প্যানিক ডিজঅর্ডার বা আতঙ্কের অসুখ
রহিম (৫৭ বছর), তিন সন্তানের বাবা। স্ত্রী-ছেলে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ও ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তবে মাঝেমধ্যেই তার শরীর খারাপ লাগে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, শরীরে ঘাম হয় ও দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় এখনই তিনি মারা যাচ্ছেন।
এভাবে আধা ঘণ্টার মতো থাকে। পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে এ রকম হওয়ার একটা ভয় তার মনে সারাক্ষণই কাজ করে। অনুভূতিটা সহ্যের বাইরে। তিনি এই লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অনেকবার ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তেমন কিছু অসুবিধা পাননি।
ভয়ে রহিম ১০ বছর ধরে বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারেন না। সেখানে অসুস্থ হলে তো আর ভালো ডাক্তার পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া এই লম্বা রাস্তাটা কীভাবে পার হবেন? অসুখ করলে চিকিৎসা কে করবে? বাড়ি যাওয়া তো দূরের কথা, তার বাড়ির থেকে মাত্র দু-এক মাইল দূরে যাওয়ার সাহস পর্যন্ত তিনি পান না। এর বাইরে যেতে হলে সঙ্গে লোক লাগে। ফলে ব্যবসার মাল কিনতে অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। ব্যবসা চালাতে হলে যে প্রচুর যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় তাও তিনি মোবাইলে সারেন। সশরীরে যেতে পারেন না।
করিম মিয়া (ছদ্মনাম) বয়স ২৬, পেশায় গাড়িচালক। মাসখানেক আগে গরমের মধ্যে জ্যামে আটকা পড়ে হঠাৎ তার খুব খারাপ লাগল। মাথা ঘুরতে লাগল। মনে হলো এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবেন। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল এখনই মরে যাবেন। কিছুক্ষণ পর একটু ভালো লাগায় কোনোমতে গাড়িটা নিয়ে অফিসে পার্ক করে সে যাত্রায় রক্ষা। এরপরও বেশ কয়েকবার এমনটা হলো। এখন ভয়ে আর গাড়ি চালাতে পারেন না। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। মনের মধ্যে টেনশন, এত ছুটি কাটালে চাকরিটা বোধ হয় আর থাকবে না। চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারেন তাঁর প্যানিক ডিসঅর্ডার হয়েছে।
প্যানিক ডিসঅর্ডার হলো একধরনের মানসিক অসুখ, যাতে ব্যক্তি প্রচণ্ড আতঙ্কের শিকার হন এবং এটা ১০-১৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হওয়ার পর আবার ধীরে ধীরে চলে যায়। অনেকে এ ধরনের অ্যাটাকের পর ৩০ মিনিটের মতো শারীরিক দুর্বলতার কথাও বলেন। প্যানিক অ্যাটাকের হার হলো শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ।
পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই রোগ দুই থেকে তিনগুণ বেশি দেখা যায়। প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ হলো- এখনই মারা যাচ্ছি এমন অনুভূতি (এর সঙ্গে থাকে তীব্র আতঙ্ক), বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন হওয়া, বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, ঘাম, শরীর ঠাণ্ডা বা গরম হয়ে আসা, শরীর কাঁপা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বমি ভাব বা পেটের অসুবিধা, শরীর অসুস্থ লাগা, মাথা হালকা হয়ে আসা, অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি হওয়া, শরীর অবশ হয়ে আসা, শরীর ঝিন ঝিন করা এবং বিভিন্ন রকম ভয়ের চিন্তা ইত্যাদি।
প্যানিকের রোগী সচরাচর কতগুলো পরিস্থিতি ও কাজকে বিপজ্জনক মনে করে এড়িয়ে চলেন। যেমন : তারা একা একা বাড়ি থেকে দূরে কোথাও যেতে চান না। ভিড়, ট্রাফিক জ্যাম, শপিং মল, লিফ্ট ব্যবহার, ট্রেন, বাস, লঞ্চ, প্লেন ইত্যাদি ব্যবহার, বড় সমাবেশ, বড় মসজিদের সামনের সারিতে নামাজ পড়া, ডাক্তার নেই এ ধরনের দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণ ইত্যাদি
বিষয়গুলো এড়িয়ে চলেন।
কেন হয়
