যুক্তরাষ্ট্র আগে হামলা করলে থামাবে চীন, উ. কোরিয়া করলে থাকবে নিরপেক্ষ
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/08/11/photo-1502452127.jpg)
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে উত্তর কোরিয়ায় আক্রমণ করলে তাতে হস্তক্ষেপ করবে চীন। আর উত্তর কোরিয়া যদি আগে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করে তবে দেশটি নিরপেক্ষ থাকবে। আজ শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এই কথা লেখা হয়েছে।
ওই সম্পাদকীয়তে আরো লেখা হয়, ‘একই সঙ্গে চীন এই বিষয়টি পরিষ্কার করে জানাতে চায়, যদি উত্তর কোরিয়া মিসাইল ছোড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিতে পড়ার পর দেশটি প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে আসে- তবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে চীন।’
‘কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া মিলে উত্তর কোরিয়ায় শাসন পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে তা প্রতিরোধ করবে চীন। কারণ কোরিয়ান অঞ্চলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন চীনের জন্যও হুমকির কারণ।’
যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশকেই সতর্ক করেছে এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দেশটি। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত আরেকটি সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলিতে দুই দেশকেই ‘আগুন নিয়ে না খেলতে’ সতর্ক করে চীন।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া-দুই দেশকেই সতর্ক পদক্ষেপ ও সংলাপে অংশ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের হুমকি-পাল্টা হুমকি কখনো ভালো ফল বয়ে আনবে না বলেও ওই সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে।
চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত ওই লেখায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আগুন এবং ভয়’ উন্মুক্তকরণ এবং পিয়ংইয়ংয়ের হুমকি ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে’- কোনোটাই বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হুমকিকে ‘মূর্খের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়ে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব আনায় যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চরম শিক্ষা দেওয়া হবে’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ‘আমাদের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন’।
এরপরও গত ৪ ও ২৮ জুলাই দুটি আইসিবিএমের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়ার রপ্তানি বাণিজ্যের রাশ টেনে ধরা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে উত্তর কোরিয়ার ৩০০ কোটি ডলার রপ্তানির মধ্যে ১০০ কোটি কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিষেধাজ্ঞার পর সোমবার এক অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো কোরীয় উপদ্বীপের বর্তমান অবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রের হুমকি মোকাবিলায় আইসিবিএম পরীক্ষা একটি বৈধ পদক্ষেপ।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই আমরা পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক রকেটের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আনব না।’
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হলে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে’ বলেও মন্তব্য করেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সোমবারই জাতিসংঘে স্থায়ী মিশনের মাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায় উত্তর কোরিয়া। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘উন্মাদ’ ও ‘মরিয়া’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা গুয়ামে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হবে দাবি করে উত্তর কোরিয়া বলেছে, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনতে প্রচারিত খবরে দেশটির এমন অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দেশটির নেতা কিম জং উন অনুমতি দিলে গুয়ামের ৩০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে পতিত হবে হোয়াসং-১২ রকেট তথা ক্ষেপণাস্ত্র।
উত্তর কোরিয়ার এমন হুমকি-ধমকির পাল্টা জবাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উত্তরের যেকোনো ব্যবস্থার মানে হলো তাদের শাসনক্ষমতার শেষ দেখা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের বিরুদ্ধে যেকোনো যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে উত্তর কোরিয়াকে ‘সমূলে উৎপাটন’ করা হবে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে হামলার পরিকল্পনার কথা জানায় উত্তর কোরিয়া। এলাকাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি আছে। সেখানে প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ বসবাস করে।
বুধবার প্রথম বিবৃতি দেওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দ্বিতীয় বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটির সামরিক বাহিনী আগস্টের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে বোমা হামলার পরিকল্পনা সম্পন্ন করবে। এরপর সেটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের কাছে।