জার্মানি জুড়ে পরিবহণ ধর্মঘট
শ্রমিক সংগঠনের ডাকে বিশাল ধর্মঘটে গোটা জার্মানি প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে ৷ মূল্যস্ফীতির মুখে বেতন ও মজুরি বাড়াতে এভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ সোমবার (২৭ মার্চ) জার্মানিতে ট্রাম-বাস, ট্রেন ও বিমান চলছে না।
এর আগে রোববার মাঝরাত থেকে সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত জার্মানিতে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ করে দিতে বিশাল ‘সতর্কতামূলক’ ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিষেবা ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন ভ্যার্ডি এবং রেল ও পরিবহণ ক্ষেত্রের শ্রমিক সংগঠন ইভিজি।
ভ্যার্ডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ এবং ইভিজির প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার৷ ভ্যার্ডি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি চাইছে, ইভিজি চাইছে ১২ শতাংশ৷ সোমবার মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ভ্যার্ডির মতে, প্রথমে করোনা মহামারি, তারপর ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিক-কর্মীদের দূরাবস্থা অন্তত কিছুটা হলেও লাঘব করতে এই দাবি ন্যায্য।
সাম্প্রতিক সময়ে গোটা জার্মানিতে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঞ্চল ও ক্ষেত্রে ধর্মঘটের মাধ্যমে কর্মদাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো৷ ভ্যার্ডির প্রধান ফ্রাংক ভ্যার্নেকে বলেন, এটা হাজার হাজার কর্মীর বেঁচে থাকার প্রশ্ন।
অন্যদিকে, সরকার ও পৌর স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক সংগঠনের এই দাবিকে অবাস্তব বলে বর্ণনা করছে৷ তাদের মতে, সরকারি কোষাগারে এমন অস্বাভাবিক বেতনবৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই৷ বিশেষ করে পরিবহণ ক্ষেত্রে বেতন বেশি বাড়ালে ভাড়া ও বাড়তি কর চাপিয়ে সেই অর্থ সংগ্রহ করতে হবে৷ জার্মানির রেল সংস্থা ‘ডয়চে বান’ এই ধর্মঘটকে ‘সম্পূর্ণ মাত্রাহীন, ভিত্তিহীন ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জ্বালানির দাম হু হু করে বেড়ে গেছে৷ ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর মূল্য থেকে শুরু করে বাসাভাড়া এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গেছে৷ জ্বালানি সংকট দেখা না দিলেও মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরো এলাকার তুলনায় জার্মানির মূল্যস্ফীতির হার বেশি থেকেছে৷ ফেব্রুয়ারি মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম গত বছরের তুলনায় নয় দশমিক তিন শতাংশ বেশি ছিল।
সোমবারের ধর্মঘটের ফলে নিত্যযাত্রীসহ সাধারণ মানুষ ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়ছেন৷ বিশেষ করে বাসায় থেকে ‘হোম অফিস’ করার সুবিধা যাদের নেই, তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে৷ জার্মানির হাইওয়ে পরিচালন সংস্থার কর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় অনেক হাইওয়েতে অবরোধের আশঙ্কা রয়েছে৷ মানুষের দুর্দশার কথা মেনে নিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও কর্মীদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে এ ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন ভ্যার্ডির প্রধান ভ্যার্নিকে৷ পণ্যের পরিবহণে বিঘ্ন এড়াতে জার্মানির পরিবহণমন্ত্রী ফল্কার ভিসিং রোববার ট্রাক চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।