অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটারদের শ্লীলতাহানি, ভারতীয় মন্ত্রীর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়
আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের রঙিন আবহের মধ্যেই ভারতের ইন্দোরে ঘটে গেছে এক নিন্দনীয় ঘটনা। ঘুরতে বেরিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক এই আসরের মাঝপথে এমন ঘটনা ক্রীড়াজগতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এবার তার চেয়েও বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকারের এক মন্ত্রীর মন্তব্যকে ঘিরে।
গত ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোটেল থেকে বেরিয়ে কাছের একটি ক্যাফেতে যাচ্ছিলেন দুই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। পথে একটি মোটরসাইকেল তাদের অনুসরণ করে এবং হঠাৎ তাদের গায়ে অশ্লীলভাবে স্পর্শ করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর দ্রুত পুলিশে অভিযোগ জানানো হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে তারা।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু করেন এসিপি হিমানি মিশ্র। এ ঘটনায় এমআইজি থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৪ নম্বর ও ৭৮ নম্বর ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্তের নাম আকিল ওরফে নৈত্র (২৯), যিনি খাজরানা এলাকার এক পেশাদার অপরাধী।
সে সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমাদের দুই ক্রিকেটার ক্যাফেতে যাওয়ার পথে এক মোটরসাইকেল আরোহীর বাজে আচরণের শিকার হয়েছেন। দলের নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত পুলিশে যোগাযোগ করেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী প্রধান পল মার্শ বলেন, ‘ক্রিকেটাররা সেদিন বাইরে যাওয়ার আগে সিকিউরিটি ম্যানেজারের (ড্যানি সিমন্স) সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তারা মানসিকভাবে কিছুটা আঘাত পেয়েছেন, তবে এখন নিরাপদে আছেন।’
তবে পুলিশি ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে, মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী কৈলাশ বিজয়ভার্গিয়ার মন্তব্যে তৈরি হয়ছে নতুন বিতর্ক। তিনি বলেন, ‘যখনই কোনো খেলোয়াড় কোথাও যায় বা আমরাও যখন কোথাও যাই—আমরা অন্তত একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে জানাই। আমার মনে হয়, এই ঘটনাটি খেলোয়াড়দের মনে করিয়ে দেবে যে ভবিষ্যতে কোথাও যাওয়ার আগে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো উচিত।’
আরও পড়ুন: ভারতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার
এরপর তিনি খেলোয়াড়দের জনপ্রিয়তা নিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেটারদের প্রতি মানুষের প্রবল উন্মাদনা রয়েছে। এখানের ক্রিকেট ইংল্যান্ডের ফুটবলের মতোই জনপ্রিয় খেলা। আমি নিজেই দেখেছি, ফুটবলারদের জামা পর্যন্ত টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা একবার হোটেলে বসে কফি খাচ্ছিলাম, তখন অনেক তরুণ ভিড় জমায়। কেউ কেউ বিখ্যাত ফুটবলারের অটোগ্রাফ চাইছিল। এমনকি এক মেয়ে এসে তাকে চুমু দেয় এবং সেই সময় তার জামা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। তিনি ছিলেন খুব বিখ্যাত এক ফুটবলার।’
বিজয়ভার্গিয়া আরও বলেন, ‘কখনও কখনও খেলোয়াড়রা বুঝতে পারেন না যে তারা কতটা জনপ্রিয়। তাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। এই ঘটনাটি ঘটেছে, এটি সবার জন্যই শিক্ষা—আমাদের জন্যও, খেলোয়াড়দের জন্যও।’
এরপর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার বক্তব্যে অনড় থেকে বলেন, ‘এখানে নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল ঠিকই, কিন্তু খেলোয়াড়দেরও দায়িত্ব ছিল স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো। তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এখন তারা এই ঘটনার পর শিক্ষা নেবে এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবে।’
তার এই মন্তব্যের পরই ক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন ও নারী অধিকার সংগঠনগুলোতে। বিজেপির এই সংসদ সদস্যের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ যাদব বলেন, ‘এটি একটি ঘৃণ্য ও পশ্চাৎপদ মন্তব্য। ঘটনাটি রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রকাশ করছে। ভুক্তভোগীদের দোষারোপ না করে মন্ত্রীর উচিত ছিল নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে আছেন, অথচ তাঁর রাজ্যেই এমন ঘটনা ঘটছে—এটি লজ্জাজনক।
এদিকে ঘটনাটির পর ইন্দোরে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। চলমান আসরে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ৩০ অক্টোবর নাভি মুম্বাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে সাতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলেও, মধ্যপ্রদেশ মন্ত্রীর মন্তব্যে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনাটি শুধু নারী নিরাপত্তা নয়, প্রশাসনের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

স্পোর্টস ডেস্ক