এ রোগের কারণ বিষয়ে নানা রকম মত প্রচলিত আছে। মস্তিষ্কে রাসায়নিক উপাদানের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই অসুখ হয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। আরেক মত অনুযায়ী, আমাদের সবারই একটি সংবেদনশীল, জন্মগত, শ্বাসরোধবিষয়ক বিপদসংকেত ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এই প্রক্রিয়া খুব সহজেই এবং প্রায়ই চালু হয়ে যায় তবে এটি স্বতঃস্ফূর্ত প্যানিক তৈরি করতে পারে। হঠাৎ যে কোনো সময়ে, যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ধরনের প্যানিক হতে পারে। যেমন, রাতে ঘুমের মধ্যেও এমনটা ঘটতে পারে। অন্য একটি মতে, বৈবাহিক বা ব্যক্তিগত জীবনে দ্বন্দ্ব বা সমস্যা, নিজের বা ঘনিষ্ঠজনের বড় কোনো অসুখ, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু, শিশুর জন্ম, গর্ভপাত, আর্থিক সমস্যা, আর্থিক লোকসান, কর্মস্থলে চাপ, স্বাস্থ্য সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, নেশার প্রতিক্রিয়ায় প্যানিক শুরু হতে পারে।
তবে কোনো নির্দিষ্ট কিছু ছাড়াও এটি শুরু হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ভয়ের সময় অধিক দ্রুত শ্বাস নেওয়ার ফলে প্যানিক হতে পারে।
প্যানিক ডিসঅর্ডারের রোগীদের চিন্তার ধরনে অনেক পরিবর্তন আসে, যা তাদের অসুখের টিকে থাকার কারণ হিসেবে কাজ করে। কতগুলো চিন্তা নিচে তুলে ধরা হলো :
‘আমি এখনই মারা যাব।’
‘আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’
‘আমার একটি মারাত্মক ও ব্যতিক্রমী অসুখ হয়েছে।’
‘আমার বড় কোনো অসুখ হয়েছে। ডাক্তাররা ধরতে পারছেন না।’
‘বুকে ব্যথার অর্থ আমার এখনই হার্ট ফেইলিওর বা ব্রেইন স্ট্রোক হবে।’
‘আমার টিউমার, পাইলস, ক্যানসার, হার্ট, কিডনি, ব্রেইনের বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে গুরুতর অসুখ হয়েছে।’
‘ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে বা হবে।’
‘রাস্তায় জ্ঞান হারালে আমাকে কেউ সাহায্য করবে না। আমি বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পেতে পেতে নির্মমভাবে মারা যাব।’
‘আমি আর ভালো হব না।’
প্যানিকের রোগীরা সারাক্ষণ নিজের অসুখ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অসুখের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না বা বেড়ে গেল কি না, তা নিশ্চিত করতে তারা সারাক্ষণই শরীরের দিকে কড়া নজরদারি চালিয়ে যান। কেউ কেউ হার্ট বিট, ব্লাডপ্রেসার এগুলো নিয়মিত মাপেন। অনেকে এমনকি মিনিটে কতবার শ্বাস নিচ্ছেন তাও পরিমাপ করেন। প্যানিকের রোগীরা শরীরের সামান্য খারাপ অবস্থা দেখলেই তার ভুল ব্যাখ্যা করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে লক্ষণ বেড়ে প্যানিক অ্যাটাক হয়।
প্যানিকের রোগীরা অনেক ধরনের জায়গা, কাজ ও পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন যা পরিণামে তাদের অসুখকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যেমন : তাঁরা একা বাইরে যেতে চান না, ট্রাফিক জ্যামে থাকতে পারেন না বা পাবলিক বাস ব্যবহার করতে চান না। এ ছাড়া এঁরা শারীরিক পরিশ্রমও এড়িয়ে যান। কখনো যদি বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হয় তখন অনেকে সঙ্গে কাউকে নিয়ে বের হন।
প্যানিকের যে লক্ষণগুলো তৈরি হয়, তার শারীরবৃত্তীয় ব্যাখ্যা আছে। আমরা যখন বিপন্ন হই, তখন নার্ভাস সিস্টেমের অটোনমিক সিস্টেমের অংশ সিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম আমাদের দেহের গ্লান্ড এবং অঙ্গগুলোকে বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে।
