দুই যুগের ইতিহাস ফিরিয়ে ১১ দিনে অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ার
জয়ের মঞ্চটা আগের দিনই তৈরি করে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষদিনে শুধু দেখার অপেক্ষা ছিল কত সময় লড়াই করতে পারে ইংল্যান্ড। চেষ্টাটা ভালোই করেছে ইংলিশরা। কিন্তু অসম্ভবকে আর সম্ভব করতে পারেনি। ঐতিহাসিক জয়ে উদয়াপনে মেতে উঠলেন অসিরা। এ উদযাপন, ঐতিহ্যের লড়াইয়ে জয়ের উদযাপন।
আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) শেষ দিনে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল ২২৮ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট। এদিন তারা তুলতে পেরেছে ১৪৬ রান। এতে অ্যাডিলেড টেস্টে ৮২ রানের জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
টানা তিন ম্যাচ জয়ে পঞ্চমবারের মতো অ্যাশেজ ধরে রাখল অসিরা। এর মধ্যে তিনটি তারা জিতেছে, দুটি হয়েছে ড্র। ইংল্যান্ড সবশেষ অ্যাশেজ জিতেছে ঘরের মাঠে ২০১৫ সালে।
এবার তো স্রেফ ১১ দিনেই অ্যাশেজ জিতল অসিরা। পার্থে দুই দিন, ব্রিজবেনে চার দিনে জয়ের পর অ্যাডিলেইডে এসে ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম দিনে। এতে হয়েছে একটি রেকর্ডও। অ্যাশেজে যৌথভাবে দ্রুততম সিরিজ হার এটি। ২০০২-৩ অ্যাশেজেও মাত্র ১১ দিনে সিরিজ হেরেছিল ইংল্যান্ড। ২৩ বছরের পুরোনো সেই রেকর্ড আবারও ফিরল।
চলতি অ্যাশেজ যে অস্ট্রেলিয়ার ঘরে উঠছে এটি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল গতকালই। কিন্তু নাটকীয়তা শুরু হয় আজ সকালে। একে একে বিপদ ধেয়ে আসে অস্ট্রেলিয়ার দিকে।
দিনের প্রথম সেশনেই ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় স্পিনার নাথান লায়নকে। যিনি গতকাল ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপর ফলো থ্রুতে পিচের বিপজ্জনক অংশে পা পড়ায় দুবার ‘ওয়ার্নিং’ পাওয়া মিচেল স্টার্ককে শুধু রাউন্ড দা উইকেটে বোলিং করতে বাধ্য হতে হয়। চোট কাটিয়ে ফেরা প্যাট কামিন্সের বোলিংয়েও ছিল সীমাবদ্ধতা।
৬ উইকেটে হারিয়ে ২০৭ রান নিয়ে শেষদিনের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। দিনের খেলার ৪৮ মিনিট হওয়ার পর নামে বৃষ্টি। গ্যালারিতে থাকা ‘বার্মি আর্মি’ উল্লাসে স্বাগত জানায় সেই বৃষ্টিকে। তবে খুব বেশিক্ষণ বন্ধ থাকেনি খেলা।
বৃষ্টি না থামালেও অস্ট্রেলিয়াকে থামিয়ে রাখছিলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার জেমি স্মিথ আর উইল জ্যাকস। এরই মাঝে অ্যাশেজে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন স্মিথ। এরপর আর তাকে বেশি দূর যেতে দেননি স্টার্ক। কামিন্সের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ৮৩ বলে ৬০ রান করা স্মিথকে।
ইংল্যান্ডের লড়াই থামেনি এরপরও। জ্যাকসের সঙ্গে এবার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ব্রাইডন কার্স। চোটের কারণে লায়ন ছিটকে পড়ায় ট্রাভিস হেড, মার্নাস লাবুশেনের মতো অনিয়মিত বোলারদের আক্রমণে আনতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। হেড বোলিং করেন ১৫ ওভার।
এই জুটিও পেরিয়ে যায় ফিফটি। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান নেমে আসে একশর নিচে। অভাবনীয় কিছু ইংল্যান্ড করে ফেলবে কি না, সেই আলোচনা টুকটাক শুরু হয়ে যায় ধারাভাষ্যকক্ষে।
সেই আলোচনার সমাপ্তি টানেন স্টার্ক আর লাবুশেন জুটি। স্টার্কের গতিময় বল জ্যাকসের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পেছনে। কিপার অ্যালেক্স ক্যারি ডাইভ দিয়ে বল গ্লাভসে জমানোর পথেই ছিলেন। কিন্তু স্লিপ থেকে বাঁদিকে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বাঁ হাতে বল জমিয়ে ফেলেন লাবুশেন।
প্রথম ইনিংসেও বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বল মাটি ছোঁয়ার ঠিক আগে চোখ ধাঁধানো ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবারের ক্যাচে ছাড়িয়ে গেলেন বুঝি নিজেকেও। ব্যাটসম্যান জ্যাকস যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। ১৭৭ মিনিট লড়াই করে তার ইনিংস থামে ৪৭ রানে।
এরপর উইকেটে আসা জোফরা আর্চারকে দ্রুতই ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। জস টংকে ফিরিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন স্কট বোল্যান্ড। এবারও বল যায় সেই লাবুশেনের হাতেই।

স্পোর্টস ডেস্ক