ইংলিশদের স্তব্ধ করে ইউরোর চ্যাম্পিয়ন ইতালি
দর্শকভরা মাঠে ম্যাচের শুরুতেই উৎসবের উপলক্ষ পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। গোল করে পুরো ওয়েম্বলিকে আনন্দ উপহার দেন লুক শ। কিন্তু, এগিয়ে যাওয়ার স্বস্তি শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি ইংল্যান্ড শিবিরে। পাল্টা আক্রমণে দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরে ইতালি। নির্ধারিত সময়ে আর গোল না এলে ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। ভাগ্য পরীক্ষায় ইংলিশদের স্তব্ধ করে ইউরোর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উড়তে থাকা ইতালি।
আজ রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় অনুষ্ঠিত ইউরোর ফাইনালের ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ইতালি। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে দুদলের স্কোরলাইন ছিল ১-১ গোল। ইংলিশদের হয়ে গোল করেন লুক শ এবং ইতালির হয়ে গোল করেন বোনুচ্চি।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে থেকেই ইংলিশরা শুরু করেছিল সেই বিখ্যাত গান ‘ইটস কামিং হোম’। ইংল্যান্ড ফাইনালে ওঠায় ভক্তরা ভেবেছিল হয়তো স্বপ্ন এবার পূরণ হতে যাচ্ছে। অবসান হতে যাচ্ছে ৫৫ বছরের অপেক্ষার প্রহর। কিন্তু সেটা আর হলো না, ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে ইউরোর ট্রফি গেল ইতালির ঘরে।
এদিন ঘরের মাঠে শিরোপাযুদ্ধে নামে ইংল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবে ওয়েম্বলিতে উত্তেজনার কমতি ছিল না। স্টেডিয়ামজুড়ে ইংল্যান্ড ভক্তদের জয়গান। এমন টান টান উত্তেজনায় ম্যাচের শুরুতেই হোঁচট খেয়ে বসে ইতালি।
দুর্দান্ত গতির প্রদর্শনীতে ম্যাচের শুরুতেই গোল পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকেরা। যদিও সুযোগটি ছিল ইতালির। শুরুতে কর্নার পেয়ে যায় তারা। কিন্তু, ভাগ্যক্রমে সে সুযোগ লুফে নেয় ইংল্যান্ড। কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ার করে লম্বা পাস দেন কিয়েরান ট্রিপিয়ার। সেখান থেকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা লুক শ ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন। তাতে বল জড়িয়ে যায় ইতালির জালে। সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠে লন্ডনের ওয়েম্বলি।
গোল করে রেকর্ডের পাতায় নাম লেখান লুক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটাই ছিল তাঁর প্রথম গোল। আর গোল করেই গড়ে লুক গড়লেন ইতিহাস। ইতালির বিপক্ষে ম্যাচের এক মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় গোলটি করেন লুক। তাঁর গোলটিই এখন ইউরোর ফাইনালে করা সবচেয়ে দ্রুততম গোল। এর আগে ১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন।
শুরুতে পিছিয়ে পড়া ইতালি প্রথম সুযোগ পায় অষ্টম মিনিটে। ইংল্যান্ডের পোস্টে শট নেন ইনসাইন। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সেই যাত্রায় রক্ষা পায় ইংলিশরা।
এরপর প্রথমার্ধে একে একে বেশ কয়েকবার আক্রমণে যায় ইতালি। প্রথমার্ধের ৬১ ভাগ সময় বল দখলে রাখে তারা। কিন্তু, কিছুতেই হ্যারি কেইনদের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। মাত্র ৩৯ মিনিট বল দখলে রাখা ইংল্যান্ড শুরুর শটেই গোল পেয়ে যাওয়ায় রক্ষণে জোর দেয়। প্রথমার্ধে আর তেমন আক্রমণে যায়নি গ্যারেথ সাউথগেটের দল। শেষ পর্যন্ত লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে ইংলিশরা।
বিরতি থেকে ফিরে ৪৮ মিনিটে হ্যারি কেইনকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ইতালির বারেল্লা। ৫৩ মিনিটের মাথায় আক্রমণে যায় ইতালি। কিন্তু ইনসাইনের শট টার্গেটে ছিল না।
দুই মিনিট বাদে রাহিম স্টার্লিংকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন বোনুচ্চি। ৫৭ মিনিটের মাথায় ইনসাইন ফের শট নেন ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে। তাঁর আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত গোল পেয়ে যায় ইতালি। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে জটলার মধ্যে থেকে গোল করে ইতালিকে সমতায় ফেরান বোনুচ্চি।
এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কেউই আর পেল না জালের দেখা। নির্ধারিত সময় ১-১ গোলের সমতা হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধেও মেলেনি ফল। দফায় দফায় আক্রমণে যাওয়া ইতালি সুযোগ করতে পারেনি অতিরিক্ত সময়ের শেষার্ধেও। ফলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শুট আউটেই ঠিক হয় এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন।
ইউরোর সেমিফাইনালে স্পেনকে পেনাল্টি শুট-আউটে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইতালি। নির্ধারিত সময়ে তাদের ম্যাচের স্কোর ছিল ১-১। অন্যদিকে ইংল্যান্ড শেষ চারে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পায়। এবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে মুকুট পরলেন রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা।