যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে গুলি, কিশোর আটক

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের কেনোশা শহরে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে দুজন নিহত এবং একজন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাত ৮টায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোড়া ওই কিশোরের নাম কাইল রিটেনহোস। পুলিশ তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে তাকে আটক করে। ঘটনার ভিডিও দেখে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেনোশা পুলিশপ্রধান ড্যানিয়েল মিসকিনিস। কিশোর কাইল রিটেনহোসের বাড়ি পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য ইলিনয়েসের এন্টিয়াকে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উইসকনসিনজুড়ে ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপস মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এফবিআইসহ আইনপ্রয়োগকারী অন্য সংস্থাগুলোকেও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে বলেছেন। কেনোসা শহরে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যার জন্য আন্দোলন, সেই ২৯ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জ্যাকব ব্লেককে গুলি করা পুলিশ সদস্যের নাম রাসতেন সেসকি বলে জানিয়েছেন উইসকনসিনের এটর্নি জেনারেল।
আফ্রিকান-আমেরিকান জ্যাকব ব্লেককে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে আবার জোরদার আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। গত ২৩ আগস্ট জ্যাকব ব্লেককে তাঁর সন্তানদের সামনে গুলি করে কেনোশা শহরের পুলিশ। জ্যাকব ব্লেক প্রাণে বেঁচে গেলেও, তাঁকে একরকম পঙ্গুই করে দিয়েছে পুলিশের গুলি। কেনোশা শহরের ওই ঘটনার ভিডিও গত রোববার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মারফত ছড়িয়ে পড়ার পরই বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে কেনোশা শহরে। শহরের রাস্তায় নেমে গত সোমবার একাধিক গাড়িতে আগুন দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। সেইসঙ্গে ভাঙচুর-তাণ্ডবও চলে। দাঙ্গা পুলিশ নামিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে, গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছিল প্রশাসন। তাতে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী এই বিক্ষোভ সাময়িক প্রশমিত হলেও, জ্যাকব ব্লেকের চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার খবর সামনে আসায় তা আবার চরম আকার নেয় গতকাল বুধবার। মার্কিন পুলিশের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন, অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে একাট্টা হয়ে মানুষ গতকাল বুধবার রাস্তায় নামলে, পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় সতর্ক থাকে উইসকনসিন প্রশাসন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে কেনোশা শহরের একটি গ্যাস স্টেশনের সশস্ত্ররক্ষীদের সঙ্গে প্রতিবাদীরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেসময় ওই সশস্ত্ররক্ষীরা গুলি চালালে, ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দুই প্রতিবাদী। গুরুতর আহত হন আরো একজন।
অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনার জেরে বিক্ষোভের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় গতকাল বুধবার উইসকনসিনের গভর্নর জরুরি অবস্থা জারি করেন। জানা গেছে, তিন দিন ধরেই লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। গত বুধবার গ্যাস স্টেশনে সশস্ত্ররক্ষী গুলি চালানোয় তা আরো চরম আকার ধারণ করে।
কেনোশা পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জোসেফ নোসালিক জানান, বুধবার রাত পৌনে ১২টা (মার্কিন সময়) নাগাদ সশস্ত্ররক্ষীরা গুলি চালায়। গুলিতে গুরুতর আহত তৃতীয় ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও তিনি বিপদমুক্ত বলে সংবাদ সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে। আহত ওই ব্যক্তি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদিন গুলিতে যে বিক্ষোভকারীরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের নাম এখনো জানা যায়নি। যে সশস্ত্ররক্ষীরা গুলি চালিয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নামও ঘোষণা করা হয়নি।
মার্কিন পুলিশের গুলিতে আহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লেক আর আগের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবেন না। মার্কিন পুলিশের গুলিতে তিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন। অস্ত্রোপচারের পরও আশার আলো দেখাতে পারেননি চিকিত্সকরা। গত মঙ্গলবার এ দুঃসংবাদ দেন ব্লেকের আইনজীবী বেন ক্রাম্প।
উইসকনসিনের কেনোশা শহরে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লেককে গত রোববার অকারণে গুলি করে পুলিশ। রাস্তার ধারে পার্ক করে রাখা তাঁর গাড়ির মধ্যে তিন সন্তানকে রেখে, কোনো একটা প্রয়োজনে গিয়েছিলেন জ্যাকব ব্লেক। ফিরে এসে গাড়ির দরজা খুলে চালকের আসনে বসার সময়, পুলিশ পেছন থেকে জ্যাকব ব্লেকের ওপর গুলি চালিয়ে দেয়। সন্তানরা চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে নির্দোষ বাবাকে আহত হতে দেখে। মোবাইল ফোনে তোলা ওই ঘটনার ভিডিও ক্লিপিংস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ায়, গত সোমবার থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। কেনোশা শহরে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।
পুলিশের গুলি খাওয়ার পর ২৯ বছর বয়সী জ্যাকব ব্লেক এখন হাসপাতালে। তাঁর শরীর থেকে গুলি বের করতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। পুলিশ পেছন থেকে গুলি করায়, গুলি লাগে ব্লেকের মেরুদণ্ডে। টুকরো টুকরো হয়ে যায় মেরুদণ্ড। তাই অস্ত্রোপচারের পরও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না জ্যাকব ব্লেক।
এর আগে গত ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।