মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ওপর যত হামলা
মার্কিন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা হয়েছে। হত্যার চেষ্টায় পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনি সমাবেশে গতকাল (১৩ জুলাই) তার ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে, বলছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এ্ফবিআই)। তবে, কানে গুলি লাগলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। তার ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নিন্দা। এএফপি এসব তথ্য জানিয়েছে। যদিও দেশটিতে বিভিন্ন সময় প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ওপর হত্যা প্রচেষ্টা চলেছে। সেসব তথ্যে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম পলিটিকো।
গণমাধ্যমটি বলছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ওপর হত্যা প্রচেষ্টা কখনও কখনও সফলও হয়েছে। পলিটিকোয় তুলে ধরা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বলছে, ঘাতকদের হাতে নিহত হয়েছেন দেশটির চার প্রেসিডেন্ট।
৩০ জানুয়ারি, ১৮৩৫ : রিচার্ড লরেন্স ক্যাপিটলে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে গুলির চেষ্টা চলে। যদিও দুটি পিস্তলই মিসফায়ার করে।
১৪ এপ্রিল, ১৮৬৫ : ওয়াশিংটনের ফোর্ড থিয়েটারে ‘আওয়ার অ্যামেরিকান কাজিন’ দেখার সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন আহত হন। জন উইলকস বুথ ও তার সহযোগীর আব্রাহামকে গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্র করেন। সেই রাতে অন্যান্য সরকারি নেতাদেরও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তারা। তবে, তারা বিফল হন। যদিও সেক্রেটারি অব স্টেট উইলিয়াম হেনরি সেওয়ার্ডকে তারা আহত করেছিলেন।
২ জুলাই, ১৮৮১ : ওয়াশিংটনের একটি রেলস্টেশনে প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ডকে গুলি করেন চার্লস জুলিয়াস গুইটো। গুলিবিদ্ধ গারফিল্ডকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেপ্টেম্বরে সেখানে মারা যান তিনি। বলা হয়ে থাকে, তার চিকিৎসায় ডাক্তারদের অবহেলা ছিল।
৬ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ : প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলে গুলি করেন লিওন চেলগোস। বাফেলোতে প্যান-আমেরিকান এক্সপোজিশনে প্রেসিডেন্টের ওপর গুলি চালানো হয়। এর আট দিন পরে মারা যান তিনি।
১৪ অক্টোবর, ১৯১২ : সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট মিলওয়াকিতে প্রচারণা চালানোর সময় জন শ্র্যাঙ্ককের গুলিতে আহত হন। এ সময় তিনি কোনোমতে ভিড় উপেক্ষা করে চিকিৎসার জন্য বলেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৫ : নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্টকে মিয়ামিতে গুলি করারে হত্যারে চেষ্টা করেন জিউসেপ জাঙ্গারা। প্রথমবার গুলি চালালে তা মিস হয়। পরের গুলিতে শিকাগোর মেয়র আন্তন জোসেফ সেরমাক মারাত্মকভাবে আহত হন।
৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫ : ১৯৩৬ সালে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চেয়েছিলেন হুই পিয়ার্স লং। তার আগেই লুইসিয়ানার স্টেট ক্যাপিটলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। লুইসিয়ানার এই সিনেটরকে কার্ল ওয়েইস পিয়ার্স লংকে গুলি করেছিলেন। তবে, এটা বিশ্বাস করা হয় যে, দেহরক্ষীদের পাল্টা গুলিতে তিনি মারা যান।
১ নভেম্বর, ১৯৫০ : হোয়াইট হাউস সংস্কারের সময় ওয়াশিংটনের ব্লেয়ার হাউসে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন সে সময়ের প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান। এ সময় পুয়ের্তো রিকান জাতীয়তাবাদীরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। যদিও ভবনে প্রবেশের আগে ঘাতক গ্রিসেলিও টরেসোলাকে হোয়াইট হাউসের পুলিশ সদস্য লেসলি কফেল্ট হত্যা করেন। আর ব্লেয়ার হাউসে ঢোকার আগে অস্কার কোলাজো নামে অন্য খুনিকেও আটক করা হয়।
১১ ডিসেম্বর, ১৯৬০ : রিচার্ড পল পাভলিক ছিলেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যার উদ্দেশে তার গাড়ি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কেনেডিকে দেখে তার মন পরিবর্তন হয়। অন্যদিন তিনি এই কাজ সম্পাদন করবেন বলে ভেবেছিলেন, তবে তার আগেই তাকে গ্রেপ্তার হন পাভলিক।
২২ নভেম্বর, ১৯৬৩ : ডালাসের কেন্দ্র দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় জন এফ কেনেডিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে টেক্সাসের গভর্নর জন কন্যালিও আহত হন। দুদিন পর কেনেডিকে হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে যখন পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন নাইটক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি তাকে হত্যা করেন। পরে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি আর্ল ওয়ারেনের নেতৃত্বে একটি কমিশন পরে ঘোষণা করেন, অসওয়াল্ডই একমাত্র হত্যাকারী।
৫ জুন, ১৯৬৮ : প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রবার্ট ফ্রান্সিস কেনেডিকে গুলি করে হত্যা করেন সিরহান সিরহান। ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাথমিক ফলাফলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর লস অ্যাঞ্জেলেসের অ্যাম্বাসেডর হোটেলের রান্নাঘরে সিরহান তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
১৫ মার্চ, ১৯৭২ : আর্থার ব্রেমার লরেলে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ ওয়ালেসকে গুলি করেন। এতে ওয়ালেস আজীবন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ব্রেমার এর আগে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে গুলি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ : প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে হত্যার উদ্দেশে হোয়াইট হাউসে বিধ্বস্ত করার উদ্দেশে ডিসি-৯ হাইজ্যাক করেন স্যামুয়েল বাইক। যদিও হোয়াইট হাউসের ক্ষতি সাধন কিংবা নিক্সনের ওপর হামলার আগেই তাকে গুলি করে পুলিশ।
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ : সিরিয়াল কিলার চার্লস ম্যানসনের সমর্থক লিনেট ‘স্কিকি’ ফ্রোমে আমেরিকার অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাক্রামেন্টোতে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে গুলি করার চেষ্টা করে। তার বন্দুকটি মিসফায়ার করে।
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ : সান ফ্রান্সিসকোতে সারা জেন মুর জেরাল্ড ফোর্ডের ওপর গুলি চালান, কিন্তু মিস করেন।
৩০ মার্চ, ১৯৮১ : ওয়াশিংটনের হিলটন হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানকে গুলি করেন জন হিঙ্কলে জুনিয়র। এতে প্রেসিডেন্ট গুরুতর আহত হন। প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডিও আহত হন।
১৯৯৩ : কুয়েতে কার-বেমায় প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশকে উড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল, যা বানচাল হয়ে যায়। হত্যাকারীরা ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অধীন চাকরিতে ছিলেন।
১১ নভেম্বর, ২০১১ : তখন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায়। এ সময়ে অস্কার রামিরো ওর্তেগা-হার্নান্দেজ হোয়াইট হাউসে একাধিক গুলি চালান। তবে, প্রেসিডেন্ট কিংবা তার পরিবারের কোনো সদস্য বা অন্য কেউ সেই গুলিতে আহত হননি।
২০১৮ : সিজার সায়োক জুনিয়র নামে একজনকে পাইপ বোমা পাঠানো হয়েছিল। যদিও এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বারাক ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সে সময়ের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বেশ কয়েক নেতৃস্থানীয় ডেমোক্র্যাটকে উদ্দেশ করে এই পাইপ বোমা পাঠানো হয়।