সোহানকে দোষ দিতে চান না সৌম্য

বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা। কিন্ত নিজেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। কালো মাটির স্পিননির্ভর পিচে ভুলে ভরা সিদ্ধান্তের খেসরত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস, ক্রিকেটের প্রচলিত এই প্রবাদ গতকালের ম্যাচে প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। তবে ম্যাচ শেষে তাকে দায় দিতে নারাজ সৌম্য সরকার।
কালো মাটির উইকেটে বাংলাদেশের দেওয়া ২১৪ রানের লক্ষ্য পূরণ করাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কঠিনই মনে হচ্ছিল। কিন্তু মিরপুরের ধীরগতির উইকেটে ক্যারিবীয় ব্যাটাররা খেলাটাকে টুক টুক করে এগিয়ে নিয়ে যায় শেষ ওভার পর্যন্ত। শেষ দুই বলে তাদের দরকার ছিল ৩ রান। বাংলাদেশের পার্ট টাইম বোলার সাইফ হাসান বোল্ড করলেন ততক্ষণে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া আকিল হোসেনকে। খেলা গড়াল শেষ বলের থ্রিলারে।
ইনিংসের শেষ বল খেলতে আসলেন খারি পিয়েরে। ম্যাচের এমন অবস্থায় অধিনায়ক শাই হোপের মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে উইকেটের অপর প্রান্তে। ইনিংসের শেষ বলটি করলেন সাইফ। পিয়েরেও বাউন্ডারি হাঁকানোর আশায় বলটি লেগ সাইডে তুলে মারলেন। হাওয়ায় ভাসানো বলটি ওপরে উঠলেও ৩০ মিটার সার্কেলও পার হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশের তিনজন ফিল্ডার আসলেন ক্যাচটি নিতে। যাদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পজিশনে ছিলেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু সোহান এগিয়ে আসছেন বলে তিনি হয়ত আর চেষ্টা করলেন না। উইকেটের পিছে থেকে দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়ে ক্যাচটি ফসকালেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক। দুই রান নিয়ে ততক্ষণে ম্যাচটি ড্র করে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যাচটি ধরতে পারলে ম্যাচটিও জিতত বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সুপার ওভারের মুখোমুখি হতে হতো না তাদের। গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। সোহান ক্যাচও ফেললেন, ম্যাচও ফেললেন আর সিরিজটাও ঝুলিয়ে রাখলেন।
এতকিছুর পরও ম্যাচ হারাতে সোহানের দোষ দিতে নারাজ সৌম্য। হারের দোষটা পরে নিজের ঘাড়েই নিয়েছেন এই ওপেনার। অবশ্য ম্যাচ হারের পেছনে যে কয়েকজনের নাম আসবে তাদের মধ্যে তিনিও একজন।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সোহানের ক্যাচ মিস করার প্রসঙ্গে সৌম্য বলেন, ‘এটা তেমন কিছু না (নুরুলের ড্রপ ক্যাচ বাংলাদেশের ম্যাচ হারানোর প্রসঙ্গে)। কারণ একটা ক্যাচই সব কিছু নির্ধারণ করে না। তবে হ্যাঁ, যদি ক্যাচটা ধরতে পারত, ওটা কঠিন ক্যাচ ছিল, আর যদি ধরত, তাহলে আমরা হয়তো জিতে যেতাম। তবে হ্যাঁ, এটা কঠিন ছিল, আর ও ভালোভাবেই চেষ্টা করেছে।’
এরপর সুপার ওভার ওভারের গল্পটা তো সবারই জানা। সেখানেও এক ক্যাচ ফেলেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহদী হাসান মিরাজ। এরপর ১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ বলের সুপার ওভারে ব্যর্থতার গল্প লেখলেন সৌম্য-সাইফ-শান্ত। এক রানে হারল বাংলাদেশ।
ম্যাচ হারার দোষটা চাইলে বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ আর ব্যাটিং কোচ সালাউদ্দিনকেও দেওয়া যায়। মন্থর গতির উইকেটে ১৪ বলে ২৭৮.৫৭ রেটে ব্যাট করে ৩৯ রান তোলা রিশাদকে সুপার ওভারের ব্যাটিংয়ে বিবেচনায় করলেন না। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন মিলাতে গিয়ে পুরো দেশকে হতাশায় ডোবালেন।
অধিনায়ক-কোচের এমন পরিকল্পনায় দেশের ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থকরাই শুধু অবাক হচ্ছেন বা হাসছেন, তা নয়। রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না পাঠানোতে খোদ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও বেশ অবাক হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন সুপার ওভারে বল করা ক্যারিবীয় অফস্পিনার আকিল হোসেন।
পদে পদে ভুল করা বাংলাদেশ যতবরাই ম্যাচটা জয়ের সুযোগ পেয়েছে, ততবারই কোন না কোনভাবে ম্যাচটি তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে তুলে দিয়ে এসেছে। ম্যাচের আগে আশার বাণী দেওয়া আর মিরপুরে সুবিধাজনক উইকেটে তৈরি করে নিজেদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া বাংলাদেশের ধারাবাহিক ব্যর্থতার গল্পটা চলমানই রয়ে গেল।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মিরপুরে সুপার ওভারে এক রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ বলে ক্যাচ মিস করে ম্যাচ মিসের গল্প তৈরি আগে গোটা খেলায় কতটা কী করেছে বাংলাদেশ, বুঝবেন স্কোরকার্ড দেখলে…
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২১৩/৭ (সাইফ ৬, সৌম্য ৪৫, হৃদয় ১২, শান্ত ১৫, মাহিদুল ১৭, নাসুম ১৪, সোহান ২৩, মিরাজ ৩২*, রিশাদ ৩৯*; আকিল ১০-১-৪১-২, চেজ ১০-২-৪৪-০, পিয়েরে ১০-০-৪৩-০, মটি ১০-০-৬৫-৩, আথানেজ ১০-৩-১৪-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫০ ওভারে ২১৩/৯ (আথানেজ ২৮, কিং ০, কার্টি ৩৫, আগুস্ত ১৭, রাদারফোর্ড ৭, মোটি ১৫, চেজ ৫, গ্রেভস ২৬, আকিল ১৬, পিয়েরে ২*,হোপ ৫৩*; নাসুম ১০-০-৩৮-২, তানভীর ১০-০-৪২-২, রিশাদ ১০-০-৪২-৩, সাইফ ২-০-৯-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-০, মুস্তাফিজ ৮-০-৪০-০)
সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১ ওভারে ১০/১ (হোপ ৭*, রাদারফোর্ড ৩, কিং ০*; মুস্তাফিজ ১-০-১০-১)
সুপার ওভারে বাংলাদেশ : ১ ওভারে ৯/১ (সৌম্য ৩, সাইফ ২*, শান্ত ০*; আকিল ১-০-৮-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার ওভারে জয়ী।