নিব্রাসের ‘গুরু’ আনজেম চৌধুরীর টুইটার বন্ধ

গুলশান হামলায় জড়িত জঙ্গি নিব্রাস ইসলামের কথিত ‘গুরু’ আনজেম চৌধুরীর টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। ‘ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এবং ঘৃণা’ ছড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টুইটার। এর আগে জঙ্গিসংগঠন ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত্য, সমর্থন এবং অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যুক্তরাজ্যের আদালতে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাশে দেওয়া হয়।
জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করার কারণে পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক আনজেম চৌধুরী বহু আগ থেকেই সমালোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গত ২০ বছর ধরে তিনি ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে বিদ্বেষ, ঘৃণা, সন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন। তাঁর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে কয়েকশ ব্রিটিশ তরুণ-তরুণী আল-কায়েদা ও আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু হত্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনার পেছনেও তাঁর ইন্ধন রয়েছে।
এ ছাড়া গত ১ জুলাই বাংলাদেশের গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সদস্য জঙ্গি নিব্রাস ইসলামও আনজেম চৌধুরীর মাধ্যমে প্রভাবিত বলে অনেকের ধারণা।
গুলশান হামলার পর নিব্রাস ইসলামের টুইটার একাউন্ট অনুসরণে দেখা যায়, তিনি ১০টি টুইটার অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করতেন। তার মধ্যে একটি ছিল পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত যুক্তরাজ্যের কট্টরপন্থী ইসলামবক্তা আনজেম চৌধুরী। ২০১৪ সালে নিব্রাস এই আনজেম চৌধুরীর চারটি টুইটার পোস্ট রিটুইট করেছিলেন। নিব্রাস আনজেমকে ‘চৌধুরী’ নামে লিখতেন। এ ছাড়া একটি টুইটে নিব্রাস আনজেমকে ‘গুরু’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
গত বছর ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এবদোর কার্যালয়ে জঙ্গি হামলার পরই গত বছরের জানুয়ারিতে টুইট করেন ব্রিটেনের কট্টরপন্থী ইসলামবক্তা আনজেম চৌধুরী। তিনি ফ্রান্সের সমালোচক ছিলেন। সেটিতে লাইক দিয়েছিলেন নিব্রাস।
কট্টরপন্থী আনজেম ছাড়াও সামিউইটনেস নামে আরও একটি কট্টরপন্থী টুইটার একাউন্ট ফলো করতেন নিব্রাস। সেটি পরিচালনা করত আইএসের প্রচারক মেহেদি মাসরুর বিশ্বাস। গত বছর ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত আনজেম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়। আদালত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তা এত দিন প্রকাশিত হয়নি। এদিকে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত রায় প্রকাশ না হলেও জানা গেছে ১০ বছরের জেল খাটতে হবে আনজেমকে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হবে তাঁর এই শাস্তি।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, উচ্চ শিক্ষিত এবং পাশ্চাত্য জীবনধারায় অভ্যস্ত ধনী পরিবারের সন্তান নিব্রাস ইসলাম আনজেম চৌধুরীর বিভিন্ন বক্তব্য এবং কথপোকথনে প্রভাবিত হয়ে জঙ্গি তৎপরতার দিকে ঝুঁকে পড়ে থাকতে পারেন।
দি ইনডিপেনডেন্টের সূত্রে জানা গেছে, আনজেম চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অভিবাসি হয়ে আসা এক পাকিস্তানি পরিবারের সন্তান। লন্ডনে তার জন্ম। সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন। আনজেম চৌধুরী একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সলিসিটর। লন্ডনের ইলফোর্ডে বসবাস করেন পাঁচ সন্তানের এ জনক।
কয়েক বছর আগে আনজেম চৌধুরী সিরিয়ান জঙ্গি নেতা ওমর বকরি মোহাম্মদের সঙ্গে মিলে মৌলবাদি ধর্মীয় সংগঠন আল-মোহাজিরিন প্রতিষ্ঠা করেন। লন্ডনেও বকরির ছিল অবাধ যাতায়াত। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে সেই দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
আনজেম চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার বর্ষপূর্তিতে যুক্তরাজ্যে মার্কিন দূতাবাসের সামনে সে দেশের (যুক্তরাষ্ট্রের) পতাকা পুড়িয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন।
এ ছাড়া আনজেম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে উলউইচের সামনে সেনা সদস্য লি. রিগবাইয়ের হত্যাকারী মিখায়েল এডিবোলাজো এবং জঙ্গি ওমর বাকরি মাহমুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখারও অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, তিনি ইউটিউবে তার অনুসরণকারীদেরও আইএসকে সমর্থন দিতে উৎসাহ জোগান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবীতে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে মুসলমানদের জনসংখ্যা বাড়িয়ে ছয় মিলিয়নে উত্তীর্ণ করতেও আহ্বান জানিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আনজেম চৌধুরী এর আগে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথকে বোরকা পরিধানের পরামর্শ দেন। তিনি মদ পানের দায়ে শরিয়া আইনমতে প্রকাশ্যে ৪০ দোররা মারার মতো শাস্তির প্রবর্তন দাবি করেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর বক্তৃতা-বিবৃতির জন্য তিনি দীর্ঘদিন ব্রিটিশ মিডিয়া বিশেষ করে ট্যাবলয়েডগুলোর শিরোনামের খোরাক ছিলেন।
২০১৪ সালে তিনি আইএসের খলিফা আল বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইএস ঘোষিত ইসলামি খিলাফত হবে সবচেয়ে সুখময়, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ বাসভূমি। এর পর পরই আনজেম চৌধুরীর প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয় ব্রিটিশ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। কিছুদিন তাঁকে নজরদারিতে রেখে পরে আটক করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে আনজেম চৌধুরী মডারেট ইসলামের ধারণার তীব্র সমালোচনা করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন নারী হয় গর্ভবতী, অথবা গর্ভবতী নয়। এর মাঝামাঝি কিছু হতে পারে না। তাই ইসলামেও মাঝামাঝি অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই।