মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াদের কাছে যিনি একাধারে ‘জেমস বন্ড, এরউইন রোমেল ও লেডি গাগা’
ইদানীং ইরানে টিভি খুললেই যে জেনারেলের নাম কোনো না কোনোভাবে শোনা যেত, তিনি হচ্ছেন সরদার কাসেম সোলেইমানি। ছিলেন ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ডসের অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যা চলছে, তাকে এক প্রকার ঠাণ্ডাযুদ্ধ বলা যায়। এই যুদ্ধে ইরানের সেনাপতির দায়িত্বেই ছিলেন কাসেম সোলেইমানি। ইরানিদের কাছে তিনি পুরোদস্তুর একজন হিরো।
আজ শুক্রবার সকালে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে রকেট হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
২০১৭ সালে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী টাইম-এর ক্ষমতাধর ১০০ জনের তালিকায় স্থান পান সোলেইমানি। এ ছাড়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বনেদি জার্নাল ‘ফরেন পলেসি’ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যে তালিকা করে, তাতে সমর খাতে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে প্রথম স্থানে রাখা হয়।
‘পার্সিয়ান জেনারেল’ খ্যাতি পাওয়া সোলেইমানি সম্পর্কে সিআইএর সাবেক বিশ্লেষক কেনেথ এম পোলক আগে বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে একই সঙ্গে তিনি জেমস বন্ড, এরউইন রোমেল ও লেডি গাগা।’
ইরানিদের কাছে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে তাঁকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার কোনো কমতি ছিল না। তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মিত হয়, এমনকি দেশাত্মবোধক একটি গানের মিউজিক ভিডিওতেও তাঁর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
২০০৮ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের উদ্দেশে এক চিঠিতে স্পষ্ট করে সোলেইমানি লেখেন, ‘আপনার জানা থাকা দরকার, আমি কাসেম সোলেইমানি, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, গাজা ও আফগানিস্তানে ইরানের নীতিনির্ধারক হিসেবে কাজ করি।’
সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর থেকে ইরাকের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শিয়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে, ইরাকের রাজনীতির নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়তে থাকেন সোলেইমানি।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদকে রক্ষায় নিজেদের সেনাবাহিনী এবং লেবাননের শিয়াদের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহকে পাঠিয়ে সমানতালে ব্যবহার করেন। সিরিয়া ও ইরাকে ২০১৪ সালে কথিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সেখানে কুর্দিশদের সরাসরি অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন। সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে সদা সচেষ্ট ছিলেন কাসেম সোলেইমানি।
অন্যদিকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ঘাঁটাতে ইয়েমেনের হুতি শিয়াদেরও মদদ দিয়ে সেখানে মরণঘাতী যুদ্ধ বাঁধানোয়ও এই জেনারেলের ভূমিকা রয়েছে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন হামলায় ২৫ হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় আজ শুক্রবার সকালে ট্রাম্পের নির্দেশে রকেট হামলা করে ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ডসের অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিসহ অন্তত আটজনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।