বাংলাদেশ ও ভারতের যত টেস্ট
বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ-ভারত একই সুতোয় গাঁথা হলেও ক্রিকেট ইতিহাসটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকের ১৬ বছর পার হলেও ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলা হয়েছে মাত্র আটটি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ এখনো কোনো টেস্ট ম্যাচ জয়ের স্বাদ না পেলেও প্রাপ্তি আর ব্যর্থতার গল্পটা কিন্তু বেশ বড়। আসুন, দেখে নিই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গত আট টেস্টের চুম্বক অংশ।
১০-১৩ নভেম্বর, ২০০০ (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা)
সাদা জার্সিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের অভিষেক ম্যাচ এটি। নাইমুর রহমানের নেতৃত্বে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ৩৮০ বলে ১৪৫ ও হাবিবুল বাশারের ১১২ বলে ৭১ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪০০ রান। ভারতের পক্ষে সুনীল যোশি নিয়েছিলেন ১৪২ রানে ৫ উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সুনীল যোশির ৯২ ও অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর ৮৪ রানে ভারত সংগ্রহ করে ৪২৯ রান। বংলাদেশের পক্ষে নাইমুর রহমান নিয়েছিলেন ১৩২ রানে ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে পথ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মাত্র ৯১ রানেই গুটিয়ে যায় দুর্জয় বাহিনী। ৬৩ রানের লক্ষ্যে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।
১০-১৪ ডিসেম্বর, ২০০৪ (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা)
চার বছর পর দুই দলের সাক্ষাতে বাংলাদেশকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দেয় ভারত। টসে হেরে ইরফান পাঠানের সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে ১৮৪ রানেই শেষ হয়ে যায় হাবিবুল বাশার বাহিনীর প্রথম ইনিংস। ইরফান পাঠান ৪৫ রানে তুলে নেন ৫ উইকেট। জবাবে ব্যাট হাতে শচীন টেন্ডুলকারের অপরাজিত ২৪৮ ও জহির খানের ৭৫ রানের ওপর ভর করে ভারত সংগ্রহ করে ৫২৬ রান। পাহাড়সম রানের সামনে ব্যাট করতে নেমে মানজারুল ইসলাম রানার ৬৯ ও নাফিস ইকবালের ৫৪ রান ছাড়া আর কেউই কিছু করতে পারেননি। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেল ২০২ রানে। এবার ইরফান পাঠান নেন ৫১ রানে ৬ উইকেট। ইনিংস ও ১৪০ রানে জয় পায় ভারত।
১৭-২০ ডিসেম্বর, ২০০৪ (এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম)
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে পর্যদুস্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ঘটনা। টসে জিতে ব্যাট হাতে গৌতম গম্ভীরের ১৩৯ ও রাহুল দ্রবিড়ের ১৬০ রানকে পুঁজি করে ৫৪০ রানের পাহাড় দাঁড় করায় ভারত। ১৫৬ রানে ৪ উইকেট নেন রফিক। জবাবে ব্যাট হাতে ভালো জবাব দেয় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আশরাফুলের অপরাজিত ১৫৮ রানের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ করে ৩৩৩ রান। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দৈন্য আবার ফুটে ওঠে। ইরফান পাঠানের তোপে ১২৪ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন ইরফান। ভারত জয় পায় ইনিংস ও ৮৩ রানে।
১৮-২২ মে, ২০০৭ (বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম)
টসে জিতে ব্যাট হাতে মাঠে নামে ভারত। শচীন টেন্ডুলকারের ১০১ ও সৌরভ গাঙ্গুলীর ১০০ রানের ওপর ভর করে ভারত সংগ্রহ করে ৩৮৭ রান। মাশরাফি ৮৭ রানে তুলে নেন ৪ উইকেট। জবাবে মাশরাফির ৭৯ ও রাজিন সালেহর ৪১ রানকে পুঁজি করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৩৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১০০ রানেই ইনিংস ঘোষণা করেন ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। ২৫০ রানের টার্গেটে ব্যাট হাতে ২ উইকেটে ১০৪ রান করে পঞ্চম দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। ড্র হয় ম্যাচটি।
২৫-২৭ মে, ২০০৭ (শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা)
দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে ৩ উইকেটে ৬১০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। দিনেশ কার্তিক ১২৯, ওয়াসিম জাফর ১৩৮, রাহুল দ্রাবিড় ১২৯ ও শচীন টেন্ডুলকার অপরাজিত থাকেন ১২২ রানে। জবাবে ব্যাট হাতে ১১৮ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৩৪ রানে ৫ উইকেট নেন জহির খান। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আশরাফুলের ৬৭ আর মাশরাফির ৭০ রানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২৫৩ রানে। ইনিংস ও ২৩৯ রানের জয় পায় ভারত।
১৭-২১ জানুয়ারি, ২০১০ (জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম)
শচীন টেন্ডুলকারের অপরাজিত ১০৫ রানের ওপর ভর করে ভারতের সংগ্রহ ২৪৩ রান। সাহাদাত হোসেন ৭১ আর সাকিব আল হাসান ৬২ রানে পাঁচটি করে উইকেট তুলে নেন। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে করে ২৪২ রান। জবাবে গৌতম গম্ভীরের সেঞ্চুরিতে ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে করে ৪১৩ রান। ৪১৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের ১০১ ও তামিম ইকবালের ৫২ রানের ওপর ভর করে ড্রয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি সাকিব বাহিনী। ৩০১ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। অমিত মিশ্র ৯২ রানে পান ৪ উইকেট। ১১৩ রানে জয় নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ে ভারত।
২৪-২৭ জানুয়ারি, ২০১০ (শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা)
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৯৬ রানের পর বাংলাদেশের মোট রান হয় ২৩৩। ব্যাট হাতে রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরিতে ভারত করে ৫৪৪ রান। জবাবে তামিম ইকবালের ১৫১ রানে ভর করে ৩১২ রানে শেষ হয় টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংস। ৮৭ রানে ৭ উইকেট নেন জহির খান। ২ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সহজ জয় পায় ভারত।
১০-১৪ জুন, ২০১৫ (খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, ফতুল্লা)
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ এটি। টসে জিতে ভারতের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। মুরালি বিজয় ও শিখর ধাওয়ানের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৮৩ রান। মুরালি বিজয় ১৫২ ও শেখর ধাওয়ান করেন ১৭৩ রান। এ ছাড়া আজিঙ্কা রাহানে করেন ৯৮ রান। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ৪৬২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। ৪ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। জবাবে অশ্বিন তোপে ২৫৬ রানে অলআউট বাংলাদেশ। ৮৭ রানে নিলেন ৫ উইকেট নেন অশ্বিন। বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টের পঞ্চম দিন কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৩ রান করে বাংলাদেশ। ড্র হয় ম্যাচটি।

ওয়াসিফ করিম