চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষা ঢাল ক্ষতিগ্রস্ত, আইএইএর উদ্বেগ
ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি ড্রোন হামলায় সুরক্ষা ঢাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ১৯৮৬ সালের ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় পদার্থ আটকে রাখার ক্ষমতা এই কাঠামোর আর নেই। জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এমনই উদ্বেগ জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে আইএইএ জানায়, গত সপ্তাহে ইস্পাত নির্মিত সুরক্ষা কাঠামোটি পরিদর্শনের পর দেখা গেছে, এটি আর তার প্রধান নিরাপত্তা কাজ—বিশেষ করে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আটকে রাখার সক্ষমতা—কার্যকরভাবে পালন করতে পারছে না।
আইএইএ জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই ড্রোন হামলায় ঢালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউক্রেন এই হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন চতুর্থ বছরে গড়িয়েছে।
যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে—জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আইএইএ কর্মীদের রোটেশন বাধাগ্রস্ত করা এবং সেখানে হামলার মাধ্যমে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করা হচ্ছে।
আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, পরিদর্শন মিশনে নিশ্চিত হয়েছে যে সুরক্ষা কাঠামোটি তার প্রধান নিরাপত্তা সক্ষমতা, বিশেষ করে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে। তবে কাঠামোর ভারবহন অংশ বা মনিটরিং ব্যবস্থায় স্থায়ী ক্ষতি হয়নি।
রাফায়েল গ্রোসি আরও জানান, আংশিক মেরামত করা হলেও দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ জানায়, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে একটি উচ্চ-বিস্ফোরক ওয়ারহেড বহনকারী ড্রোন চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত হানে, এতে আগুন লাগে এবং ১৯৮৬ সালে ধ্বংস হওয়া চার নম্বর চুল্লির চারপাশের সুরক্ষা আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে সে সময় জাতিসংঘ জানায়, বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল ছিল এবং কোনো তেজস্ক্রিয় নির্গমনের খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল বিস্ফোরণে ইউরোপজুড়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সে সময় দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিপুল সংখ্যক জনবল ও সরঞ্জাম মোতায়েন করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির শেষ কার্যকর রিয়্যাক্টরটি বন্ধ করা হয় ২০০০ সালে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম দিকেই রুশ বাহিনী এক মাসেরও বেশি সময় চেরনোবিল ও আশপাশের এলাকা দখলে রাখে।
এদিকে ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশের আটটি অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় শনিবার (৬ ডিসেম্বর) টেলিগ্রামে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুমতিতেই জরুরি মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। গ্রাহকদের দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে জ্বালানি কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার ইউক্রেনের জাতীয় গ্রিড অপারেটর উক্রএনার্গো জানায়, রুশ হামলার কারণে শনিবার থেকে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে।
এই হামলাগুলোর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মায়ামিতে ইউক্রেনের প্রধান আলোচক রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এর আগে তিনি মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ অবসানে একটি ২৮ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করে, যা অনেক বিশ্লেষকের মতে রাশিয়ার দাবির প্রতি তুলনামূলকভাবে সহানুভূতিশীল। তবে ভূখণ্ড ছাড়ের দাবি ইউক্রেনের জন্য ‘রেড লাইন’, যা দেশটির সংবিধানেও নিষিদ্ধ।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক