যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মতো এক করোনাভাইরাস রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ওয়াশিংটনে ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সময় শনিবার জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
ওয়াশিংটনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. জেফরি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড জানান, ওই ব্যক্তি আক্রান্ত অন্য ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন—এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সম্প্রতি কোথাও তিনি ভ্রমণ করেছেন কি না, এমন প্রমাণও মেলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে করোনাভাইরাসে এটি প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এর আগে চীনের উহান শহরে ৬০ বছর বয়সী আরো এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ জন জাপানের প্রমোদতরী থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন, উহান থেকে আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন, আর যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ জন।
এদিকে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৭০ জনে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ রোববার আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৮০ হাজার জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৩ জন। চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস আধানম। করোনাভাইরাসের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা উচ্চ থেকে উচ্চতর সতর্কতা জারি করেছে। গত কয়েক দিনে দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।
টেড্রস আধানম বলেন, ‘গত কয়েক দিনে বাড়তে থাকা সংক্রমণের হার অবশ্যই চিন্তার বিষয়। আমাদের বিশেষজ্ঞরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রও বাড়িয়েছি আমরা।’
জাতিসংঘের জরুরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ড. মাইক রায়ান বলেন, ‘যেকোনো দেশের সরকারের জন্য এটি একটি পরীক্ষামূলক সময়। কীভাবে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।’
এরই মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৫০টিরও বেশি দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। এমনকি বর্তমানে একদিনে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকেও পেছনে ফেলেছে দেশটি। সেখানে একদিনেই নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১৩ জন। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।
এদিকে আইসল্যান্ড, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, বেলারুশে শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো আক্রান্ত অবস্থায় এক ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ছিলেন জাপানের প্রমোদতরীর যাত্রী। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খবরটি নিশ্চিত করা হয়।
এ ছাড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ছে ইতালিতেও। সেখানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২৮ জনে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় অনলাইনে স্কুলের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে নাজুক অবস্থার শিকার ইরানের বাসিন্দারা। সেখানে ভাইরাসটি দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু রাজনীতিসহ নানা টানাপোড়েনের কারণে তা মোকাবিলা নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। এ ভাইরাসে ইরানে সরকারঘোষিত সংখ্যার চেয়ে মৃতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে দাবি করছে স্থানীয় গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংগঠন।