‘ডিজিটাল অপরাধ-চোরাচালান রোধে ছাড় নেই’
অবৈধ মোবাইল ফোন আমদানি ও ক্লোনিং ঠেকাতে এনইআইআর চালুর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা, আর্থিক খাত ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় বহুমাত্রিক অপরাধের চিত্র তুলে ধরেছে সরকার। এসব অবৈধ ফোনের কারণে দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় যে ঝুঁকি তৈরি হয়-তা বন্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৯ নভেম্বর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমনটা জানানো হয়।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, আমরা ক্লোন করা, অবৈধভাবে আমদানিকৃত ও চোরাচালানকৃত ফোন বন্ধ করবো ইনশাআল্লাহ। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বিশেষ সহকারী বলেন, অবৈধভাবে আনা ফোনের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে—সিমের ভুল রেজিস্ট্রেশন ও ইকেওায়াইসি জালিয়াতি, জুয়ার লিংক ও এমএলএম প্রতারণার বাল্ক এসএমএস, এমএফএস রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতি, অনলাইন স্ক্যামিং, ক্লোন ফোন ব্যবহার, প্যাটেন্ট-রয়্যালটি ফাঁকি, শুল্ক ও আরকর ফাঁকি, লাগেজ পার্টি, সীমান্ত চোরাচালানসহ অসংখ্য অনিয়ম। এসব অপরাধ দেশের আর্থিক খাত, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করে।
তিনি জানায়, একটি আন্তর্জাতিক আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করে লাখ লাখ ফোন দেশে ঢোকানো হচ্ছে-যা রোধ করতেই এনইআইআর চালুর উদ্যোগে বাধা দিচ্ছে চোরাচালান চক্র। এ ধরনের কার্যক্রম ডিজিটাল অপরাধ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদন শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সরকার পরিষ্কার করেছে-অবৈধভাবে আনা বা ক্লোন করা হ্যান্ডসেটই কেবল বন্ধ হবে। তবে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে সক্রিয় থাকা সব ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈধ হিসেবে নিবন্ধিত হবে, ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীর কোনো মোবাইল ফোন বন্ধ হবে না। এ উদ্যোগ বৈধ ব্যবসায়ী ও দেশীয় উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করবে বলেও জানানো হয়।
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, বর্তমানে একটি আইএমইআই কোডের বিপরীতে লাখ লাখ ফোন বানিয়ে দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। এনইআইআর চালু হলে যা আর সম্ভব হবে না এজন্য এসইআইআর বন্ধে মাফিয়া চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। এসব লাগেজ পার্টি, ভুয়া এইচএস কোড , সীমান্ত চোরাচালানি, কেজি দরে আমদানির দিন শেষ করতে, এর সাথে জড়িত সব ধরনের ডিজিটাল অপরাধ বিস্তারে লাগাম টানা হবে। এখানে কোনো ছাড় নয়।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যে বিটিআরসিতে আলোচনা করা হয়েছে আমদানি শুল্ক কমাতে এনবিআরকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক হবে। পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদকদের মূল্য কমাতে বিটিআরসির পক্ষে অনুরোধও জানানো হয়েছে। গ্রাহকের দিক বিবেচনা করে, বৈধ মোবাইল ফোনের দাম কমাতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পাশাপাশি, বৈধ পথে বিদেশ থেকে আনা ফোনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করতে বিটিআরসি কাজ করছে। ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে যে, ১৬ ডিসেম্বরের আগে অ্যাকটিভ সবগুলো ফোন বৈধ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। ভারত বা অন্যদেশে এভাবে গণহারে বিদেশি ফোন ঢুকে না। অবৈধভাবে আমদানি করে বা চোরাই ফোন এনে হাইএন্ড ফোনের দাম কমাতে হবে, এটা মানতে রেগুলেটর হিসেবে বিটিআরসি বাধ্য নয়।
নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম ক্লোন করা হয়নি এমন ফোনে ব্যবহার করা হলে কখনই ঝামেলায় পড়তে হবে না। তাই সিম সব সময় নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে।
প্রবাসীরা বাইরে থেকে নিয়ম মেনে একটি বা দুটি ফোন ফ্রি আনবেন, নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করবেন। কোনো ঝামেলা হবে না। দুটির বেশি ফোনের ক্ষেত্রে এনবিআরের আলাদা নিয়ম রয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন, ডি-রেজিস্ট্রেশন এবং রি-রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি সমূহ কীভাবে সাধারণ নাগরিকদের জন্য সহজ করা যায়, সে বিষয়ে পাওয়া যৌক্তিক পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া হচ্ছে বলেও বিশেষ সহকারী মন্তব্য করেন।
সরকারের কঠোর অবস্থান-‘অবৈধ, ক্লোন করা ও চোরাচালানকৃত ফোন বন্ধ করা হবে; এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক