তামিম-সোহানের দিনে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ
২৯৯ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু এনে দিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তামিম। সঙ্গে দারুণ ইনিংস উপহার দিয়েছেন সাড়ে চার বছর পর দলে ফেরা নুরুল হাসান হোসান। ব্যাটসম্যানদের দিনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ।
হারারের স্পোর্টস ক্লাবে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল। ৩-০ তে সিরিজ জিতেছে সফরকারীরা। এই জয়ের মাধ্যমে প্রথম জিম্বাবুয়েকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এ ছাড়াও এই জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের গোটা ৩০ পয়েন্ট পেল লাল-সবুজের দল।
আজ মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৪৯.৩ ওভারে ১০ উইকেটে ২৯৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। জবাব দিতে নেমে ৪৮ ওভারে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ১১২ রান করেছেন তামিম ইকবাল। ১৬ মাস পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে এটি তাঁর দ্রুততম সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১০ সালে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি। দেশের বাইরে তামিমের সপ্তম সেঞ্চুরি এটি। আর অধিনায়ক হিসেবে ১৫ ইনিংসে প্রথম শতক।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাত খুলে খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। দল জিতলেও ব্যাট হাতে ভূমিকা রাখতে পারেননি। তবে শেষটিতে দলের সামনে যখন কঠিন লক্ষ্য, তখন ব্যাট হাতে ঠিকই জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চাতারার লেন্থ বল লং অন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্পর্শ করেছেন ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কের ঘরের যেতে তাঁর লেগেছে ৮৭ বল।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬ মাস পর শতকের দেখা পেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। সবশেষ ২০২০ সালের মার্চে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই নিজের শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তামিম। ওইম্যাচে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের দেওয়া ২৯৯ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু করে বাংলাদেশ। কোনো উইকেট না হারিয়েই শুরুর জুটিতে ৫০ রান পার করে লাল-সবুজরা। তবে মাঝপথে ৮৮ রানে ফিরে যান লিটন। অফ স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরের বল সুইপ করতে চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতানো সাকিব আল হাসান এই ম্যাচেও ভালো কিছু করার আশা দেখান। কিন্তু থিতু হয়ে ফিরে যান তিনি। লুক জঙ্গুয়ের বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে জায়গায় দাঁড়িয়ে চালিয়ে দেন সাকিব। বল চলে যায় কিপারের হাতে। ৪২ বলে ৩০ রান করে ফেরেন সাকিব।
লিটন-সাকিব বিদায় নিলেও উইকেটে থিতু ছিলেন তামিম। দলের কঠিন সময়ে ব্যাট হাতে ঠিকই জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চাতারার লেন্থ বল লং অন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। কিন্তু সেঞ্চুরির পর বেশিদূর যেতে পারেননি। ১১২ রানে তাঁকে থামান ডোনাল্ড তিরিপানো। তামিমের পর মাহমুদউল্লাকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ।
জোড়া উইকেট হারিয়ে কিছুটা ছন্দপতন হয় বাংলাদেশের। সেখান থেকে বাংলাদেশকে টানেন একাদশে ফেরা নুরুল হাসান সোহান। দীর্ঘদিন পর ফিরেও কোনো রকম জড়তা ছাড়াই দারুণ ব্যাটিং করেছেন তিনি। ব্যাট হাতে খেলেছেন ৪৫ রানের ইনিংস। তাঁর ব্যাটে ভর করে নিরাপদে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এদিন টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। তবে শুরুতে বোলিং নেওয়ার সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি সফরকারীরা। জিম্বাবুয়ের প্রথম উইকেট নিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আট ওভার পর্যন্ত। নবম ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান।
ইনিংসের ৮.৪ ওভারে জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব। সাকিবের প্রথম ওভারে করা মিডল স্টাম্পে থাকা লেংথ বল মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন বাঁহাতি টাডিওয়ানাশে মারুমানি। ব্যাটে-বলে হয়নি। বল লাগে প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে আবেদন তোলেন সাকিব। আবেদনে সাড়া দিতে খুব বেশি সময় নেননি আম্পায়ার। ১৯ বলে ৮ রান করে ফেরেন মারুমানি। ৩৬ রানে থামে উদ্বোধনী জুটি।
এরপর ১৮তম ওভারে ব্রেন্ডন টেইলরকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। ২৮ রান করে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টেইলর। দিয়ন মায়ার্সকেও টিকতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। ৩৪ রানে তাঁকে বোল্ড করেন মাহমুদউল্লাহ।
মায়ার্সের উইকেটের না যেতেই আরেকটি ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। মুস্তাফিজের স্লোয়ার ডেলিভারি ডিফেন্স করতে গিয়ে ব্যাট আগে বাড়িয়ে ফেলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। বল ব্যাটে লেগে গেলে সহজ ক্যাচ হয়ে যায় শর্ট মিড উইকেটে।
বাংলাদেশকে বেশি ভুগিয়েছেন চাকাভা। সেই চাকাভার প্রতিরোধ শেষ পর্যন্ত ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ৩৪.১ ওভারে তাসকিনের ফুল লেংথ স্ট্যাম্প সোজা বলটিতে বাজেভাবে ক্রস ব্যাটে ফ্লিকের মতো করার চেষ্টা করেন চাকাভা। ব্যাটে তো লাগেইনি বল। উল্টো উড়ে যায় স্ট্যাম্প। ৯১ বলে ৮৪ রান করে থামেন চাকাভা।
চাকাভা ফেরার পর বাংলাদেশের মাথা-ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ান সিকান্দার ও রায়ান বার্ল। এই জুটিতেই শক্ত পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে। দুজনেই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষ পর্যন্ত সিকান্দার করেন ৫৭ রান। বার্ল করেন ৫৯ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৩ ওভারে ২৯৯/১০ (টেইলর ৩৮, মারুমানি ৮, বার্ল ৫৯, চাকাভা ৮৪, মায়ার্স ৩৪, মাধেভেরে ৪, সিকান্দার ৫৭, তিরিপানো ০, লুক জঙ্গুয়ে, মুজারাবানি ০, চাতারা ১; ১০-১-৪৮-১, সাইফউদ্দিন ৮-০-৮৭-৩, মাহমুদউল্লাহ ১০-০-৪৫-২, সাকিব ১০-০-৪৬-১, মুস্তাফিজ ৯.৩-০-৫৭-৩)।
বাংলাদেশ : ৪৮ ওভারে ৩০২/৫ (তামিম ১১২, লিটন ৩২, সাকিব ৩০, মাহমুদউল্লাহ ০, মিঠুন ৩০, সোহান ৪৫, আফিফ ২৬; মুজারবানি ৮-০-৪৩-০, চাতারা ৮-০-৫৬-০, মাধাভেরে ১০-০-৪৫-২, রায়ান ৩-০-২৫-০, তিরিপানো ৭-০-৬২-২)।
ফল : ৫ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : ৩-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।