অভিবাসীদের পাশে বিশ্বকাপজয়ী জার্মানি
তুরস্কের সৈকতে পড়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুর মৃতদেহের ছবি দেখে বিলাপ করছে পুরো বিশ্ব। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া বিপন্ন মানুষের কষ্ট দেখে হাহাকার করছে অনেকে। বিশ্বনেতারা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারছেন না। তবে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলাররা চুপচাপ বসে নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, কসোভো, আফগানিস্তানের অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার ইউরো-২০১৬ বাছাইপর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ের প্রস্তুতির ফাঁকেই বিপন্ন অভিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জার্মানির তারকা ফুটবলাররা। নিরাপদ আশ্রয় চেয়ে যে অভিবাসীরা জার্মানিতে আসছেন, এক ভিডিওবার্তায় তাঁদের ‘শ্রদ্ধা’, ‘সাহায্য’, ‘একাত্মতা’ ও ‘ন্যায়বিচার’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার, টমাস মুলার, টনি ক্রুজরা।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানিতে এ বছর নিরাপদ আশ্রয় চেয়ে প্রায় আট লাখ মানুষ আবেদন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। গত বুধবার প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০০ জন অভিবাসী জার্মানির সীমানায় এসে পৌঁছেছে। গত বছর সব মিলিয়ে জার্মানিতে এসেছিল ৫৭ হাজার অভিবাসী। আর এ বছর এখনই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজারে। বেশির ভাগই আসছেন সিরিয়া, ইরিত্রিয়া, আফগানিস্তান, কসোভো ও সার্বিয়া থেকে।
ইউরোপে নিরাপদ আশ্রয় অবশ্য সহজে মিলছে না এসব যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষগুলোর। অনেক জায়গাতেই তাদের নতুন করে পড়তে হচ্ছে নির্যাতনের মুখে। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবি হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। তবে জার্মানি শুরু থেকেই এসব অসহায় মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, জার্মানি কিছুতেই অভিবাসীদের প্রতি ‘লজ্জাজনক ও জঘন্য’ নির্যাতন সমর্থন করবে না। জার্মান চ্যান্সেলরের এই ঘোষণার পাশাপাশি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের উদাত্ত আহ্বান অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষদের মনে আশা জাগাতেই পারে।’
জার্মানির ফুটবল দলের ম্যানেজার অলিভার বিয়েরহফ বলেছেন, ‘অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আমাদের একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করা প্রয়োজন।’ জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুজ মনে করেন অভিবাসীদের প্রতি যে নির্যাতন ও বিরূপ আচরণ করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কিছু একটা করা তাঁদের দায়িত্ব। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে জার্মানির অবশ্যই তাঁদের সাহায্য করা উচিত।’ ২০১০ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী টমাস মুলারের কণ্ঠেও ক্রুজের কথারই প্রতিধ্বনি, ‘আমাদের অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু সবার আগে আমাদের দায়িত্ব বিপন্ন মানুষগুলোকে সাহায্য করা।’
গত শুক্রবার অস্ট্রিয়ায় একটা পরিত্যক্ত লরিতে ৭১ জন অভিবাসীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মর্মাহত ইল্কায় গনডোগান। এই মিডফিল্ডারের বাবা-মা ছিলেন তুরস্কের অভিবাসী। তাই এই ঘটনা ভীষণ নাড়া দিয়েছে তাঁকে, ‘অবিশ্বাস্য আর অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কল্পনাই করতে পারছি না এতগুলো মানুষ একটা লরির মধ্যে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছে। ভীষণ বর্বরোচিত ঘটনা। আশা করি এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের বিচার করা হবে।’
আগামী বুধবার ফ্রাংকফুর্টের এক শহরতলিতে ‘ক্রিশ্চিয়ান এইড’ পরিচালিত অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করবে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানকার অভিবাসীদের নিয়ে গড়া রিফিউজি ইউনাইটেড নামের দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচও খেলবে ফ্রাংকফুর্টের একটি ফুটবল ক্লাব। জার্মানি যে অভিবাসীদের পাশেই আছে, তা বোঝাতেই এই আয়োজন।