পেলে-ম্যারাডোনার বন্ধুত্ব!
পেলে আর ডিয়েগো ম্যারাডোনার ‘শত্রুতা’র কথা কারো অজানা নয়। একে অন্যের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে প্রায়ই ফুটবলাঙ্গন সরগরম করে রাখতেন দুই ফুটবল কিংবদন্তি। তবে চমকে যাওয়ার মতো খবর, পেলে ও ম্যারাডোনা শুধু পরস্পরের প্রশংসাই করেননি, জড়িয়ে সম্ভাষণ জানিয়েছেন একে অন্যকে!
ইউরোপের ফুটবল সংস্থা উয়েফা ও সুইজারল্যান্ডের একটি ঘড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান প্যারিসে একটি ফাইভ-এ-সাইড ম্যাচের আয়োজন করেছিল বৃহস্পতিবার। ‘বন্ধুত্বের ম্যাচ’ আখ্যা পাওয়া লড়াইয়ে উপস্থিত হতে পেরে পেলে-ম্যারাডোনা দুজনই ভীষণ খুশি।
অতীতের সব তিক্ততা ভুলে পেলে-বন্দনায় মেতে ওঠা ম্যারাডোনার মন্তব্য, ‘আমি পেলেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা সবাই জানি তিনি কে আর তিনি সব সময় কী থাকবেন। আমাদের তাঁর মতো আইকনের ভীষণ প্রয়োজন।’ অন্যদিকে ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপজয়ী পেলে আর্জেন্টিনার ফুটবল-ঈশ্বরকে ‘বন্ধু’ সম্বোধন করে বলেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শান্তির বার্তা। আমার বন্ধু ম্যারাডোনাকে অজস্র ধন্যবাদ। আজ যাঁরা এই ম্যাচে অংশ নিলেন, তাঁদেরও সাধুবাদ জানাই। আসলে এটা শান্তির সময়।’
দুই মহানায়কের এমন বন্ধুত্ব ফুটবলভক্তদের বিস্মিত করবেই। একসময় দুজনের মধ্যেই ছিল প্রচণ্ড রেষারেষি। বিদ্বেষটা বেড়ে গিয়েছিল ২০০০ সালে। সে বছর বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিফা। অনলাইন জরিপের মাধ্যমে নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জিতেছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু অনলাইন ব্যবহারকারীদের বয়স কম বলে ম্যারাডোনা জিতেছেন এই যুক্তিতে আরেকটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফিফা ম্যাগাজিনের পাঠক ও একটি আন্তর্জাতিক প্যানেলের বিবেচনায় বিপুল ভোটে জয় পেয়েছিলেন পেলে।
ফিফা তখন পুরস্কারটা দুজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ম্যারাডোনা তাতে ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। রোমে এক জমকালো অনুষ্ঠানে ম্যারাডোনার হাতে আগে তুলে দেওয়া হয়েছিল পুরস্কার। পেলের নাম ঘোষণার আগে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে এসে আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বলেছিলেন, ‘আমি মানুষের ভোট পেয়েছি, আর পেলে জিতেছে দয়াদাক্ষিণ্যে।’
প্যারিসে অবশ্য সেই ‘শত্রুতা’র ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি দুজনের মধ্যে। ৩০ মিনিটের ম্যাচটিতে কিছুক্ষণের জন্য মাঠে নেমেছিলেন ম্যারাডোনা। আর মাঠের বাইরে কোচের ভূমিকায় ছিলেন পেলে। ফরাসি স্ট্রাইকার দাভিদ ত্রেজেগে, ইতালিয়ান গোলরক্ষক অ্যাঞ্জেলো পেরুজ্জি, ডাচ মিডফিল্ডার ক্ল্যারেন্স সিডর্ফের মতো সাবেক তারকারাও অংশ নিয়েছেন এই ম্যাচে।