ডর্টমুন্ডের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ইউরোপের রাজা রিয়াল মাদ্রিদ
রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপের সত্যিকারের রাজা—এই কথাটি বললে ভুল হবে না মনে হয়! আসলে ভুল হওয়ার কোনো সুযোগই যে রাখেনি স্প্যানিশ ক্লাবটি। একবার নয়, দুবার নয় কিংবা ১০বার নয়, রেকর্ড ১৫তমবার ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরা প্রমাণের মিশনে সফল রিয়াল মাদ্রিদ। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা কার্লো আনচেলত্তির দল।
লন্ডনের ওয়েম্বলিতে শনিবার (১) মে দিবাগত রাত একটায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে জার্মান ক্লাবটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ ২০২২ সালে শিরোপা জেতা দলটি গেল আসলে ফাইনালে না উঠতে পারায় আক্ষেপ জমেছিল। এবার শিরোপা উদ্ধার করে সেই আক্ষেপ মিটিয়ে ছাপিয়ে গেল নিজেদেরকেই।
ফাইনাল মহারণে জয়ের নায়ক দানি কারবাহাল ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বিরতির পর দুজনের গোলেই শিরোপা উৎসব করে স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
ধারে-ভারে রিয়াল থেকে যোজন-যোজন পিছিয়ে ডর্টমুন্ড। শেষ ১০ বছর আগে এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছিল তারা। ফলে ওয়েম্বলির ফাইনালে নিশ্চিত ফেভারিটই ছিল রিয়াল। কিন্তু প্রথমার্ধের খেলা দেখলে ভুল প্রমাণ হতেন যে কেউই। রিয়াল নয় বরং বিরতির আগ পর্যন্ত রিয়ালের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিল জার্মান ক্লাবটি।
অথচ শেষ মুহূর্তে পাশার দান পাল্টে দিয়েছেন ভিনিসিয়াস ও কারবাহাল। দুই তারকার গোলে কাঁদল ডর্টমুন্ড। ম্যাচটিতে আক্রমণে সমানে-সমান পাল্লা দিয়েও রিয়ালের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ডর্টমুন্ড। ম্যাচের ৪২ ভাগ সময় বল দখলে রেখে ১২বার আক্রমণে যায় জার্মান ক্লাবটি। যার মধ্যে চারবার অনটার্গেট শট নিয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি একটিও। অন্যদিকে ১৩ বার আক্রমণে গিয়ে দুটিতে সফল রিয়াল মাদ্রিদ।
তবে প্রথমার্ধ জুড়ে চাপে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ডর্টমুন্ডের আক্রমণে প্রথমার্ধে কোণঠাসা ছিল রিয়াল। তবে, বেশকিছু সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে না পেরে অস্বস্তিতে ছিল জার্মান ক্লাবটি। ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় প্রথম সুযোগটি পায় তারা। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে নিকলাস ফুলক্রুগের ব্যাকপাস রিসিভ করেন ডর্টমুন্ডের হুলিয়ান ব্রান্ট। এরপর বল নিয়ে ভেতরে ঢুকলেও পারেননি লক্ষ্যভেদ করতে। ব্রান্ট দূর্বল শট নিলে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।
সাত মিনিট পর আবারও ডর্টমুন্ডের সুযোগ। কিন্তু, এবারও মিস! রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়েও লিড আনতে পারেননি করিম আদেয়েমি। এরপর ২৩তম মিনিটে ফুলক্রুগের পা ছোঁয়া শট গোলবার থেকে ফিরে আসলে আবারও গোলহীন থাকে জার্মান ক্লাবটি।
বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আরেকবার আক্রমণে যায় ডর্টমুন্ড। এবার মার্সেল সাবিটজারের দূর পাল্লার শট ঠেকিয়ে রিয়ালকে রক্ষা করেন কোর্তয়া। ফলে গোলহীন থেকেই বিরতিতে যেতে হয় জার্মান ক্লাবটিকে।
বিরতি থেকে ফিরেই অবশ্য দৃশপট বদলে দেয় রিয়াল। যথারীতি ধারণ করে বিধ্বংসী চেহারা! মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই দুইবার ডর্টমুন্ডের জালে বল পাঠিয়ে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। বনে যায় রাজা।
প্রথম গোলটি আসে ৭৪তম মিনিটে। ক্লাব ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা টনি ক্রুসের কর্নার থেকে বাড়ানো বলে মাথা ছুঁইয়ে লিড এনে দেন দানি কারবাহাল।
এর ৯ মিনিট পর আবারও রিয়ালের উৎসব। এবার উৎসবের উপলক্ষ্যটা এনে দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ২০২২ সালের ফাইনালের গোলদাতা এবারও নাম তুললেন স্কোরশিটে। ৮৩ মিনিটের মাথায় জুড বেলিংহামের পাস থেকে সহজ প্লেসিং শটে স্কোরলাইন ২-০ করেন ভিনি। সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে ফেটে পড়ে রিয়াল। আর হলুদে জার্মানিরা পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ম্যাচের বাকি সময় শুধুই অপেক্ষা। নির্ধারিত সময় ও ইনজুরি সময় পেরিয়ে অবশেষে এলো উৎসবের ক্ষণ! যে উৎসব শুধুই ইউরোপের সত্যিকারের রাজাদের!