ভ্যাকসিন দৌড়ে এগিয়ে থাকতে যা করল চীনা ওষুধ কোম্পানি
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/07/18/1.jpg)
সবার আগে কে নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন বের করতে পারে, তা নিয়ে যেন অলিখিত এক প্রতিযোগিতা চলেছে সারা বিশ্বে। কেউ অবশ্য সরাসরি বিষয়টি স্বীকার করছে না। তবে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা যে আছে, তা-ই যেন বোঝা গেল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের কর্মকাণ্ডে।
করোনার ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে অনেক দেশের মতো চীনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সিনোফার্মের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরীক্ষামূলকভাবে যে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করেছে, তা সংস্থাটির সাধারণ কর্মী থেকে পদস্থ কর্মকর্তা সবার দেহেই প্রয়োগ করে দেখেছে। সাধারণ মানুষের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সরকারি অনুমোদন আসার আগেই সিনোফার্ম নিজেদের কর্মীদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে। সংস্থাটি অনলাইনে এ নিয়ে পোস্ট করেছে, যুদ্ধজয়ের তলোয়ারকে শক্তিশালী করতে কর্মীরা সবাই এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সংস্থাটির এমন আচরণকে বীরোচিত আত্মত্যাগ নাকি আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি ভঙ্গের উদাহরণ হিসেবে দেখা হবে। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এসব তথ্য জানিয়েছে।
করোনার ভ্যাকসিন বানানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর সঙ্গে অঘোষিত এক চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগোচ্ছে চীন। এ লড়াই জিততে পারলে একদিকে যেমন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চীনের সাফল্য ঘোষিত হবে, তেমনই রাজনৈতিক জয় হিসেবেও বিষয়টি চিহ্নিত হবে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/07/18/2.jpeg)
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ লরেন্স গোস্টিন মনে করছেন, ‘এখন যা অবস্থা, কোভিন-১৯-এর প্রতিষেধক হলো একেবারে অমৃতের মতো বস্তু। কে আগে হাতে পাবে, তা নিয়ে না চাইলেও একটা লড়াই চলছেই। ব্যাপারটি অনেকটা কে আগে চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারে, তা নিয়ে রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইয়ের মতো।’ আর করোনার ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে লড়াইয়ের অন্যতম প্রতিপক্ষ চীন। সারা বিশ্বে প্রায় দুই ডজন সম্ভাব্য করোনা প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা চলছে। এর মধ্যে আটটি প্রতিষেধকই চীনের। এত বেশি সংখ্যক সম্ভাব্য প্রতিষেধক নিয়ে আর কোনো দেশ কাজ করছে না। নিজেদের কর্মী-কর্মকর্তাদের দেহে প্রতিষেধক পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে সিনোফার্ম সম্ভবত বার্তা দিতে চেয়েছে যে তারা গবেষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে, এবার ভ্যাকসিন হাতে পাওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
জানা গেছে, সিনোফার্মের দাবি, সরকারি সম্মতি মেলার আগেই ভ্যাকসিন নিজের দেহে পরীক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছায় ইনজেকশন নিতে রাজি হয়েছেন অন্তত ৩০ জন ‘বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক’। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে নীতিগত প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা। তবে সিনোফার্মের পোস্টে ‘আত্মত্যাগের চেতনা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টে বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও কমিউনিস্ট পার্টির এক কর্মকর্তাসহ স্যুট-টাই পরা সাতজনকে দেখানো হয়েছে। ছবির পটভূমি সামরিক প্রপাগান্ডার।
করোনার সংক্রমণ রোধে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনের খোঁজে রয়েছেন। ভারত করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। অন্তত ৫০ জনের ওপর ভারতের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে বলে জানা গেছে।
ভারতে তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের কাজ করছে ভারত বায়োটেক।
এ ছাড়া সারা বিশ্বে করোনা মহামারি ঠেকাতে ১৪০টির বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এরই মধ্যে বেশ কিছু ভ্যাকসিন দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। ভারতের জাইডাস ক্যাডিলা তাদের ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছে জাইকোভ-ডি। তাদের ভ্যাকসিনও হিউম্যান ট্রায়াল শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কইনসিনো, এস্ট্রা জেনেকা, মডার্নার মতো বেশ কয়েকটি সংস্থার ভ্যাকসিন ট্রায়ালের দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে। জনসন অ্যান্ড জনসন আগামী সেপ্টেম্বর থেকে হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করবে। তারা জানিয়েছে, হিউম্যান ট্রায়ালের শেষ পর্বে সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হবে। আগামী সপ্তাহে তাদের প্রথম পর্বের ট্রায়াল হবে। তারা এক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিন দেবে।
এদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল সফল হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ব্রাজিলেও হিউম্যান ট্রায়ালে সফল হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ট্রায়ালে যাদের ওপর ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।