পায়ুপথের রক্তক্ষরণে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

পায়ুপথে রক্তক্ষরণে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। তবে সেটি কখন? এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৮৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সালমা সুলতানা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : পায়ুপথের রক্তক্ষরণের বেলায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : আসলে মলদ্বার দিয়ে দুই রকম রক্তক্ষরণ হয়। রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পারে না। একটি হলো কালো রঙের পায়খানা হওয়া, আলকাতরার মতো। এটাও কিন্তু একটি রক্তক্ষরণ। এই ক্ষেত্রে অনেক ওপর থেকে আসে রক্তটি। আসতে আসতে পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যায়। আরেকটি হলো একদম তাজা লাল রক্ত। আমি বলব যে কালো রঙের পায়খানা হোক বা লাল রঙের রক্তক্ষরণই হোক, সেটা ব্যথা করেই হোক বা ব্যথা বিহীনই হোক, যেই রকমই হোক, এতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটা কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন : একজন মানুষের যদি দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তার করণীয় কী বা এর কারণে কোনো ঝুঁকি আছে কি না?
উত্তর : অবশ্যই। প্রথম হলো আতঙ্ক। রোগীর যখনই রক্তক্ষরণ হয় সে ভয় পেয়ে যায় যে ক্যানসার হলো কি না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো ক্যানসার নয়। এটা খুবই সাধারণভাবেই সমাধান করা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ঠিক করে ফেললে দেখা যায় ৮০ ভাগ রক্ত ক্ষরণই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, শক্ত মল যখন মলদ্বার দিয়ে বের হয়, তখনই দেখা যায় ওই জায়গাটি ছিঁড়ে যায়। ছিঁড়ে গেলে ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হয়। এই রোগী যদি শুধু পায়খানাটা স্বাভাবিকভাবে মেনে চলে খাওয়ার মাধ্যমে, ওষুধপত্র খাওয়ারও কোনো দরকার নেই, স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের যে খাদ্যতালিকা, সেটাতে কিছু আঁশ, কিছু শাকসবজি বাড়িয়ে, পানি বাড়িয়ে নিলে, মাংসের পরিমাণ কমিয়ে নিলে দেখা যায় যে যখনই পায়খানাটা স্বাভাবিক হয়ে যায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বেশির ভাগ রোগী ভালো হয়ে যায়। এরপরও যদি রক্তক্ষরণ নিয়মিত হতে থাকে, সেই ক্ষেত্রে আমরা কিছু ওষুধপত্র দেই। আমরা একটি প্রোক্টোস্কোপ পরীক্ষা করে দেখি যে কী কারণে এখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কী কারণে হচ্ছে সেটি অনুসারে আমরা চিকিৎসা দেই।
প্রশ্ন : হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণ কী?
উত্তর : আসলে হেমোরয়েডের কারণ দুই রকমের হতে পারে। মলদ্বারের ভেতর কিছু ফোলা রক্তশিরা থাকে। সেখান থেকে কোনো কারণ ছাড়াই পারিবারিকভাবে টিস্যুটা ঢিলা থাকে। আস্তে আস্তে নিজে নিজে বড় হয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আর প্রধান কারণ হলো কোষ্টকাঠিন্য। আবার পাইলসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে এখন ওষুধ রয়েছে। পাইলস হলেই অস্ত্রোপচার করে ফেলতে হবে এই ধারণাগুলো এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন দেখা যায় ওষুধেই চিকিৎসা আছে। যদি পায়খানা স্বাভাবিকতা মেনে চলে এবং এর সাথে কিছু ওষুধ খায়, এটা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য প্রাথমিক পর্যায়ে।