আমার চাচা অস্থির, তাঁকে দ্রুত সরানো দরকার : মেরি ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের পক্ষে খোদ তাঁর ভাতিজি। ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মেরি ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে ‘অস্থির’ বলে আখ্যা দেন। এর আগে সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের আহ্বান জানান মেরি ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় এখনো শিউরে ওঠেন জানিয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে মেরি ট্রাম্প বলেন, ‘প্রথমেই আমার মাথায় যা এসেছিল, তা হলো এটা ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা। এভাবে সীমা লঙ্ঘন করা, এতটা সস্তা কোনো কাজ করা... ডোনাল্ড (ট্রাম্প) লোকটাই তো সস্তা। কংগ্রেসের কার্যালয়ে হামলা করা, তছনছ করা, সেখানে মার্কিন ঐক্যবিরোধী পতাকা বহন করা, নাৎসি বাহিনীর সমর্থনে টি-শার্ট পরা—এত কিছুর পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলাকারীদের ভালোবাসা বার্তা দিলেন।’
ট্রাম্পের ক্ষমতাকালের চার বছরে অসাধু ব্যক্তিরা উৎসাহ পেয়েছে দাবি করে সাক্ষাতকারে মেরি বলেন, “ক্যাপিটলে হামলার পর ‘আমার মাথায় এলো, পরবর্তী সরকারে যে মানুষগুলো থাকবে, তারা তো তখন (কংগ্রেস) ভবনে। কতটা বিপজ্জনক ছিল ব্যাপারটা, তা চিন্তার বাইরে।”
এ হামলার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করে মেরি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এটা ধীরেসুস্থে এগোনোর সময় নয়। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন মেরি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তবে, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তেমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। কারণ তিনি (মাইক পেন্স) হলেন এই গ্রহের সবচেয়ে বড় কাপুরুষ।’
এ ছাড়া ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের পদত্যাগ করা প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন মেরি ট্রাম্প। তাঁর মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রীরা ‘গত বুধবারের ঘটনার বিরোধিতা করেন বলে পদত্যাগ করেননি’ বরং মেরি মনে করেন, ওই মন্ত্রীরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন মাত্র।
ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা রিপাবলিকানদের ভাবমূর্তির ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, জানতে চাওয়া হলে মেরি বলেন, ‘যদি রিপাবলিকানেরা ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত না করে, তাহলে চিরকাল তাদের এই হামলার দায়ভার বহন করতে হবে। যা তাদের ভেতর থেকে পোড়াবে।’
মেরি বলেন, জো বাইডেন সরকারকেও ক্ষমতাগ্রহণের পর দ্রুত বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় তারাও সমালোচনার মুখে পড়বে। এক্ষেত্রে ক্ষমতায় আরোহণের পর দ্রুত মেক্সিকো সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু করতে বাইডেন সরকারকে আহ্বান জানান মেরি। এ ছাড়া ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনাটি পরিকল্পিত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মেরি মনে করেন।
ক্যাপিটলে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর সাজা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাতিজি মেরি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের গণতন্ত্রকে অসম্মান করেছে।’
তবে এ মুহূর্তে চাচা ট্রাম্পের অস্থিরতাকেই সবচেয়ে উদ্বেগজনক ইস্যু বলে মনে করেন মেরি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন : এই লোকটিই মহামারির সময় ডাকযোগে ভোট দেওয়াকে বাতিল করার চেষ্টা করেছিল। এই সেই লোক যে পেন্টাগনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পদত্যাগে বাধ্য করে তাঁদের জায়গায় চাটুকারদের বসিয়েছিল। এরই ফলশ্রুতিতে গত বুধবার (ক্যাপিটলে হামলার সময়) দাঙ্গাবাজদের মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে ছয় ঘণ্টা দেরি করিয়েছিল পেন্টাগন। দেশের যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর আমরা ভরসা করি, সেগুলোকে বরবাদ করার সুযোগ এই লোকটিকে দেওয়া হয়েছে বলেই আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈধ পন্থায় জিতেছেন বলে মনে করেন না মেরি। তাঁর ভাষ্য, ট্রাম্প জীবনে কোনোদিন বৈধ উপায়ে জেতেননি। যেকোনোভাবে জয়লাভ করাই তাঁর কাছে মুখ্য।
এসব মাথায় রেখে ট্রাম্পকে খাটো করে দেখা উচিত হবে না বলেই মনে করেন মেরি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তাঁর মেয়াদকালের বাকি দুই সপ্তাহেরও কম। এই সময়ের মধ্যে তিনি প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মাধ্যমে নিজেকে মামলা থেকে রক্ষা করতে পারবেন না কিংবা দেউলিয়াত্ব বা অপরাধী প্রমাণ হওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন। আমি জানি না তিনি ঠিক কী করবেন। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি যেকোনো পদক্ষেপই নিতে পারেন। আর, সময় কিন্তু শেষ হয়ে আসছে।’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাতিজি মেরি ট্রাম্প চাচা সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি যে আগ্রাসী আকার ধারণ করেছেন, তা তিনি নিজেও জানেন। এখন তিনি সব পোড়াতে যাচ্ছেন। নিজে ডুবলে তিনি আমাদের সবাইকেও ডোবাবেন।’