জার্মানির উড়ন্ত ট্যাক্সি নির্মাতাদের হালচাল

উড়ন্ত ট্যাক্সির কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে, জার্মানির ভোলোকপ্টার এবং লিলিয়াম কোম্পানি অনেক আশা দেখিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, কোম্পানি দুটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।
শহরে ব্যবহারের জন্য, জার্মানির ভোলোকপ্টার কোম্পানি উড়ন্ত ট্যাক্সি তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। আর লিলিয়াম কোম্পানির পরিকল্পনা ছিল, অল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্য মিনি-জেট তৈরি। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই, তারা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনা ছিল আকাশছোঁয়া, কিন্তু সেই তুলনায় খুব কম পথই তারা পাড়ি দিতে পেরেছে। বলা যায়, টেক-অফের আগেই ক্র্যাশ-ল্যান্ডিং করেছে তারা। লিলিয়ামের হ্যাঙ্গারে, যেখানে আগে সাংবাদিকদের যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে আমরা লিলিয়াম জেটের একটি অর্ধেক কাজ হওয়া প্রোটোটাইপ দেখতে পেয়েছি। লিলিয়ামের জন্য বিনিয়োগকারী খোঁজার চেষ্টা করা হলেও, এখনও সফল হওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পরেও, লিলিয়াম কখনও আকাশে জেট উড়াতে সক্ষম হয়নি। তার মানে কি সব শেষ?
বাউহাউস লুফটফার্টের ইওখেন কাইজার বলেন, ‘‘বিমান পরিবহনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক। প্রতিটি পণ্য এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তি, সম্ভবত অন্যত্র বিক্রি এবং ব্যবহার করা হবে। এটিও এক ধরণের মূল্য।’’
বিনিয়োগকারী পাওয়া গেলে, হয়তো লিলিয়ামের পরিকল্পনা টিকে যেতে পারে। তবে, ভোলোকপ্টার এখনও চালু আছে। জানুয়ারিতে প্রায় ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করা হলেও, দেড়শো জন এখনও আছেন—কপ্টারটি চালুর চেষ্টা করছেন তারা।
ভোলোকপ্টারের টেস্ট-ফ্লাইট প্রোগ্রামের ট্রেভর ক্যাম্পবেল বলেন, ‘‘আমরা কিছু দিন খারাপ সময় পার করেছি। আপনি জানেন যে, পুরনো থেকে নতুন কোম্পানিতে রূপান্তরের সময় আমরা অনেক সহকর্মী হারিয়েছি। তবে, নতুন কিছুর সূচনাও হয়েছে। তাই আমরা কিছু একটা করতে পারি, এমন আশাবাদও তৈরি হয়েছে।’’
লিলিয়াম না পেলেও, ভোলোকপ্টার বিনিয়োগকারী খুঁজে পেয়েছে। এবং সেই বিনিয়োগকারী একটি বিমান প্রস্তুতকারক। ‘ডায়মন্ড এয়ারক্রাফট' নামের বিনিয়োগকারী কোম্পানিটি চীনের ওয়ানফেং গ্রুপের অংশ। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানেন, উৎপাদন দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়।
ভোলোকপ্টারের আর্টেম ইসোখ বলেন, ‘‘অবশ্যই, সব প্রকল্প পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এখন আমরা সেই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি, যেটি অনুমোদন পাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় আছে। তবে অন্যগুলোর কথাও ভুলে যাচ্ছি না।’’
এর মানে হলো: ড্রোন প্রোগ্রাম, রিজিওনাল জেট এবং পরিষেবা প্রদানকারী হওয়ার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এখন একমাত্র অগ্রাধিকার হলো ‘ভোলোসিটি'র অনুমোদন পাওয়া। এর জন্য নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
ইসোখ জানান, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ২০২৬ সালের শেষ কিংবা ২০২৭ সালের শুরুতে ইএএসএ থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া।’’
বিনিয়োগকারীদের মন জয় করার কোনো চাপ না থাকায়, ভোলোকপ্টার এখন শিরোনামের বাইরে—তবে একটি মূল প্রশ্ন রয়ে গেছে: আসলেই কি স্বল্প-দূরত্বের উড়ন্ত ট্যাক্সির চাহিদা আছে?
কাইজার বলেন, ‘‘আমি যদি শহরের মধ্যে শুধু বিমানে ভ্রমণের চেষ্টা করি, তাহলে যানজট কমবে না—কারণ আকাশে যানবাহনের চাপ কম। এছাড়া, এজন্য আপনার অনেক অবকাঠামোর প্রয়োজন, যা এখনও শহরে নেই।’’
এই কারণেই কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রথমে ধারণাটিকে আরও ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চান। এবং এর জন্য তারা এক্স-প্রো মডেলের অতি হালকা ই-কপ্টার বেছে নিয়েছেন।
ভোলোকপ্টারের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ডেভিড বাউসেক বলেন, ‘‘এটি যারা উড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য একটি বিকল্প। দুই আসনের এই কপ্টার ৬০০ কেজি ওজন নিয়ে উড়তে পারে। আবহাওয়া ভালো থাকলে, বা খুব একটা ভালো না হলেও, একটু ওড়ার জন্য এটি আদর্শ।’’
আরেকটি ছোট তথ্য: এক্স-প্রোর দাম প্রায় তিন লাখ ইউরো।
তবে, ভোলোকপ্টারের জন্য বাজারে টিকে থাকা সহজ হবে না—বিশেষ করে, মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই লিলিয়াম এবং ভোলোকপ্টারের মতো যান তৈরিতে এগিয়ে গেছে।