ট্রাম্পকে মধ্যাঙ্গুলি দেখানো সেই নারী কাউন্টি নির্বাচনে জয়ী
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/06/trump-woman.jpg)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়িবহরকে মধ্যাঙ্গুলি দেখানোর জেরে ২০১৭ সালে চাকরিচ্যুত হন ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের জুলি ব্রিস্কম্যান। এবার ভার্জিনিয়ার একটি কাউন্টি কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জয় পেয়েছেন ওই নারী।
লাউডান কাউন্টি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভোট গণনার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডেমোক্রেটিক দলীয় জুলি ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী সুজান ভোলপের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
জুলির নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো নিশ্চিত করা ছিল অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়িবহরকে সাইকেল আরোহী এক নারীর ‘মধ্যমা’ আঙুল দেখানোর একটি ছবি ২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়। সে ছবির জেরে চাকরিচ্যুত হন জুলি ব্রিস্কম্যান নামের ওই নারী।
সেই জুলি এর পর নামেন রাজনীতির ময়দানে। ওই ঘটনার দুই বছর পর গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়া মার্কিন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্টি সুপারভাইজার পদপ্রার্থী ছিলেন জুলি। বলা বাহুল্য, ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক দলের টিকেট নিয়ে নির্বাচনে লড়েন তিনি।
বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া সেই ঘটনাটি জুলি ঘটান ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর। সেদিন হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে জাতীয় গলফ ক্লাবের পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়িবহর। ওই রাস্তা ধরেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সী জুলি। রিপাবলিকান ট্রাম্পের গাড়িবহর দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গেল ডেমোক্র্যাট সমর্থক জুলির। বাঁ হাত উঁচিয়ে ‘মধ্যাঙ্গুলি’ দেখিয়ে দিলেন অপছন্দের মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। জুলি যখন প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরের দিকে আঙুল তুললেন, তখন বহরের মধ্যে থাকা এএফপির হোয়াইট হাউস ফটোগ্রাফার ব্রেন্ডন স্মিয়ালোস্কি ক্যামেরা বের করে ছবি তুলছিলেন। ব্যস! ক্যামেরাবন্দি হয়ে গেল সাইকেল আরোহী জুলির ‘মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন’। ছবিটি মুহূর্তেই সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল।
রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রে জুলির আচরণের প্রতিক্রিয়াও হলো দ্বিধাবিভক্ত। একপক্ষ জুলির ‘অঙ্গুলি প্রদর্শনকে’ দেখে প্রতিবাদ হিসেবে। আরেক পক্ষ জুলির আচরণের ব্যাপক সমালোচনা করে। এমনকি এ ছবিটির জন্য জুলিকে অপমানিত হতে হয়েছে, হুমকিও পেয়েছেন বিস্তর। জুলির ওপর খড়গহস্ত হয় তাঁর কর্মস্থল কর্তৃপক্ষও। ছবির বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি জুলির কর্মস্থল কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মাথায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘আঙুল’ দেখানোর দায়ে জুলির চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়।
তবে ছেড়ে কথা বলেননি জুলিও। অন্যায্যভাবে চাকরিচ্যুত করায় বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন জুলি।
তবে জুলি জানান, চাকরি হারানোটা তাঁর জন্য শাপে বর হয়েছে। দুই কিশোরবয়সী সন্তানকে একাই বড় করা জুলি নতুন চাকরি খুঁজে নেন। এর কিছুদিন পরই ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রস্তাব পান জুলি।
রাজনীতির মাঠে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি জুলি। বহুদিন ধরেই স্থানীয়ভাবে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা জুলির কাছে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াটা এক রকম ভবিতব্যই মনে হয়।
দুই বছর আগের ওই কাণ্ডকে ‘নিছক একটি ঘটনা’ বলেই ভাবেন জুলি। সেদিনকার কথা খুব একটা মনেও পড়ে না তাঁর। তবে পরিধেয় পোশাকে, হৃৎপিণ্ডের ঠিক ওপরে, ছোট্ট একটি সাইকেল-আকৃতির পিন লাগিয়ে রাখেন জুলি।
তবে জুলি মনে করতে না চাইলেও কেউ কেউ মাঝেমধ্যে জোর করে তাঁকে ওই ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। জুলি জানালেন, এখনো অজ্ঞাতনামা ‘কাপুরুষরা’ তাঁকে হুমকি দিয়ে ফোনে খুদেবার্তা পাঠায়। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ চালানোর সময় ভোট চাইতে অ্যাপের সহায়তা নেন জুলি।