম থেকে একটি চলমান শিল্পকর্ম ও সাংস্কৃতিক বার্তায় পরিণত করেছে।
পোশাকের এই রাজকীয় রূপটিকে সম্পূর্ণতা দিয়েছে তার ঐতিহ্যবাহী শিরস্ত্রাণ (Headpiece)। এটি গাউনের সূচিকর্মের সঙ্গে মিল রেখে সবুজ, সোনালী ও সাদা কাপড় দিয়ে তৈরি। শিরস্ত্রাণের সামনে রূপালী মুদ্রা বা পদক যুক্ত করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি নারীদের ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জার একটি অংশকে নির্দেশ করে। সবমিলিয়ে, নাদিন আইয়ৃবের এই পোশাকটি শুধুমাত্র ফ্যাশনের কারণে নয়, বরং এর গভীর সাংস্কৃতিক বার্তা এবং শৈল্পিক কারুকার্যের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রশংসনীয়।

ফিচার ডেস্ক