ইতালিতে জি২০ জোটের মন্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
প্রায় দুই বছর পর ইতালিতে বৈঠক করেছেন গ্রুপ অব ২০-এর (জি২০) পররাষ্ট্র ও উন্নয়নমন্ত্রীরা। কোভিডের পাশাপাশি বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। কোভিডকালে কীভাবে বিশ্বের অর্থনীতির উন্নতি ঘটানো যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
দীর্ঘদিন সরাসরি বৈঠক হয়নি জি২০ দেশগুলোর। গত বছরও ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। ইতালিতে গতকাল মঙ্গলবার সমবেত হন বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উন্নয়নমন্ত্রীরা। মূলত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে খাদ্যসংকট নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, একটি বিষয়ে এখন প্রায় সব দেশই একমত—অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। কীভাবে এই পরিস্থিতির মধ্যে তা করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এদিনের বৈঠকে।
একটি বিষয়ে বৈঠকে একমত হয়েছেন জি২০ নেতারা—সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন বণ্টনে ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। কীভাবে সেটি করা যায়, তা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে একাধিক পন্থার কথা বলেছেন বৈঠকে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস জানিয়েছেন, সবাই সুস্থ হলেই কেবল এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব। এ কথা সবার বোঝা দরকার। এবং সেজন্য সবাইকে টিকা দিতে হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে সরব হন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, দুটি দেশই ভ্যাকসিন কূটনীতিকে বিতর্কিত জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হাইকো মাসের সঙ্গে একমত হয়েছেন। অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বক্তব্য, গরিব দেশগুলোতে টিকা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোকে সে কাজ করতে হবে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির পাশাপাশি আফ্রিকার অবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই ভয়াবহ সময়ে আরও বেশি করে আফ্রিকার পাশে দাঁড়ানো দরকার। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে খাদ্যসংকট শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু অঞ্চলে সহিংসতা চলছে। হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। বৈঠকে সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলোচনা হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়েও। যেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, তা নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করেছেন নেতারা। কিছুদিন আগে জি৮ সম্মেলনে বিশ্বের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন ফুটপ্রিন্ট সম্পূর্ণ বন্ধ করার চেষ্টা করা হবে। কীভাবে তা সম্ভব, তার একটি রূপরেখাও তৈরি হয়েছে। এদিনের বৈঠকে সে বিষয়টি আরও একবার আলোচনায় উঠে আসে।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্লিনকেন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে তাঁদের পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছেন। মঙ্গলবারের বৈঠকে আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল লিঙ্গভিত্তিক সমতা, মানবাধিকার এবং জাতিসংঘের মানবিক তৎপরতার মতো বিষয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন কোভাক্স কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের কথা তুলে ধরেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে কম মূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া কূটনীতিকেরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, ইসলামিক স্টেট বা আইসিসের কর্ম তৎপরতা, ইরাক ও সিরিয়ায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা, তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ক্ষমতার উন্নয়ন এখন উদ্বেগের বিষয়, যেখানে জি২০ জোট এতটা সক্রিয় নয়। তাই এখন প্রয়োজন শক্তিশালী নজরদারি ও সমন্বিত পদক্ষেপ।
জি-২০ গ্রুপ উদ্বেগের সঙ্গে জানায়, দায়েশ (আইসিস), সংশ্লিষ্ট দলগুলো এবং তাদের নেটওয়ার্ক সাব সাহারা আফ্রিকায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করছে। এবং গোষ্ঠীটি সাহেল অঞ্চল, পূর্ব আফ্রিকা ও মোজাম্বিকেও সক্রিয়। জোটের দেশগুলো জানায়, আইসিসের বিরুদ্ধে লড়তে যারা তাদের সাহায্য চাইবে, তেমন যেকোনো দেশকে তারা সহযোগিতা করবে।