মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানকে ‘মন্ত্রিসভায় রদবদল’ বলছে সিনহুয়া
গতকাল সোমবার মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া সামরিক অভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে আটকের ঘটনাকে ‘মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল’ বলে উল্লেখ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া। গণমাধ্যমটি সামরিক অভ্যুত্থান শব্দটিকে এড়িয়ে গেছে।
সিনহুয়া গতকাল মিয়ানমারে নির্বাচিত মন্ত্রীদের সরিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে ‘মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল’ বলে উল্লেখ করে। একই সঙ্গে বেইজিং মিয়ানমারের সব পক্ষকে ‘নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে’ নিতে আহ্বান জানায়।
গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পায়। নির্বাচনে সু চির দল ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৯৬টি আসন পায়। আর পার্লামেন্টের ৪৭৬টি আসনের মধ্যে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পায় মাত্র ৩৩টি আসন। এই নির্বাচনের ফল ঘিরে সংকট ঘনীভূত হয়। সেনাবাহিনী ও ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলে।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ নাকচ করে।
গতকাল মিয়ানমারের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তার আগে তারা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও তার দলের শীর্ষ নেতাদের আটক করে।
এর পরেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সু চির সরকার উৎখাত করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সব ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পরে সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করে।
তবে এরই মধ্যে মিয়ানমারে রাজনীতিকদের আটক ও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। এ ছাড়া জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং বিবিসি বার্মিজ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সু চি সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন ১১ জন মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রীদের বেশির ভাগই জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। কয়েকজন রয়েছেন সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপির সদস্য। ইউএসপিডির অন্যতম নেতা উনা মং লউনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি গত নভেম্বরের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন এমডব্লিউডিতে নতুন এসব নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এক বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসন বলেছে, ‘গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ফলাফল মুছে দিয়ে সামরিক বাহিনী যেন জনগণের অভিপ্রায়কে ভূলুণ্ঠিতের চেষ্টা না করে।’