ইতালিতে করোনায় মৃত বেড়ে প্রায় ২০০
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/03/07/italy-corona-photo.jpg)
ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৭ জনে। এর মধ্যে নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। এ ছাড়া দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে চীনের পর ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের গড় বয়স ৮১ বছর। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন।
অন্যদিকে, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭২ শতাংশই পুরুষ। এ ছাড়া মোট আক্রান্তের মধ্যে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা করোনা আক্রান্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বে সবেচেয়ে বেশি বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যায় ইতালি অন্যতম।
এরই মধ্যে ইতালির সব স্কুল ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এ ছাড়া আগামী এক মাস দেশটির জনপ্রিয় ফুটবল লিগ সিরি-আসহ সব ধরনের ফুটবল ম্যাচ এবং অন্যান্য পেশাদার খেলা দর্শকবিহীন অবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে বলেও ঘোষণা করা হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৮৮ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত এক লাখ দুই হাজার জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া চীনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০ জনে। এ ছাড়া দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৮০ হাজার ৬৫১ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এরই মধ্যে বিশ্বের ৮৫টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও চীনে মৃত্যুর হার কমছে। এমনকি নতুন সংক্রমণের সংখ্যাও কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। দেশটির ১৮টি অঙ্গরাজ্যে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবারই ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন ও ফ্লোরিডায় জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের কারণে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। বৃহস্পতিবার ফক্স চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে প্যারিস ম্যারাথন বাতিল করা হয়েছে। এই ম্যারাথনে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিলেন ৬৫ হাজার মানুষ। গ্রিসের সব স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১২৪ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৪৭ জনে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইরানের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটিতে কাগজের টাকার ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, আগামী ২০ মার্চ ফার্সি নতুন বছর নওরোজ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ৭৬৭। চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শনার্থীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার ঘোষণা দিয়েছে জাপান।
এদিকে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে এটিই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। দেশটির রয়্যাল বার্কশায়ার হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার ৭০ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট ১৬৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়াতেও করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ জন। ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশটিতে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির কৃষিখাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় কৃষি ফেডারেশন। তাদের সামুদ্রিক খাবার শিল্প সাড়ে ২৭ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়ছে বলেও জানানো হয়।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ব্রায়ান পেয়ার্স সিঙ্গাপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণে বৈশ্বিক বিমান পরিবহনে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, যা বৈশ্বিক বিমান ব্যবসার ১১ শতাংশ। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তায় পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে আইএমএফ।