ফলে স্নায়ু, মাংসপেশি ও মস্তিষ্কে আরো রক্ত আসে। অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ ও হজম প্রক্রিয়ায় রক্ত সরবরাহ কমে যায়। এভাবে থাইরয়েড ও এড্রিনালিন গ্লান্ড কার্যকরী হয়ে আক্রমণ অথবা পালানোর জন্য অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করে। সারাক্ষণ সিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম কার্যকরী থাকা দেহের জন্য ভালো নয়। যখন বিপদ কেটে যায় বা চাপ কমে যায়, তখন শরীরের ‘শাট অফ’ প্রক্রিয়া চালু হয়। এ ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের অংশ প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়। ফলে আর এড্রিনালিন ক্ষরিত হয় না। হৃদস্পন্দন ইত্যাদি কমে যায়। আমরা আরাম অনুভব করি। উল্লেখ্য, সিম্পেথিটিক ও প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করতে পারে না। একটি সক্রিয় থাকলে অন্যটি অবশ্যই নিষ্ক্রিয় থাকবে। দুটোর যথাযথ ক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা চলি। দীর্ঘমেয়াদি চাপের ফলে মস্তিষ্কের রিসেপ্টরের ক্ষতি হয়। ফলে শাট অফ বা বন্ধ করার প্রক্রিয়া কাজ করে না। অর্থাৎ প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হচ্ছে না। ফলে এড্রিনালিন রিলিজ হলেও এর নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া কাজ করে না। ফলে হঠাৎ অনেক এড্রিনালিন ক্ষরিত হয় ও প্যানিক ডিসঅর্ডারের লক্ষণ তৈরি হয়।
যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন ছোটখাটো বিষয়কে ভুল ব্যাখ্যা করে আমরা বিপজ্জনক বলে মনে করি। ফলে এটিকে বিপদ হিসেবে ধরে নিয়ে আমাদের দেহ সেভাবে প্রতিক্রিয়া করে। কিন্তু আমাদের ভুল ব্যাখ্যার কারণে সৃষ্ট তথাকথিত বিপদ আর সহসা কাটে না (আসলে বিপদ তো নেই)। কিন্তু দেহ এটিকে বিপদ হিসেবে ধরে নেয়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে সিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় থাকে এবং আমরা অসুস্থ বোধ করি।
কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, প্যানিক ডিসঅর্ডারের রোগী ঘন ঘন শ্বাস ফেলেন। এর ফলে কতগুলো লক্ষণ তৈরি হতে পারে, যেমন : মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা করা, কানে ধাতব শব্দের মতো শব্দ শোনা, শারীরিক দুর্বলতা, মূর্ছা যাওয়ার অনুভূতি, তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি, অসাড়তা ইত্যাদি। ফলে রোগী ভয় পেয়ে যেতে পারেন যা লক্ষণগুলোকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চললে এবং ঠিকমতো ওষুধ না খেলেও রোগ টিকে থাকে।
করণীয় :
- চিন্তার ধরন বদলে ফেলুন। অধিক ইতিবাচক বা অধিক নেতিবাচক চিন্তায় কোনো লাভ নেই। ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা করুন। অগ্রিম চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। যদি তবুও চিন্তাগুলো আসতেই থাকে তবে এটিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে পারেন।
- নিজেকে নিজে সাহস দিন। মনে মনে বলুন, ‘এ রকম আগেও বহুবার হয়েছে। আমার কোনো ক্ষতি হয়নি। খারাপ অবশ্য লেগেছে। আবার পরে ঠিকও হয়ে গেছে। এবারও আশা করা যায় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঠিক হয়ে যাবে।’
- মনে রাখবেন, প্যানিক অ্যাটাকে প্রচণ্ড আতঙ্ক ও কষ্ট হলেও এতে মৃত্যু হয় না। অতীতে আপনার বহুবার এ ধরনের অ্যাটাক হয়েছে। আবার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে কেটেও গেছে। এবারও কেটে যাবে। মনে রাখবেন, ডাক্তার বলেছে যে, আপনার শরীরে কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই ভয় নেই।
- ডাক্তার ও টেস্টের ফলাফলের ওপর আস্থা রাখুন। ঘন ঘন ডাক্তার বদলাবেন না। নিয়মিত ওষুধ খান। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না, বন্ধ করবেন না বা ওষুধের মাত্রার মধ্যেও কোনো পরিবর্তন আনবেন না।
- অপ্রয়োজনে কারো কাছেই সান্ত্বনা নেবেন না। দৌড়ে হাসপাতালেও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সহ্য করুন। একটু পরে এমনিতেই লক্ষণ কমে যাবে।
- অসুখের লক্ষণ শুরু হলে ওই বিষয়ে চিন্তা না করে অন্য কোনো বিষয়ে চিন্তা করবেন। কারো সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন (তবে অসুখের বিষয়ে কথা বলা চলবে না)। আশপাশ থেকে হেঁটে আসতে পারেন। টেলিফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আশপাশের মানুষ বা দৃশ্যের দিকে মন দিতে পারেন।
