যুক্তরাষ্ট্র ও পরমাণু বিষয়ে উ. কোরিয়ার মানুষ কী ভাবছে?

১৯৮০ সালে উত্তর কোরিয়া প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে। এর পর ধীরে ধীরে এ কার্যক্রম বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে কিম জং উন ক্ষমতায় গেলে পরমাণু পরীক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ আরো জোরালো করেন।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কার্যক্রম বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। উত্তর কোরিয়াও নাছোড়বান্দা। তাই বারবার অবরোধ সত্ত্বেও তারা পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যেকোনো সময় বেঁধে যেতে পারে যুদ্ধও। এখন উত্তর কোরিয়া দাবি করছে, সামরিক দিক থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হতে চায়।
এ রকম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পরমাণু কার্যক্রম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মনোভাব—এসব নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষ কী ভাবছে, এ বিষয়ে প্রতিবেদন করতে সিএনএনের একদল প্রতিবেদক সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া যান।
উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলের শহর ওয়ানসেন সামুদিক মাছ, সামুদ্রিক খাবার ও পর্যটনের জন্য প্রসিদ্ধ। বর্তমান সময়ে যে কারণে এই শহরটি আলোচিত, তা হলো উত্তর কোরিয়ার পরমাণু উৎক্ষেপণ প্যাড এখানে করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার ওয়ানসেন শহরের একটি বিষয় এই প্রতিবেদকদের নজর কাড়ে। তাঁরা দেখেন, ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিছু ছেলেমেয়ে ভিডিও গেমস খেলছে। গেমের কোন বিষয়টা ভালো লাগে—প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে এক কিশোর বলে, ‘শত্রুকে হত্যা করতে ভালো লাগে।’ শত্রুটা কে জিজ্ঞাসা করলে ওই কিশোর বলে, ‘আমেরিকানরা।’
ওই কিশোর আর তার বন্ধুরা স্বপ্ন দেখে, তারা একদিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে এবং শত্রু আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। সে বলে, ‘কারণ তারা আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে এবং অনেক মানুষকে খুন করেছে।’ এর মধ্যে তার এক বন্ধু বলে ওঠে, ‘তাঁদের কবর এখনো আছে।’ এ সময় উপস্থিত আরো অনেক কিশোর-কিশোরীই একই কথা বলে ওঠে।
তখন একজন প্রতিবেদক বলেন, ‘আমি আমেরিকান, আমাকে তোমরা খুন করবে?’ তাৎক্ষণিক তারা বলে ওঠে, ‘হ্যাঁ।’ পরক্ষণেই তারা ভেবে বলে, ‘আমরা দেখব, আপনি ভালো নাকি খারাপ।’ প্রতিবেদক নিজেকে ভালো দাবি করলে তারা বলে, ‘তাহলে আপনাকে গুলি করব না।’
কিম উন টাইক নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। প্রতিবেদক জানতে চান, ওয়েনসেনে থাকতে তাঁর কেমন লাগে? উত্তরে টাইক বলেন, ‘সত্যিই এখানে থাকতে খুব ভালো লাগে। সমুদ্রের পরিষ্কার বাতাস উপভোগ করার মতো।’
সারা বিশ্বের কাছে এ শহর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য পরিচিত, এ বিষয়টি তাঁর জানা আছে কি-না জানতে চাইলে টাইক বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি জানি। এ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমরা আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র উঠতেও দেখেছি।’ আকাশের সেই ক্ষেপণাস্ত্র তাঁর কাছে কী বার্তা দিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত।’
অনেকের মতো টাইক বুঝতে পারেন না, এই ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ভীত কেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের আত্মরক্ষার একটা উপায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কেন আমাদের ওপর অবরোধ আরোপ করছে?’
এ প্রতিবেদকরা অনেক কিষান-কিষানিকেই মাঠে কাজ করতে দেখেন। তাঁদের মধ্যে এক কিষান ও কিষানি হাসিমুখে বন্ধুপূর্ণভাবে গ্রহণ করেন এই প্রতিবেদকদের। তাঁরা প্রতিবেদকদের বাড়িতে খাওয়ারও আমন্ত্রণ জানান। একপর্যায়ে কিষানি বলেন, ‘আমরা মনে করি না, আমেরিকার মানুষ খারাপ। আমরা শুধু তাদের সরকারের কার্যক্রমের নিন্দা করি।’