ভারত চ্যালেঞ্জের সামনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ
একটি সিরিজ, ব্যাট-বলের টুংটাং, ভক্তের প্রশংসা-নিন্দা আর শঙ্কা-সম্ভাবনার হিসাব—এই তো, না কি? ভারতের বিপক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশের চেন্নাই টেস্ট এসবের বাইরে গিয়ে নিয়ে এলো আরও অনেককিছু। নইলে বাংলাদেশকে নিয়ে রোহিত শর্মা কি আর জানান, মজা নিতে দিন। আমরা মাঠের খেলায় নজর দিচ্ছি। সেটি মাথায় রেখে চেন্নাইয়ের এম.এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল ১০টায় সফররতদের মোকাবিলায় মাঠে নামবে তারা।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক লড়াই মানে গত প্রায় এক দশকে (২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে যা পায় নতুন মাত্রা) লড়াইয়ের বাইরেও বিশেষ কিছু। কোনোটিই অবশ্য সুমিষ্ট নয়। বরং অনেক বেশি ঝাঁঝালো, তেতো, রস-কষহীন। ভক্তরা তো বটেই, যাতে অংশ নেন খোদ দলগুলোর ক্রিকেটাররা। যার সর্বশেষ সংযোজন ভারতীয় দলপতি রোহিত শর্মা।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, রোহিত হালকা উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, পারছেন না! না হলে তিনি বলতেন না, আমাদের মনযোগ বাইশ গজে। তার মানে, এই বাংলাদেশ বদলে গেছে। তাদের হালকাভাবে নেওয়ার ন্যূনতম সুযোগ নেই। তা র্যাঙ্কিংয়ে, রেকর্ডে, মুখোমুখি দ্বৈরথে যতই পিছিয়ে থাকুক লাল-সবুজের দল; তেরঙ্গাধারীরা জানেন বাংলাদেশ এখন চোখে চোখ রেখে কথা বলে।
ভারত সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ বধ করে আসে পাকিস্তানকে, পাকিস্তানেরই মাটিতে। চিরশত্রুদের যারা হারায় আধিপত্য বিস্তার করে, তাদের হালকাভাবে দেখার ভুল অন্তত ক্রিকেটীয় জ্ঞানে প্রবল ম্যাচিউর ভারত করবে না। করছেও না। তৈরি রাখছে একাধিক পিচ। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের আগে পিচ নিয়ে রহস্য রাখা তো ইঙ্গিত দেয় প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেওয়ার।
ভারতে আছেন সময়ের অন্যতম সেরা সব তারকা। কে নেই সেই দলে? এম.এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কাল যখন ভারত শুরু করবে লাল বলের যুদ্ধ, দলটির একাদশে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, জাসপ্রীত বুমরাহ, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো নাম। যারা জ্বলে উঠলে অপর পাশে থাকে গোটা দল অঙ্গার হতে বাধ্য। চেন্নাই অশ্বিনের শহর। নিজ মাটিকে তারচেয়ে ভালো কে চিনবে। গৌতম গম্ভীরের দলে বড় এক্স ফ্যাক্টর অশ্বিন। পেস তোপ দাগাতে বুমরাহ তো সময়েরই সেরা। ব্যাটিংয়ে রোহিত-কোহলির কথা না বললেও চলে। ভারতীয় স্কোয়াডের সবাইকে নিয়েই আলোচনা করা যায়, তবে নিজের দিনে বাংলাদেশও কম যায় না।
পাকিস্তান সিরিজে দুর্দান্ত কাণ্ড ঘটানোর পর বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাংলার এই দলটা বেশ পরিণত। তাই, আকাশে উড়ছে না। বাস্তবতা জানেন শান্ত-মিরাজরাও। দলটি ভারত, মাঠটি তাদের। এখানে বাংলাদেশের প্রত্যয়ের চেয়ে ভারতের সুবিধা বেশি। পা ফেলতে হবে সাবধানে। ধরে রাখতে হবে একাগ্রতা। পরিকল্পনা হতে হবে বাস্তবায়নযোগ্য।
বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত যেমন জানিয়েছিলেন, তার দলের লক্ষ্য ম্যাচ পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়া। টেস্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন পাঁচ নম্বর দিনটি। ঘটতে পারে যে কোনো কিছু। বাংলাদেশ অধিনায়কের অলক্ষ্য ইঙ্গিত স্পষ্ট, ফল বের করতে চান। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য কাজটি কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘এটি পাঁচ দিনের ম্যাচ। এই পাঁচটা দিন আমরা কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি সেটাই আসল। ম্যাচ জেতার একটা লক্ষ্য তো থাকে। সবাই চায় প্রতিটি ম্যাচ জিততে, আমরাও ব্যতিক্রম নই। জেতার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, আমরা সেসব করব। ফল নিয়ে যদি বলেন, পঞ্চম দিনে শেষ সেশনে গিয়ে আমাদের ফল নিয়ে চিন্তা। তার আগ পর্যন্ত নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী সর্বোচ্চ মনযোগ দিয়ে খেলার চেষ্টা করব।’
চেন্নাইয়ে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত পরিসংখ্যান কথা বলছে ভারতের পক্ষে। সাদা পোশাকে দুদলের মুখোমুখি ১৩ লড়াইয়ে ভারত শেষ হাসি হেসেছে ১১ বার। দুটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে এ টুকুই। কিন্তু ওই যে, আর ১০টা সিরিজের চেয়ে এটি পুরো ভিন্ন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় পক্ষ চাইবে সেরাটা দিতে। হালকাভাবে কাউকে নেওয়ার সুযোগ নেই। বোকা পরিসংখ্যানকে একপাশে রেখে নতুন শুরুতে চোখ বাংলাদেশেরও।
ভারত সিরিজে বাংলাদেশ স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী অনিক, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, তাইজুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, নাঈম হাসান ও খালেদ আহমেদ।