- ধীরে ধীরে পেট ভরে শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিন। এভাবে চালিয়ে যান। বেশ কয়েক মিনিট করলে আপনার লক্ষণ কিছুটা কমে আসতে পারে।
- যখন প্যানিক অ্যাটাক হয় তখন কাগজের ঠোঙার মধ্যে শ্বাস ফেলে আবার সেখান থেকেই শ্বাস নেবেন। এভাবে কয়েক মিনিট চালিয়ে গেলে আপনার লক্ষণগুলো কমতে শুরু করতে পারে। ঠোঙাটি এমনভাবে নাক ও মুখের সঙ্গে আটকে নেবেন, যাতে বাইরে থেকে অতিরিক্ত বাতাস ঠোঙার মধ্যে না আসতে পারে। তবে এ কাজে কখনোই প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন না।
- একা বের হবেন। সঙ্গে লোক নিয়ে বের হওয়ার কোনো দরকার নেই। পকেটে জরুরি সময়ে খাবার জন্য ওষুধ, খাদ্য বা পানীয় রাখারও কোনো মানে হয় না। মাত্রাতিরিক্ত টাকা-পয়সা রাখার বা অপ্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া করে কোথাও যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভয়ের কারণে একটা গাড়ি ভাড়া কেন করবেন? যদি স্বাভাবিকভাবে বাসে যাতায়াত করার কথা থাকে তবে বাসই ব্যবহার করুন। প্যানিক ডিসঅর্ডার থেকে বাঁচার জন্য অতিরিক্ত কোনো সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই সতর্কতা ছাড়াই আপনি দিব্যি পারবেন। এগুলো নিলে বরং আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। ভাববেন এগুলোর কারণেই এ যাত্রায় বাঁচলেন। আসলে এমনিতেও কিছু হতো না। আপনার ভয়গুলো মোকাবিলা করুন। যে কাজে ভয় পান সেগুলো করুন। একবারে না পারলে প্রথমে অল্প ভয়ের কাজ করে, এরপর ধীরে ধীরে আরো বেশি ভয়ের কাজগুলো করে সবশেষে চরম ভয়ের কাজগুলো অভ্যাস করতে পারেন। এতে আস্তে আস্তে ভয় কেটে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে ব্যাপারগুলো।
- দেহের শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক আছে কি না তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না হওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলোর দিকে একেবারেই লক্ষ করবেন না। শুধু শুধু বারবার রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন ইত্যাদি মাপার প্রয়োজন নেই।
- বিভিন্ন কারণেই শরীরে ক্লান্তি বা কিছুটা খারাপ লাগতে পারে। যেমন : নিদ্রাহীনতা, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে, জোরে শব্দ হলে, অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত শীত পড়লে, বদ্ধ জায়গায় অনেক্ষণ থাকলে, পরিশ্রম করলে, যৌন মিলন করলে কিছুটা ক্লান্তি বা খারাপ লাগতে পারে। এই খারাপ লাগাটাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করবেন না।
- মৃত্যুকে ভয় পাবেন না। মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে চেষ্টা করতে পারেন। কেউ চিরজীবী হয় না।
- ব্যস্ত থাকার জন্য কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। আপনি আর বসে বসে মরে গেলাম টাইপের ভয়ের এবং নেতিবাচক চিন্তা করার অবসর পাবেন না। এ জন্য বলা হয়েছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। ব্যস্ততা আপনাকে প্যানিক অ্যাটাক থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।
- দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন।
- নিয়মিত হাঁটতে পারেন।
- রিল্যাক্সেশন নামে একধরনের ব্যায়ামের অভ্যাস করলে আপনার লক্ষণ কমতে সাহায্য হতে পারে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ফিটফাট থাকুন। রোগী রোগী ভাব করে ঘুরলে মন ছোট হয়ে যায়।
- ওপরের বুদ্ধিগুলো প্রয়োগ করেও যদি আপনার সমস্যা সমাধান না হয় তবে আপনার বিশেষজ্ঞ সাহায্যের প্রয়োজন। ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ নামের একধরনের সাইকোথেরাপি প্যানিক ডিসঅর্ডার চিকিৎসায় বিশেষ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া প্যানিকের চিকিৎসায় ডাক্তাররা বেশ কিছু ওষুধও ফলপ্রসূভাবে প্রয়োগ করে থাকেন।
লেখক: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। সহকারী অধ্যাপক, সাইকোথেরাপি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।