ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিল বাংলাদেশ
সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতেও নূন্যতম লড়াই করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিনিয়র ক্রিকেটারদের দারুণ ব্যাটিং আর মুস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনদের বোলিং তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারাল তামিম ইকবালের দল। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করে যাত্রা শুরু করলেন তামিম।
এর আগে প্রথম দুই ওয়ানডেতে জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। এবার চট্টগ্রামের মাটিতে অতিথিদের হোয়াইটওয়াশ করল লাল-সবুজের দল। এই নিয়ে টানা তৃতীয় দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাল বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরেছিল টাইগাররা।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। জবাব দিতে নেমে ১৭৭ রানে গুটিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৯৮ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিওর্ন ওটলিতে কটবিহাইন্ড করে সাফল্য এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিওর্নের পর সুনীল আমব্রিসকেও টিকতে দিলেন না মুস্তাফিজ। এলবির ফাঁদে ফেলে আমব্রিসকে আউট করেন তিনি। এই নিয়ে তৃতীয়বার আমব্রিসকে ফেরালেন মুস্তাফিজ। এরপর কাইল মায়ার্সকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ।
তিন উইকেট হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে জেসন মোহাম্মেদকে ফিরিয়ে ওই প্রতিরোধ ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ৩২ রানে ভাঙে এই জুটি। ৩৬ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন জেসন। ক্যারিবীয় অধিনায়কের পর বোনারকেও নিজের শিকার বানান সাইফউদ্দিন। মিরাজের পরের স্পেলে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জামার হ্যামিল্টন। দ্রুত ছয় উইকেট হারানোর পর শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন চোট কাটিয়ে ফেরা সাইফউদ্দিন। মুস্তাফিজ ও মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। একটি করে নিয়েছেন সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে নড়বড়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যারিবীয় বোলার আলজারি জোসেফকে লেগে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু টাইমিং ঠিকমতো হয়নি। লেগ স্টাম্পের দিকে থাকা বলে ব্যাট লাগাতে পারেননি তিনি। এলবিডব্লিউর আবেদন করেন সফরকারীরা। আম্পায়ারও তাঁদের আবেদনে সাড়া দেন। অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করেন লিটন। কিন্তু রিভিউ নেননি লিটন। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রিভিউ নিলে বাঁচতে পারতেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
এরপর নবম ওভারে শান্তকে সাজঘরে পাঠান কাইল মেয়ার্স। থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি শান্ত। সাকিবকে সরিয়ে ওয়ানডাউনে শান্তকে সুযোগ দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। কিন্তু পুরো সিরিজে ব্যর্থ এই তরুণ। কাইল মেয়ার্সের অফ স্টাম্পের ভেতরে করা বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি শান্ত। আম্পায়ার এলবির আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ নেন শান্ত। কিন্তু তাতে রিভিউতে সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি।
উইকেটে থিতু হয়ে ৭০ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক তামিম। ওয়ানডেতে বাঁহাতি এই ওপেনারের ৪৯তম হাফসেঞ্চুরি এটি। এর আগের ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন এই ওপেনার। ৬৪ রানে ফিরেছেন তিনি। ৮০ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রানে ফেরার আভাস দেন সাকিব। শেষ ওয়ানডেতেও ধরে রাখলেন সেই ধারাবাহিকতা। তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস আর বড় করতে পারলেন না। হাফসেঞ্চুরির পর ৫১ রানে ফিরে গেলেন সাজঘরে। ৮১ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল তিন বাউন্ডারি দিয়ে।
এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। ৪৭ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহও খেলেন হাতখুলে। দুজনে মিলে গড়েন ৭২ রানের জুটি। এর মধ্য ৬৪ রানে বিদায় নেন মুশফিক। ৫৫ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল চার বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায়।
মুশফিক ফেরার পর সৌম্যকে নিয়ে এগিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। মাঝে সৌম্য রান আউট হয়ে ফিরলে শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহর দারুণ ফিনিশিংয়ে ২৯৭ রানে থামে বাংলাদেশ। ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে (তামিম ৬৪, লিটন ০, শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফউদ্দিন ৫* ; মেয়ার্স ৭-০-৩৪-১, জোসেফ ১০-০-৪৭-২, আকিল ১০-০-৪৬-০ , জেসন ৩-০-১৬-০, হার্ডিং ৯-০-৬৬-০, রেমন ১০-০-৬১-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৪.২ ওভারে ১৭৭/১০ (কিওর্ন ১, সুনীল ১৩, বোনের ৩১, জেসন ১৭, মেয়ার্স ১১, হ্যামিল্টন ৫, রেমন ২৭, আলজারি ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১* ; মুস্তাফিজ ৬-০-২৪-২, তাসকিন ৮.২-১-৩২-১, মিরাজ ১০-২-১৮-২, সাকিব ৪.৫-০-১২-০, সাইফউদ্দিন ৯-০-৫১-৩, সৌম্য ৩.১-০-২২-১)।
ফল : বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মুশফিকুর রহিম।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : সাকিব আল হাসান।
সিরিজ : ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ।