মুশফিকের ১০০-তে ১০০
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলাতে ইতিহাস গড়েছেন মুশফিকুর রহিম। টেস্টের প্রথম দিনে অসাধারণ ব্যাটিং করলেন তিনি। শেষ বিকেলে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে কখন ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরবেন মুশফিক। গ্যালারি থেকে দর্শক, খেলোয়ার, টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা টিভি পর্দায় সকলের চোখ তখন তার দিকে। কিন্তু মি. ডিপেন্ডেবল সবাইকে অপেক্ষায় রাখলেন ১ রানের। আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মুশফিক তুলে নিলেন কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি। শততম টেস্টটা রাঙালেন শতরানের ইনিংস দিয়েই।
ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সকালের প্রথম সেশনেই মুশফিক ছুঁয়ে ফেললেন শতক। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে তিনি ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন, এরপর মাঠে সিজদা দিয়ে উদযাপন করলেন। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা ১১তম ক্রিকেটার হলেন মুশফিক।
দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ সাবধানী দেখা গেলো মুশফিককে। দিনের প্রথম চার বল দেখেশুনে খেলার পর পঞ্চম বলে আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়রা বেশ জোরালো আবেদন করেন এলবিডাব্লিউয়ের। কিন্তু দেখা গেল বল তার ব্যাটে লেগেছে। শেষ বলটাও ছেড়ে দিলেন। প্রথম ওভারটা হলো মেডেন।
পরের ওভারের প্রথম বলেই লিটন দাস সিঙ্গেল নিলেন। স্ট্রাইকে গিয়ে তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি।
গতকাল বুধবার (১৯ নভেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯২ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ১৮৭ বলে ৯৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক আর লিটন দাস ৮৬ বলে ৪৭ রানে।
গতকাল দিনের শেষ দিকে এসে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি নিয়ে বেশ খানিকটা দোলাচলই দেখা গেল। তবে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। শেষ ওভারে হয়ত মুশিকে অভিনন্দন জানাতেই ভিআইপি বক্স থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বিসিবি কর্তারা। দর্শকরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উল্লাসে মেতে ওঠার।
কিন্তু দিনের ৯০তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে গেলেন মুশফিকুর রহিম। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে তখন প্রয়োজন তিন রান। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে কোনো রান নিতে পারলেন না। তৃতীয় বলে পেলেন এক রান। পঞ্চম বলে হাঁকিয়েছিলেন বেশ জোরেসোরেই। কিন্তু ফিল্ডার ছিল বলের লাইনে তাই এক রান হয়নি। ফলে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে থেকেই দিন শেষ করলেন মুশফিক।
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিককে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের সকালে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুশফিককে সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আতহার আলী খান। সতীর্থদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। মাঠে ছিলেন ম্যাচ অফিসিয়াল, সাপোর্ট স্টাফরাও।
২০০৫ সালে অভিষেক টেস্টে যিনি প্রথমবার মুশফিককে জাতীয় দলের ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই হাবিবুল বাশার এবারও মুশফিককে দিলেন শততম টেস্টের জন্য বিশেষ ক্যাপ। সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও দিয়েছেন স্মারক উপহার।
বিসিবির পক্ষ থেকে সভাপতি আমিনুল ইসলাম এবং নাজমুল আবেদীন মুশফিকের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট।
মুশফিকের প্রথম ও শততম টেস্টের সতীর্থদের স্বাক্ষর করা বিশেষ জার্সি উপহার দেন বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক বাশার।
গ্যালারিতেও ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেক দর্শক মুশফিককে সম্মান জানাতে একই ডিজাইনের জার্সি পরে এসেছিলেন।

স্পোর্টস ডেস্ক