অ্যাস্ট্রাজেনেকার অস্ট্রেলিয়াগামী আড়াই লাখ টিকার চালান ‘আটকে দিল’ ইতালি
ইতালি সরকার তাদের দেশে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নভেল করোনাভাইরাসের টিকা অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানির একটি চালান আটকে দিয়েছে। এই চালানের মাধ্যমে ইতালিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত করোনার ভ্যাকসিনের আড়াই লাখ ডোজ অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন নিয়ম অনুযায়ী, টিকা সরবরাহকারী কোনো কোম্পানি যদি ইইউর বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশে টিকার রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এই নিয়মটি প্রয়োগ করল ইতালি। দেশটির এই পদক্ষেপকে ইউরোপীয় কমিশন সমর্থন জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ‘একটি চালান’ হারালে টিকাদান কর্মসূচিতে বাজে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা এ বছরের প্রথম তিন মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোকে রপ্তানি চুক্তির মাত্র ৪০ শতাংশ সরবরাহের পথে রয়েছে। সরবরাহ ঘাটতির জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে উৎপাদনজনিত সমস্যার কথা বলা হয়েছে।
ইতালির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের করোনার টিকা সরবরাহে বিলম্ব হওয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেসময় তিনি কোম্পানিদ্বয়ের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন।
করোনার টিকাদান কর্মসূচির মন্থর গতির জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ইইউ।
গত বছরের জুনে গঠিত ইইউ ভ্যাকসিন স্কিমের আওতায় ইউরোপিয়ান কমিশন ইইউ সদস্য দেশগুলোর হয়ে টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা করেছিল।
এদিকে, ইতালির টিকার রপ্তানি আটকে দেওয়ার পদক্ষেপের ঘটনায় ইইউ বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনার টিকা দিয়ে গত সপ্তাহে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। আজ থেকে দেশটির টিকা কার্যক্রমে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্ত হওয়ার কথা ছিল।
ইতালি কী বলছে?
ইতালির সরকার গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় কমিশনের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালানটি আটকে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তারা টিকা রপ্তানির অনুমোদনের জন্য আবেদন পেয়েছিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগের আবেদনটিতে তারা সাড়া দিয়েছিল। কারণ, তাতে বলা হয়েছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য নমুনাস্বরূপ অল্পকিছু টিকা পাঠানো হবে।
কিন্তু, সবশেষ আবেদনটি ছিল আড়াই লাখ ডোজের বড় চালানের। তাই, এই আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হিসেবে বিবৃতিতে বলা হয়— প্রথমত, অস্ট্রেলিয়া ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় নেই। দ্বিতীয়ত, ইইউ ও ইতালিতে টিকার স্থায়ী ঘাটতি রয়েছে। এবং তৃতীয়ত, ইতালি ও ইইউতে সামগ্রিকভাবে যে টিকা সরবরাহ করা হয়েছে তার তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানির জন্য আবেদন করা এই চালানটিতে ডোজের সংখ্যা অনেক বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, এরই মধ্যে তিন লাখ ডোজ টিকা তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এবং আগামী মাসে দেশটি নিজেরাই টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেছেন, ‘আমরা দেশেই প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ (ডোজ) টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সে অনুযায়ী, চলতি মার্চের শেষ নাগাদ আমরা উৎপাদিত টিকা সরবরাহ করা শুরু করতে পারব।’
‘(ইতালি থেকে) টিকার চালান না এলেও আগামী কয়েক সপ্তাহে আমাদের টিকা সরবরাহ পরিকল্পনায় কোনো প্রভাব পড়বে না’, যোগ করেন অসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।