লাদেনকে ৯/১১ হামলার পথ দেখিয়েছিলেন মিসরের এক পাইলট!

ইজিপ্ট এয়ারলাইনসের এক সহকারী পাইলটের কাছ থেকে নাইন-ইলেভেন হামলার পরিকল্পনা পেয়েছিলেন ওসামা বিন লাদেন। আল-মাসরা নামের একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ‘সেপ্টেম্বর ১১ অ্যাটাকস—দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে ২০১৬ সালে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিল আল-কায়েদা।
আল-কায়েদা ওই প্রবন্ধে দাবি করেছিল, লাদেন টুইন টাওয়ারে প্লেন নিয়ে আত্মঘাতী হামলার ধারণা পেয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে ইজিপ্ট এয়ারের একটি উড়োজাহাজ ‘দুর্ঘটনা’ থেকে। বার্তা সংস্থা পিটিআই ২০১৬ সালে এ খবর জানিয়েছিল।
ইজিপ্ট এয়ারের প্লেনটি ২১৭ জন যাত্রী নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে কায়রো যাচ্ছিল। প্লেনের সহকারী পাইলট গামিল আল-বাতৌতি সুপরিকল্পিতভাবে প্লেনটি নিয়ে সোজা আটলান্টিক মহাসাগরে ডুব দেন। সলিল সমাধি হয় সব যাত্রীর। এঁদের মধ্যে আবার ১০০ জন ছিলেন মার্কিন যাত্রী। ওই ঘটনাই নাকি লাদেনকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে আত্মঘাতী হামলা চালাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে অনেক দিন ধরেই ছক কষছিলেন লাদেন। কিন্তু কীভাবে হামলা চালানো হবে, তার নীলনকশা তৈরি হয়েছিল ১৯৯৯ সালেই। আল-বাতৌতির কাজকে লাদেন ‘দুঃসাহসিক’ তকমা দিলেও একটি জায়গায় তিনি প্রশ্ন তোলেন। ঘটনাটি যখন লাদেনের কানে পৌঁছায়, লাদেন বলেন, ‘মহাসাগরে কেন, সামনের বড় কোনো ভবনে গিয়ে বিধ্বস্ত করাতে পারল না বাতৌতি?’
আল-মাসরার ওই প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছিল, বাতৌতির কী উদ্দেশ্য ছিল, তাতে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না লাদেন। তবে বাতৌতির ভয়ংকর কৌশলকে তিনি বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আর এখান থেকেই টুইন টাওয়ারে প্লেন নিয়ে আত্মঘাতী হামলার ছক কষেন লাদেন।
হামলার পরিকল্পনা নিয়ে খালিদ শেখ মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেন লাদেন।
এই খালিদ শেখ মোহাম্মদকে পরে মার্কিন সরকারের ৯/১১ কমিশনের প্রতিবেদনে ‘নাইন-ইলেভেন হামলার প্রধান কারিগর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
তবে লাদেন বলার আগে থেকেই খালিদ আরো একটি ভয়ংকর পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। ১২টি মার্কিন প্লেনকে বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ক্র্যাশ করানোই ছিল খালিদের উদ্দেশ্য। লাদেন যখন খালিদের কাছে পৌঁছান, খালিদ তাঁর পরিকল্পনাটি লাদেনকে বলেন। তখন ঠিক হয় এমন একটি ভবনে আত্মঘাতী প্লেন হামলা চালানো হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মনে ভয় ঢোকে। আর সে পরিকল্পনা থেকেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আত্মঘাতী প্লেন হামলা বা নাইন-ইলেভেনের জন্ম।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কয়েকজন কথিত উগ্র ইসলামপন্থীর অপহরণ করা দুটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়েছিল। টুইন টাওয়ারে হামলার ৫০ মিনিট না যেতেই আরেকটি উড়োজাহাজ ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সদর দপ্তরের ওপর বিধ্বস্ত হয়। আর অপহৃত চতুর্থ উড়োজাহাজটি ওয়াশিংটনের কাছে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ওই সন্ত্রাসী হামলা ছিল নজিরবিহীন। দেশটিতে হওয়া সবচেয়ে বড় ওই সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারায় প্রায় তিন হাজার মানুষ। এমন হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়েছিল সারা বিশ্ব।